নিয়োগ পর্ষদের আনসার কি ত্রুটি, চিন্তায় ফেলছে সরকারি চাকরি প্রার্থীদের

849
0
Answer Key, Govt Job, Govt Job 2019

এখন বেশ কিছু সরকারি চাকরির পরীক্ষার আন্সার-কি পরে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সেই আন্সার-কিতে কোনো ভুল থাকলে তা চিহ্নিত করার জন্য। তারপর সবার সব চ্যালেঞ্জ বা অভিযোগ খুঁটিয়ে পুনর্বিবেচনা করে তৈরি হচ্ছে চূড়ান্ত আন্সার-কি। যোগ্য পরীক্ষার্থীদের প্রতি সুবিচারের জন্য অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য পদক্ষেপ। কিন্তু এর ফলে বদল হয়ে যাচ্ছে মেধা তালিকায়। কম হলেও সাধারণত কিছু ভুল ধরা পড়েই, একটি-দুটি বা ছ-সাতটি বা ১২-১৩টিও হতে পারে। ফলে আগে ঘোষিত মেধাতালিকায় যোগ হচ্ছে কিছু নাম, কোনো ক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছে আগের তালিকার কিছু।

তৈরি হচ্ছে একাধিক প্রশ্ন। একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় এত সংখ্যক প্রার্থীর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে যখন পরীক্ষার পর আন্সার-কি প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে ভুল বা ত্রুটি ধরা পড়ছে কেন, বারংবার? স্কুল সার্ভিস কমিশন বা রেল থেকে শুরু করে স্টাফ সিলেকশন কমিশন সহ যে-কোনো নিয়োগ পর্ষদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের এক্সপার্ট কমিটি বা অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে উত্তর বা উত্তরপত্র তৈরি করেন। আন্সার-কি প্রকাশ করা হয় তাঁদের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই। সেই উত্তরগুলি তো একশো শতাংশ নির্ভুল হবে এমনটাই প্রত্যাশিত। সেই প্রত্যাশায় ঘা লাগে, কারও-কারও ক্ষেত্রে অত্যন্ত শোচনীয় ভাবেও। অনেকেই ওই চাকরির অনেকটা কাছাকাছি এগিয়েছেন মনে করে এগিয়ে যান ভবিষ্যত জীবনের পরিকল্পনাতেও। সেই আশাভঙ্গ যাঁদের হয়, সবার সেই ধাক্কার মুখোমুখী হবার সক্ষমতা সমান থাকে না। কারও-কারও ক্ষেত্রে হয়তো এবারের সুযোগটাই ছিল সরকারি চাকরির পরীক্ষার শেষ সুযোগ। সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছে এই ধাক্কার আঘাত অনেক বেশি।

ক্ষীণ হলেও অন্য একটি অবিচারের সম্ভাবনাও থাকছে। ধরে নেওয়া যাক, কোনো পরীক্ষায় একটি প্রশ্নসেটের উত্তরপত্রের ১০০টি আন্সার-কি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এমন একটি বা দুটি আন্সার-কি ভুল থাকতে পারে যা কোনোক্রমে পরীক্ষার্থীরা খেয়াল না করে বা ধরতে না পেরে অভিযোগ জানালেন না। কেউ-কেউ ক্ষীণ সন্দেহ হলেও এগোন না চ্যালেঞ্জ-পিছু নির্ধারিত অর্থব্যয় করার শর্ত থাকায়। তাহলে সেই ভুল উত্তরের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ হয়ে যাবে। যা একেবারেই অনভিপ্রেত, অবিচার। পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার পরেও আন্সার-কি ভুল না ঠিক সেটা নির্ধারণ করার জন্য অভিযোগ জানাতে হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, কেন্দ্রীয় স্টাফ সিলেকশন কমিশনের কনস্টেবল (জিডি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছিল গত ২০ জুন, যেখানে পরবর্তী শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষার জন্য ৫,৩৪০৫২ জনের তালিকা প্রকাশিত হয়। এরপর আন্সার-কি নিয়ে কিছু প্রার্থীর অভিযোগ জমা পড়ে, তার ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়ন করার পর মোট ১৩টি উত্তর ভুল বলে সাব্যস্ত হয় এবং তার ভিত্তিতে মেধাতালিকায় বদল করে নতুন তালিকা প্ৰকাশ করা হয়েছে গত সপ্তাহে। যে প্রাথী এতদিন তাঁর তালিকায় নাম রয়েছে ভেবে পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, জীবনের পরিকল্পনাতেও কেউ-কেউ বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, দেখা যাবে তাঁদের কারও-কারও নাম নতুন তালিকায় আদৌ নেই পুনর্মূল্যায়নের পর। এর আগে রেলের বিজ্ঞপ্তি নং ০৩/২০১৮ অনুযায়ী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ পরীক্ষায় আন্সার-কি নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়ন করে দ্বিতীয়বার সংশোধিত আন্সার-কি প্রকাশ করা হয়েছিল। রেলের গ্রুপ-ডি পরীক্ষার কাট-অফ মার্কস, আন্সার-কি নিয়ে একাধিক চর্চা হয় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রশ্ন/উত্তরের ৬ টি ভুল ধরা হয় উচ্চ আদালতের মাধ্যমে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের দিয়ে মূল্যায়ন করিয়ে।

এখানেই ভরসা নিয়ে সংশয় দানা বাঁধে। পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁদের একটা বাড়তি দায়িত্ব থেকে যাচ্ছে আন্সার-কিগুলি মিলিয়ে দেখার, সেটা নিয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে (অভিযোগ পিছু প্রথমেই নির্দিষ্ট অর্থ ব্যয় করে) অভিযোগ জানানোর। এই পুরো প্রক্রিয়ার জন্য আবার কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। স্টাফ সিলেকশন কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, আন্সার-কি বা মূল্যায়নপত্র যখন প্রকাশ করা হয়, তখন চূড়ান্ত স্বচ্ছতা ও সাবধানতার সঙ্গেই করা হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে টাইপিং জনিত সমস্যার জন্য এরকম ত্রুটি ধরা পরে। সেটিকে শুধরে নেওয়ার জন্যেই পরীক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু করণিক পর্যায়ের জন্যই হোক বা যে-পর্যায়ের জন্যই হোক তার পরিণাম সব পরীক্ষার্থীর কাছে সমান নয়। ফলে ভরসার জায়গাটা গড়ে তুলতেই হবে, যে-কোনো মূল্যে। এখন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায়, মঙ্গলযানের যুগে মাছিমারা কেরানির বা দায়িত্বহীন আধিকারিকের স্মৃতিও মুছে যাওয়া উচিত নয় কি? পরীক্ষা নেবার আগেই নির্বিকল্প ভাবে তৈরি থাকা দরকার একশো শতাংশ নির্ভুল প্রশ্নপত্র, আন্সার-কি।

 

 

 

 

 

Answer Key, Govt Job, Govt Job 2019