মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

12660
0
debendranath-tagore picture

ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙলা যেসব উজ্জ্বল মনীষীর আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিল তাঁদের মধ্যে দেবেন্দ্রেনাথ ঠাকুর একজন অগ্রগণ্য। শিক্ষাবিস্তারে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখনীয়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের একজন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পিতা। প্রথম জীবনে জমিদারি দেখাশোনা করলেও পরবর্তী কালে সংসারজীবন বা ব্যবসায়িক ভাবনা থেকে নিজেকে নিষ্পৃহ করে তোলেন। পার্থিব বিষয় থেকে নিজেকে অনেকটাই দূরে রাখেন। মহাভারত, উপনিষদ, পাশ্চাত্য দর্শন, ভারতীয় দর্শন সহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে চর্চা শুরু করেন। সেই অধ্যয়ন ও নানাবিধ তত্ত্ব আলোচনার জন্য গড়ে তুলেছিলেন তত্ত্বরঞ্জনী সভা। যা পরে `তত্ত্ববোধিনী সভা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। দেবেন্দ্রনাথ রামমোহনের অনুসারী হয়ে ওঠেন। রামমোহন প্রবর্তিত অ্যাংলো হিন্দু কলেজে পড়তে-পড়তেই ধর্মচর্চা ও দর্শনে গভীর মনোনিবেশ করেন।

ভারতীয় সমাজে যে নতুন এক ধরনের ভাবনায় ব্রাহ্মধর্ম গড়ে উঠেছিল সেই ব্রাহ্মসমাজের প্রধান হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ব্রাহ্মসমাজের দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি উদ্যোগী হন পত্রিকা প্রকাশনে। তাঁর অর্থানুকূল্যে এবং অক্ষয় দত্তের সম্পাদনায় বের হয়েছিল তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। দীর্ঘদিন এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। ব্রাহ্মধর্ম ছিল মূর্তি পূজার বিরোধী। তাই সে সময় ব্রাহ্ম মন্দিরে পূজা-পার্বণাদির পরিবর্তে প্রচলন করেন ‘মাঘোৎসব’, ‘নববর্ষ’, ‘দীক্ষা দিন’ নামে নানা অনুষ্ঠান। ব্রাহ্মসমাজে বা ব্রাহ্মধর্মে বিশ্বাসী মানুষজন আজও মাঘোৎসব পালন করে থাকেন। উপনিষদ ও অন্যান্য ধর্মীয় ভাবনা থেকেই দেবেন্দ্রনাথ নিঃসঙ্গ সাধনা ও উপাসনার জন্য খুঁজে নিয়েছিলেন বীরভূমের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড যা ভুবনডাঙা নামে খ্যাত। সেই ভুবনডাঙাই বর্তমানে শান্তিনিকেতন। রবীন্দ্রনাথ এখানেই গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়। বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরোধী হয়েও বিধবা বিবাহে উৎসাহী ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। শিক্ষাবিস্তারে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ব্রাহ্মসমাজ তাঁকে ‘মহর্ষি’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৮১৭ সালের ১৫ মে দেবেন্দ্রনাথের জন্ম।