পোস্টম্যান, মেলগার্ড নিয়োগ পরীক্ষার প্রাথমিক পরামর্শ: ৩

850
4
Postman_1

অশোক চক্রবর্তী

২১ জুনের আলোচনা (https://jibikadishari.co.in/?p=5825)-র পর

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রতি পেপার বা বিভাগের প্রশ্নপত্র সাজানো হয় সাধারণত তিন ভাগে। কিছু প্রশ্ন হয় খুবই সোজা, কিছু প্রশ্ন তত সোজা নয় কিন্তু খুব কঠিনও নয়, কিছু প্রশ্ন কঠিন। এর প্রতি ক্ষেত্রেই মাত্রাফের আছে— খুব সোজা থেকে একটু কঠিনের দিকে, একটু কঠিন থেকে আরেকটু কঠিনের দিকে, তেমনই কঠিন থেকে একটু বেশি কঠিনের দিকে। মেধার মান যাচাইয়ের জন্য এই ব্যবস্থা। সেরাদের সেরা জায়গায় নিয়োগের জন্য। প্রশ্নের বিকল্প উত্তরগুলির ক্ষেত্রেও এরকম: কোনো উত্তর এমন থাকে যে দেখেই বোঝা যায় সেটি ভুল উত্তর, কোনোটি সংশয়ে ফেলে, ঠিক উত্তরটি আন্দাজে ঢিল মারার বিষয় না। প্রশ্নের বিকল্প উত্তরগুলির মধ্যে ‘নান অব দ্য অ্যাবাভ’ থাকলে তো ঝুঁকি আরও বেশি।

খুব সোজা প্রশ্ন রাখার দরকার পড়ে পরীক্ষার্থীদের মনের জোর বাড়ানোর জন্য, স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পাবার জন্য। অনেকে ভালো নম্বর তোলার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাকক্ষের পরিবেশে প্রথমে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য হারিয়ে সময় নষ্ট হয়, তাঁদের ছন্দে রাখতেও এটা সহায়ক।

কত প্রশ্ন খুব সহজ বা মাঝারি বা কঠিন হবে তা নির্ভর করে প্রতিযোগিতার ওপর বা পরীক্ষার আয়োজকদের বিবেচনার ওপর। সাধারণভাবে বলা যায়, খুব সোজা থেকে মাঝারি মানের দুই-তৃতীয়াংশ উত্তর ঠিক করতে পারলে ন্যূনতম সাফল্য মান বা পাশনম্বর তোলা যায়।

এখানে খেয়াল রাখতে হবে, ন্যূনতম সাফল্য মান তোলা মানে কিন্তু মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্যতা নয়। যাঁরা প্রতি পেপারে ন্যূনতম সাফল্য মান তুলতে পারেন কেবল তাঁদের মধ্যে থেকেই মোট শূন্যপদের নির্দিষ্ট অনুপাতের প্রার্থীদের মেধাতালিকায় তোলা হয়। বিভিন্ন ক্যাটেগরির প্রথম সারির প্রার্থীদের আলাদা-আলাদা মেধাতালিকা এভাবে তৈরি করা হয়, তবে প্রথম তালিকা তৈরি হয় সাধারণত কোনো ক্যাটেগরির জন্য কোনো নম্বরের কাট-অফ মার্ক না কমিয়ে। তাই অসংরক্ষিত শূন্যপদেও স্থান পেয়ে থাকেন অর্থাৎ ‘জেনারেলদের’ সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যান অনেক সংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীরা। তাঁদের বদলে সংরক্ষণের সুযোগ পান আরও কিছু প্রার্থী।

কঠিন পর্যায়ের প্রশ্নগুলির মধ্যেও কিছু প্রশ্ন থাকে বেশ কঠিন, সেরা মেধাদের বাছার জন্য। এই সব দিক মনে রেখে প্রস্তুতির ছক তৈরি করা ভালো।

আসলে স্কুল-কলেজের পাশ-ফেলের মতো তো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পাশ-ফেল নয়। যাঁর যত নম্বরই উঠুক, শূন্যপদের মোট সংখ্যার নির্দিষ্ট অনুপাতের মধ্যে যাঁরা মেধাতালিকায় উঠবেন তাঁরাই স্থান পেতে পারেন পরবর্তী স্তরের মেধাতালিকায়, যদি অবশ্য প্রতি পেপার বা বিভাগে ন্যূনতম সাফল্যমান পেয়ে থাকেন।

সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, এখানে স্কুল-কলেজের প্রশ্নের মতো অপশন থাকে না। ফলে যত প্রশ্ন সবই উত্তর করতে হবে, ‘এটা’ অথবা ‘ওটা’ নয়। একটা প্রশ্ন বাদ মানে তার জন্য বরাদ্দ নম্বরও ছেড়ে দেওয়া। হিসাব হবে মোট নম্বরের মধ্যে কটা ঠিক উত্তরের নম্বর পেলেন, নেগেটিভ মার্কিং থাকলে তো দিতে হবে ভুলের মাসুলও। সাধারণত কোনো উত্তর ভুল হলে যেমন হাতের নম্বর কাটা যাবে, তেমনই এক প্রশ্নের একাধিক বিকল্প উত্তর চিহ্নিত করলেও ভুল উত্তর বলে ধরা হয়। কোনো প্রশ্ন ছেড়ে দিলে তার জন্য বরাদ্দ নম্বর কাটা যায়, কিন্তু ভুল উত্তর দিলে একই সঙ্গে খোয়া যায় নেগেটিভ মার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত নম্বর।

পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং আছে কিনা তার ওপর ভরসা করেন অনেকেই। নেগেটিভ মার্কিং না থাকলে না জানা প্রশ্নে আন্দাজে ঢিল মারা যায়, ফলে নম্বর বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়, কিন্তু নেগেটিভ মার্কিং থাকলে সেই মানসিকতার খেসারত দিতে হতে পারে কষ্টার্জিত নম্বর খুইয়ে। তাই হাতে-কলমে বা কম্পিউটারে প্রশ্নোত্তরের প্র্যাক্টিস বাড়িয়ে এবং ক্রমশ ভুলের সংখ্যা কমিয়ে নিজেকে তৈরি করার লক্ষ্যই স্থির করতে হবে। কারণ আগেই বলেছি, চাকরি পেতে হলে বা চূড়ান্ত মেধাতালিকায় ঠাঁই পেতে হলে এগিয়ে থাকতেই হবে। নম্বরের ভগ্নাংশের বেশকমে আগুপিছু হয়ে যান অনেকেই। সব প্রশ্নের উত্তরই জানা থাকবে এমন বেশি ঘটে না, তবু চূড়ান্ত মেধাতালিকায় ওঠার লক্ষ্য তো রাখতেই হবে। নেগেটিভ মার্কিং থাকলেও তাই নিশ্চিত না হওয়া প্রশ্নে ঝুঁকি নিলে যদি লাভ হবার সম্ভাবনা থাকে, সে ঝুঁকিও তাই নেওয়াই ভালো।

এই সদর্থক মনোভাবটা চাইই। অনেকে শুরু থেকেই হার মেনে নেন নেতিবাচক ভাবনা অবলম্বনে। পাশনম্বর কত, এই পরীক্ষা কতবার দেওয়া যায়, একটা পেপারে ফেল করলে অন্য পেপারে বেশি নম্বর তুলে মেকাপ দেওয়া যায় কিনা, চূড়ান্ত ফল বেরোলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় তালিকা বেরোবে কিনা, ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকলে চাকরি পাবার নিশ্চয়তা থাকে কিনা, ইত্যাদি। পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেলে এরকম ভাবা যেতে পারে, কিন্তু পরীক্ষার আগে কেন? এটাই শেষ সুযোগ, পারতেই হবে, পারবই— এরকম ভাবনা বা জেদ বা সংকল্প হবে না কেন? শুধু পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা তৈরির জন্য হলেও এই সদর্থক মানসিকতা চাইই। সেটাও প্রস্তুতির একটা অচ্ছেদ্য অঙ্গ। মনে রাখবেন, আপনার যে যোগ্যতা তার মধ্যেই থাকছে পরীক্ষার সিলেবাস। ওই সিলেবাসে আপনি উত্তীর্ণও হয়ে এসেছেন, তৈরি হয়ে আছেন অনেকটাই। স্কুল-কলেজের ফলাফলে জেনে গিয়েছেন আপনি কোন বিষয়ে কতটা শিখেছেন, কতটা ফাঁক থেকে গেছে। ফাঁক মেরামতের সময়ও পেয়েছেন, পাচ্ছেন। আর পিছিয়ে থাকবেন কেন? পিছিয়ে থাকার মানসিকতা ত্যাগ করে উঠে-পড়ে লাগুন, দরকার হলে শিক্ষক-শিক্ষিকা বা কোচিং ইনস্টিটিউটের সাহায্য নিন, পারতেই হবে। নেতিবাচক ভাবনা, এমনকি না বলাটাই পারতপক্ষে বর্জন করুন।

আমাদের প্র্যাক্টিস সেট দেওয়া শুরু হয়েছে, যাচাই করতে থাকুন নিজের সাফল্যসম্ভাবনার মান।