শান্তির দূত কোফি আন্নান

551
0
Peace messenger Kofi Annan

ছোটবলেলার সেই এনফ্যানসিপাম মেথডিস্ট স্কুলই তাঁকে শিক্ষা দিয়েছিল ‘কোনো এক স্থানের দুঃখ কষ্ট, সংকট সব জায়গার মানুষকেই প্রভাবিত করে।’ এই বাক্যগুলি তাঁর জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে শেষ দিন পর্যন্ত সারা বিশ্বের মানুষের শান্তিকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে গেছেন। শান্তির দূত হয়ে কখনও রুয়ান্ডার গণহত্যায়, কখনও মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা আবার কখনও বা সিরিয়ার সংকটে। শান্তি ও কল্যাণের জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন গোটা বিশ্বে। কখনও সফল হয়েছেন আবার কখনও ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন শূন্য হাতে। সারা জীবনের সেই লড়াইয়ের জন্যই পেয়েছিলেন ২০০১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার। সেই শান্তির যোদ্ধা ও কল্যাণের পথপ্রদর্শক নোবেল শান্তি প্রাপক, রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নান মারা গেলেন। পুরো নাম কোফি আট্টা আন্নান (৮ এপ্রিল, ১৯৩৮-১৮ আগস্ট ২০১৮)। কাকতালীয় ভাবে এমন একটা দিনে তাঁর প্রস্থান যার পরের দিনটাই ১৯ আগস্ট আবার ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটারিয়ান বা বিশ্বমানবিকতা দিবস রূপে চিহ্নিত। কথিত আছে, আকানদের সংস্কৃতিতে অনেক ছেলেমেয়ের নাম সপ্তাহের যে দিনে জন্মগ্রহণ করেছে সেদিনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রাখা হয়। আরও বলার, কোফি নামটা তাদের ভাষায় শুক্রবারের সাথে যুক্ত। আর শুক্রবারের শেষ বেলায়ই তিনি চিরবিদায় নিলেন। একেই বলে হয়তো কাকতালীয়। তিনি নিজে মজা করে বলতেন তাঁর নামের সঙ্গে ক্যানন বা কামান শব্দের ছন্দমিল হয়। তাইই হয়তো শান্তির জন্য যে-কোনো কামানের সামনে তিনি দূত হয়ে উপস্থিত থাকতে প্রস্তুত ছিলেন। ব্রিটিশ অধিকারের কেপকোস্ট-এ জন্ম, পড়াশোনা ও সেখান থেকেই বড় হয়ে ওঠা। অর্থনীতি ছিল প্রিয় বিষয়। ১৯৫৭ সালে যে বছর আন্নান এমফ্যানসিপাম থেকে পাশ করেন সে বছরই স্বাধীন ঘানার জন্ম। ১৯৬১ ফোর্ড ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় ম্যাকালেস্টার কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক বিষয় ও ম্যানেজমেন্ট নিয়েই পড়াশোনা করেন। ১৯৬২ সাল থেকেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জেনেভা কার্যালয়ে কাজ করতে-করতেই জাতি সংঘে যোগ দান। আর তারই পরবর্তী ধাপে জাতি সংঘের মহাসচিব পদে অধিষ্ঠান। ১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শান্তিরক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কাজ করার পর ১৯৯৬-এ জাতি সংঘের মহাসচিব হন। দুই দফায় মহাসচিব পদে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১২ সালে সিরিয়া সংকটে জাতি সংঘ-আরব লিগ যৌথ বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজে করেন। কিন্তু হতাশ হয়ে ফেরেন। এবং সেই হতাশা থেকেই অব্যহতি নেন সেই সমস্যা থেকে। ২০১৬ সালে মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের নিরসনে গড়েছিলেন ‘আন্নান কমিশন’। প্রধান হয়ে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন এই সংকট নিরসনে। যদিও সেই রিপোর্ট ঘিরে বিতর্ক ছিল অনেক। তবুও যেখানেই সংকট সেখানেই ছুটে গেছেন মানবতাবাদী কোফি। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস থেকে আফ্রিকার এইচ আইভি-র রোধে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন নানা সময়ে। তিনি ইংরেজি, ফারসি ছাড়াও অনেকগুলি ভাষা জানতেন। লিখেছেন আত্মজীবনীমূলক বই ‘ইন্টারভেনশনস, এ লাইফ ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস।’