হকির জাদুকর

1922
0
dhyanchand

প্রথমে নাকি হকির প্রতি কোনো আকর্ষণই অনুভব করতেন না। হকি নয়, কুস্তিতেই আকর্ষণ ছিল বেশি। কিন্তু কী করে যেন হকির মোহে পড়ে গেলেন। সেনাবাহিনীতে খুব ছোট বয়সেই চাকরি পেয়ে যান। চাকরির ফাঁকে-ফাঁকে রাতে চাঁদের আলোয় নাকি তিনি অনুশীলন করতেন, তাই তাঁর নামের সঙ্গে চাঁদ শব্দটি লোকমুখে জুড়ে যায়। ক্রমশ ধ্যান সিংই ধ্যানচাঁদ হয়ে ওঠেন ভারতের ‘হকির জাদুকর’। তখন ভারতে তেমন করে হকির কোনো চল ছিল না। উত্তরপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল ঝাঁসির সেই বালকের চোখেমুখে ছিল স্বপ্ন। ১৯২২ থেকে ২৬ আমির হকি টুর্নামেন্ট থেকে যাত্রা শুরু। তারপর শুধু দেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশে ভারতীয় হকির নেতৃত্ব যেমন দিয়েছেন, দেশকে অনেক সম্মান এনে দিয়েছেন এবং বিশ্বের দরবারে ভারতীয় হকির সম্মান তুলে ধরেছেন। অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ইত্যাদির মতো দেশ থেকে শুরু করে জার্মানি, হাঙ্গেরিকে হকিতে পর্যুদস্ত করে সংবাদের শিরোনামে ভারতের জয়ের জয় পতাকা তুলেছেন। কলকাতায় ১৯৩৫ সালে লক্ষ্মীবিলাস হকি টুর্নামেন্ট হয়েছিল। কয়েকটি দলকে নিয়ে। সেখানেও ধ্যানচাঁদের মুনশিয়ানা সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিল। এক কথায়, হকির স্বর্ণযুগ এনে দিয়েছিলেন ধ্যানচাঁদ ও তাঁর সতীর্থরা। ভারতে হকিকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। হকির এই ম্যাজিশিয়ানকে সম্মান জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের দর্শক-খেলোয়াড়রা। ভারত প্রতি বছর তাঁর জন্মদিন ২৯ আগস্ট তারিখটিকে ভারতীয় খেল দিবস হিসেবে স্মরণ করে থাকে। ১৯৫৬ সালে পদ্মভূষণ পান। ২০০২ সালে দিল্লির ন্যাশনাল স্টেডিয়াম তাঁর নামে নতুন করে নামাঙ্কিত করা হয়। ভারতীয় ডাকবিভাগ তাঁর নামে ডাকটিকটি বের করে তাঁকে সম্মান জানায়। আলিগড় মুসলিম ইউনিভাসির্টির হস্টেলের যে ঘরে থেকে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন সেই ঘর তাঁর নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৪ ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়। ২০০৫ সালে তাঁর শতবর্ষে গোটা দেশ হকির এই জাদুকরকে সম্মান ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছিল। ১৯০৫ সালে ২৯ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির সেই ধ্যানচাঁদ আজও ভারতের সমান গৌরবের। ১৯৭৯ সালে ৩ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।