আইএএস, আইপিএস পদ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের প্রদর্শন করছেন যাঁরা

857
0

নিরলস পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং অনুশীলন ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট মানের কর্মপদে আপনাকে বসিয়ে দিতে পারে।  আমলা অর্থাৎ আইএস, আইপিএস, আইএফএস-এর মতো চাকরি। ওই পদে বসার পিছনে একটা দীর্ঘকালীন লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে প্রত্যেক সফল প্রার্থীর। তবে লড়াইটা বোধহয় ওই চাকরি পাওয়ার সাফল্যেই মিটে যায় না। ওই পদে আসীন হয়ে বাকি কর্মজীবন আরেকটি লড়াইয়ের অধ্যায় তৈরি করে, সার্বিকভাবে দেশের জন্য কিছু করার লক্ষ্যে।

গত বছর, ২০১৮ সালে দেশের ও দশের উন্নয়নের স্বার্থে এরকমই কিছু দুঃসাহসিক এবং যুগান্তকারী নিদর্শন তৈরি করেছেন কয়েকজন আইএস, আইপিএস অফিসার। দেখে নেওয়া যাক তাঁদের কিছু  শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ।

কৃষ্ণ তেজা: আইএএস কৃষ্ণ তেজা এখন কেরালার আলেপ্পির একজন সেলিব্রিটি। ২০১৮-তে কেরালার বন্যা-বিপর্যয়ের দাগ আমাদের এখনো মোছেনি। কেরালা বন্যার সময় অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ছিল আলেপ্পি। বন্যাবিপর্যয়ের দু সপ্তাহে চূড়ান্ত বিপর্যস্ত। প্রায় আড়াই লক্ষ ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা, ৪০০০ স্কুল কিট বিতরণ, প্রায় ৭০০ রিলিফ ক্যাম্প তৈরির পিছনে অন্যতম বড় ভূমিকা কেরালার কুত্তান্ড-র সাব কালেক্টর কৃষ্ণ তেজজা। নতুন করে গৃহ নির্মাণ, ট্রেন তহবিল গঠন ইত্যাদি একাধিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য শুরু হয় “আই অ্যাম ফর আলেপ্পি” ক্যাম্পেন, কৃষ্ণ তেজার হাত ধরে।

হর্ষ পোদ্দার: ইয়ুথ পার্লামেন্ট চ্যাম্পিয়নশিপ— এটি মহারাষ্ট্রের একটি যুব সম্পদ্রায়ের একটি মঞ্চ, যাঁরা অপরাধ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের প্রায় ২ লক্ষ যুবক-যুবতী অংশগ্রহণ করে ফেলেছেন এই প্ল্যাটফর্মে। আইপিএস হর্ষ পোদ্দার বর্তমানে নাগপুরের ডেপুটি কমিশনার পদে কর্মরত। মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও শহরের বেআইনি কার্যকলাপ ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনার পেছনের অন্যতম কারিগর হর্ষ।

রঘু কিরণ: কর  ব্যবস্থা সরলীকরণের উদ্দেশ্যে গত বছর চালু করা হয় জিএসটি। নতুন এই প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিটি সাধারণ মানুষের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়। মানুষ চিন্তিত থাকে কোনো ক্ষেত্রে ভুলভাবে বা বেআইনিভাবে তার কাছ থেকে কর নেওয়া হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে। আইআরএস রঘু কিরণ তাঁর প্রযুক্তিগত বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করলেন “জিএসটি ভেরিফাই” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ। আপনি যে-কোনো কিছু ক্রয় করে তার বিল থেকে এই অ্যাপ-এর মাধ্যমে জিএসটির বৈধতা জানতে পারবেন।

অতুল কুলকার্নি – আইপিএস অতুল কুলকার্নি মহারাষ্ট্রে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশ পদে কর্মরত। পুলিশ এবং জনসাধারণ -এর মধ্যে  চিরকালই একটা দূরত্ব বজায় থাকে। সেই দূরত্ব কমিয়ে অপরাধ দমনের জন্য জনসাধারণ এবং পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য বড় ভূমিকা পালন করেন। তার উদ্যোগে “ভরসা সেল” নাম একটি প্রজেক্ট যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ পেয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুলে কমপ্লেন্ট বক্স বসানো থেকে শুরু করে ” নির্ভয়া পাঠক” পুলিশ পেট্রোলিং ভ্যান চালু এরকম একাধিক জনকল্যাণমুখী কাজের নজির তৈরী করছেন অতুল।

নিখিল নির্মল: পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার জেলাশাসক নিখিল নির্মল। “আলোড়ন” নামে বিনা খরচে শিক্ষা পরিষেবা চালু করে উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন। প্রায় ৭৩টি স্কুলের ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর জন্য কাজ করছে এই আলোড়ন। এর পাশাপাশি নিখিলের “আপনার বাগানে প্রশাসন” নামক প্রকল্পটিও বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মানুষের দোরগোড়ায়  গিয়ে প্রশাসনিক সচেতনতা ও অভিযোগ গ্রহণে এই অভিনব প্ৰয়াস জনপ্রিয়তা লাভ করেছে আলিপুরদুয়ার জুড়ে।

এরকম আরো সহস্র নিদর্শন রয়েছে সারা দেশ জুড়ে, যাঁরা নিরন্তর ফলিয়ে যাচ্ছেন সাফলতার বীজ এবং তার পাশাপাশি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠছেন আগামী প্রার্থীদের কাছে।

 

Civil Service Officer, Best Civil Service Officer