Site icon জীবিকা দিশারী

কেরিয়ার কাউন্সেলিং : ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর

career-counselling-picture

আমি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি, যথাক্রমে ৮৮ শতাংশ এবং ৮৩.২ শতাংশ নম্বর নিয়ে। ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ার পর রেগুলারে সুযোগ না পাওয়ায় দূরশিক্ষায় এমএ করছি। অনেকে বলে দূরশিক্ষায় এমএ সমান মান্যতা পায় না।  আমার স্কুল শিক্ষাকতার দিকে যাওয়ার ইচ্ছে নেই, তবে ডব্লুবিসিএস  এবং সিজিএল পরীক্ষা দিতে চাই। কিন্তু হতাশা লাগছে এমএ-র বিষয়টি নিয়ে। যার কারণে সরকারি চাকরির কোনো প্রস্তুতি নিতে পারছি না।— সৌম্যদীপ পট্টনায়েক, সোনারপুর।

তুমি একেবারে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। বছর নষ্ট করার থেকে রেগুলারে মাস্টার্স করে নিয়ে অত্যন্ত বিবেচনার কাজ করেছ। আর ডিস্ট্যান্সে পিজি করছ বলে হীনমন্যতায় ভুগো না। সরকারিভাবে এর মূল্য রেগুলারের সমান। তাছাড়া, ইন্টারভিউ বোর্ডে সাধারণত প্রার্থীর জ্ঞান যাচাই করবে,  ইউনিভার্সিটির বিচার সেখানে থাকে না, বিশেষত সরকারি চাকরির পরীক্ষায়। খুব মন দিয়ে শেখো। তুমি বিসিএস বা সিজিএল-এ আসতে চাইলে এখন থেকেই উঠেপড়ে লাগতে হবে। মাস্টার্স করতে-করতেও শুরু করে দিতে পারো। রেগুলার ক্লাস অ্যাটেন্ড যেহেতু করতে হচ্ছে না, তাই যাতায়াত, কোচিং বা লাইব্রেরি ওয়ার্কে সময় নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। তাই খুব ভালো করে সারাদিনের একটা রুটিন করে নাও। বহুদিন অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোলের টাচে নেই, তাই আবার নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়ার কাজ আজই শুরু করো। পারলে ঘড়ি ধরে ছোট-ছোট ন্যাশনাল বা স্টেটওয়াইজ ইস্যুগুলো নিয়ে নোট তৈরি করে যখন-তখন তাত্ক্ষণিক পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে তোলো। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় ও উত্তর-সম্পাদকীয় পড়ার অভ্যাস তৈরি করো। ভরসাযোগ্য কোনো কোচিং ইন্সটিটিউটের সঙ্গে কথা বলতে পারো। তারা তোমাকে বছর ভিত্তিক প্রশ্ন, পরীক্ষার ধরন, পরীক্ষার সম্ভাব্য সময়সারণী বলে দিতে পারবে। তোমার সময় অনুসারেই তারা ক্লাস শিডিউল ফেলবে।

 

আমি ম্যাথেমেটিক্সে বিএসসি শেষ করেছি ২০১৭ সালে। ডব্লুবিসিএস দিতে চাই। এমএসসি করতে ভালো লাগছে  না।  কিন্তু বাবা চান আমি এমএসসি করি।  কী করব বুঝতে পারছি না।  রতন সিংহ, বাঁকুড়া।

নিজের ইচ্ছে আর আগ্রহের বাইরে গিয়ে কোনো কিছুই পরিপূর্ণতা পায় না। তাই অবশ্যই নিজের ইচ্ছেটাকে সম্মান দাও। তবে বাবা-মা অনেক সময়ই চান তাঁদের সন্তান ইউনিভার্সিটির অন্তত গতানুগতিক শেষ ধাপটাকে পেরিয়ে আসুক। তাই তাঁদের সে ইচ্ছেটাকে শ্রদ্ধা জানাতে কি খুব কষ্ট হবে? মাত্র তো দুটো বছর। সিদ্ধান্তটা অবশ্যই নিজের সঙ্গে নিজে যুক্তি-প্রতিযুক্তি দিয়ে সাজিয়ে, তবেই নিও। আসলে পিজি এমন একটা মাইলস্টোন যে অনেকে ইচ্ছে বা স্বপ্ন থাকলেও ছুঁতে পারে না। তুমি যখন সেটা পেয়েছো, হেলায় হারানো পরে আফশোসের কারণ না হয়। তুমি অবশ্যই ডব্লুবিসিএস-এ বসতে পারবে। সেই ক্ষমতা তোমার আছে। আর অনেক দিন ধরে পরীক্ষায় বসার সুযোগও পাবে। মাস্টার্সটা করা থাকলে পরে উচ্চতর শিক্ষকতার দিকে আসার দরজাটাও খোলা থাকবে। বাকি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যা-যা কিছু লাগে, সেসব একটু সময় ধরে নিয়মিত অভ্যাস করলেই হয়ে যাবে। দরকার টাইম ম্যানেজমেন্ট। সারাদিনটাকে কিছু স্লটে ভেঙে নিয়ে আজ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দাও। খবরের কাগজ পড়া, রেডিওতে ইংরাজি ভাষায় খবর শোনার অভ্যাস করো। আর কাজের ফাঁকে-ফাঁকে এটা চালানোও যেতে পারে অনায়াসে। ইংরাজির চর্চাটা খুব জরুরি। ব্যাচমেট বন্ধুদের নিয়ে স্টাডি গ্রুপ তৈরি করে ফেলো। তাতে প্রস্তুতি আরও নির্ভুল হবে। নিজের অবস্থান আর খামতির জায়গাগুলো সহজেই সংশোধন করে নেওয়া যাবে। তুমি এমসিএ বা এমবিএ করার কথাও ভাবতে পারো, যদি অঙ্ক এতটাই অপছন্দের হয়ে ওঠে। কাজের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে। আসলে বিসিএস-এর প্রস্তুতি কেউ যদি সঠিক সময়ে আর সঠিক নির্দেশনার মধ্যে দিয়ে চালিয়ে যেতে পারে, সাফল্য অবধারিত তো বটেই, অন্যান্য ছোটখাটো পরীক্ষাগুলোও সহজেই ক্র্যাক করতে পারবে। তুমি নিজের ক্ষমতা ও সামর্থ্যানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিও। লক্ষ্যে না পৌঁছে হাল ছেড়ে দিও না।

আমি বিএ থার্ড ইয়ারে ওঠার কয়েক মাস পর পুলিশের চাকরিতে জয়েন করি। কিন্তু আমার স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার। অথচ বিএড ছাড়া এসএসসিতে বসা যাবে না। আমার প্রশ্ন, আমি যদি এবছর রেগুলারে থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা  দিই, তাহলে সেই সার্টিফিকেট কি মান্যতা পাবে এবং বিএড কিভাবে করব?— সুজন বর্মন, কোচবিহার।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় অমলকান্তিও তো রোদ্দুর হতে চেয়েছিল, কিন্তু কার্যত পেরেছিল কি! তাই আমরা যা স্বপ্ন দেখি, সবসময় সেটা যে হবেই, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্য মনের মতো চাকরি না পেলে পুলিশের চাকরিতে ক্ষতি কী। পুরোপুরি সরকারি চাকরি। স্কুলগুলো কিন্তু অধিকাংশই গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড অথবা এইডেড। পিএসসির মাধ্যমে সরকারি স্কুলে ঢুকতে পারলে অবশ্য আলাদা কথা। তবে এমন নজির অনেক রয়েছে, যেখানে ক্যান্ডিডেট নিজে থেকে পুলিশের কাজ ছেড়ে স্কুল বা কলেজ শিক্ষকতার কাজে যোগ দিয়েছেন। কখনো বা উল্টোটাও ঘটেছে। তুমি গ্র্যাজুয়েট হলেই কোনো স্বীকৃত বিএড কলেজ থেকে বিএড করে নিতে পারো। তবে উচ্চতর যোগ্যতার প্রার্থীদের প্রাচুর্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই প্লেন গ্র্যাজুয়েশন করে বিএড-এ সুযোগ পাওয়া একটু শক্ত। তোমাকে আর একটু পড়ে আসতে হবে।

Exit mobile version