জন্ম রাজবংশে। পিতা কপিলাবস্তুর রাজা। কিন্তু সেই রাজন্য পরিবার বৈভব ঐশ্বর্য কোনো কিছুই রাজপুত্র সিদ্ধার্থকে আকর্ষণ করেনি। শৈশবেই মনের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে মানুষের জরা ব্যাধি মৃত্যুর নিরসন কোথায়। এই প্রশ্নই তাঁকে সিদ্ধার্থ থেকে গৌতম বুদ্ধে পরিণত করেছিল। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিবাহ, কিন্তু সেখানেও মনঃস্থির হল না। সন্ন্যাস নিয়ে অকস্মাৎ ঘর ছাড়লেন। ২৯ বছর বয়সে ৪৫ দিনের সাধনায় নির্বাণ লাভ। সিদ্ধার্থ হয়ে উঠলেন গৌতম বুদ্ধ। বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দুধর্ম, খ্রিস্টধর্ম এমনকী সমসাময়িক মূল ধারার বাইরে ইসলাম ধর্মের সুফিবাদের সঙ্গেও এই সন্ন্যাস ধর্মের এক প্রগাঢ় মিল দেখা যায়। জন্ম নেপালের লুম্বিনীতে হলেও সিদ্ধার্থের সিদ্ধিলাভ ও গৌতম বুদ্ধ হয়ে ওঠার একটা বড় অংশ তিনি কাটিয়েছেন ভারতের মাটিতে। বোধগয়া, সারনাথ, শ্রাবস্তী, রাজগীর প্রভৃতি স্থান ছিল তাঁর সাধনার পীঠস্থান। সারনাথ থেকেই বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা। পরবর্তীকালে মহামতি রাজা অশোকের হাত ধরে ভারত থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া, জাপান, চিন, সিঙ্গাপুর, হংকং, তিব্বত, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া, অস্ট্রেলিয়া থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানু্ষের বাস। বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব। বৈশাখ মাসের পূ্র্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এই তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। তাই এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক বিশেষ দিন। উত্তরপ্রদেশের কুশী নগরে ৮০ বছর বয়সে তাঁর মহাপরিনির্বাণ হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকদের অভিমত। সঠিক মৃত্যু তারিখ নিরূপিত হয়নি। এদিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ মন্দিরে বা প্যাগোডায় সমবেত হয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে, ধ্যান করে, ধূপ জ্বেলে বিভিন্ন স্তবগান করে বুদ্ধের আরাধনা ও বন্দনায় সমবেত হন। শুভ্রবসনে অনুগামী ভক্তরা সমবেত হয়ে উৎসবে ও প্রার্থনায় মগ্ন হন। সংস্কৃতে জয়ন্তী অর্থ জন্মদিন। বুদ্ধজয়ন্তী নানা দেশে বুদ্ধজন্মতিথি, বৈশাখ পূর্ণিমা, বেশাক ডে নানা নামে পালিত হয়। নেপালে বলা হয় স্বন্যাপুনহি, ইন্দোনেশিয়ায় আবার হরি ওয়াসাক। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বুদ্ধপূর্ণিমা প্রতি বছর এপ্রিলের শেষ দিন থেকে মে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে পালিত হয়ে থাকে। যেমন তাইওয়ানে ২ মে বুদ্ধপূর্ণিমা উৎসব। মঙ্গোলিয়ায় মঙ্গোলিয়ান ক্যালেন্ডার, তিব্বতে তিব্বতি ক্যালেন্ডারের রীতি মেনে বৌদ্ধ জন্মজয়ন্তী পালিত হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় এক সপ্তাহ ধরে বৌদ্ধ জয়ন্তী পালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই দিনটি পালিত হওয়ার পাশাপাশি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলা দেশেও এই দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় এবং সর্বাসাধারণের ছুটির দিন হিসাবে গণ্য। সর্বধর্মসমন্বয়ের দেশ ভারতেও ভীমরাও রামজি আম্বেদকর মন্ত্রী থাকাকালীন ভারতে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। এইদিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে নিরামিষ ভক্ষণের বা মদ্য মাছ মাংস বর্জিত দিন। এই জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কোথাও কোথাও-মেলাও বসে। ‘বোধিদ্রুম মেলা’ সে রকমই একটি। দক্ষিণ কোরিয়া, জাফনা, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে নদীতে প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পদ্মফুল, মোমবাতি, প্রদীপ প্রভৃতি নিয়ে পথপরিক্রমা করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।