সারাদেশে গ্রামীণ ডাকসেবক নিয়োগের দ্বিতীয় পর্যায়ে (সাইকেল-২) অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে গত ১৫ মার্চ থেকে (https://jibikadishari.co.in/?p=10437)। একজন এক দরখাস্তে এক সাইকেলে সারাদেশের যে-কোনো জায়গায় আবেদন করতে পারেন এক পোস্টাল সার্কেলে সর্বাধিক ৫টা, এভাবে নানা পোস্টাল সার্কেল মিলিয়ে সর্বাধিক ২০টা পদের জন্য। তবে চূড়ান্তভাবে একাধিক শূন্যপদের জন্য নির্বাচিত হলেও নিয়োগবণ্টন হবে ১টি শূন্যপদের জন্যই, বাকিগুলি বাদ হয়ে যাবে।
ওড়িশা ও তামিলনাডুর যথাক্রমে ৪৩৯২ ও ৪৪৪২ শূন্যপদের জন্য ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দরখাস্ত নেবার পর এবার শুরু হল ঝাড়খণ্ড, নয়াদিল্লি ও হিমাচল প্রদেশের যথাক্রমে ৮০৪, ১৭৪ ও ৭৫৭ শূন্যপদের জন্য আবেদনের সুযোগ। রেজিস্ট্রেশন করা যাবে ৫ জুলাই পর্যন্ত, তারপর ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে আবেদন করা যাবে ১৩ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্য/অঞ্চল সার্কেলের শূন্যপদের জন্যও যথাসময়ে আবেদনগ্রহণ শুরু হবে, রেজিস্ট্রেশন একবার করে রাখলেই হবে।
প্রসঙ্গত, প্রথম পর্যায়ে (সাইকেল-১) গ্রামীণ ডাকসেবক নিয়োগের আবেদন শুরু হয় ২৫-৪-২০১৭-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী। পশ্চিমবঙ্গে ৪৯৮২ শূন্যপদের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয় ১৮-৭-২০১৭-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী। কিন্তু সেই দরখাস্ত নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে ৩ জানুয়ারি ২০১৮-র এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী। পরে আবার পশ্চিমবঙ্গে অনলাইন দরখাস্ত নেওয়া শুরু হয় (তার জন্য নতুন বিজ্ঞপ্তি নম্বর RECTT./R-100/ONLINE/GDS/VOL-VI DATED 05.04.2018)। শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে হয় ৫৭৭৮। কিন্তু আবেদন গ্রহণ শেষ হলেও শেষপর্যন্ত মামলার কারণে সেই নিয়োগপ্রক্রিয়াও আটকে যায় (https://jibikadishari.co.in/?p=6307)। আদালতের বিচারাধীন থাকার কারণে এবারের নতুন দফায় (সাইকেল-২) এরাজ্যে কখন কীভাবে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না।
কোন পদে কোথায় নিয়োগ: বিজ্ঞপ্তি বেরোলে পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের (অন্যান্য সার্কেলেরও) বিভিন্ন পোস্টাল ও আরএমএস বিভাগে এই নিয়োগ হবে। ‘গ্রামীণ ডাক সেবক অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টার/ ডাকসেবক’ বা ‘গ্রামীণ ডাক সেবক ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টার’ পদে নিয়োগ হবে। ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টারের ক্ষেত্রে পোস্ট অফিস খোলার উপযুক্ত অবস্থান এবং মাপ অনুযায়ী জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার জন্য ভাড়া বা অন্যান্য খরচ লাগলে তা নিজেকেই বহন করতে হবে।
যোগ্যতা: আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হল আবশ্যিক বা ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে ইংরেজি ও অঙ্ক নিয়ে পড়ে, দুটিতেই পাস নম্বর সহ মাধ্যমিক/সমতুল পাশ, সঙ্গে কোনো সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটারের প্রাথমিক শিক্ষার অন্তত ৬০ দিনের কোর্স করার সার্টিফিকেট। যাঁরা দশম, দ্বাদশ বা উচ্চতর ক্লাসে অন্যতম বিষয় হিসাবে কম্পিউটার নিয়ে পড়েছেন তাঁদের এরকম আলাদা করে প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট লাগবে না। স্থানীয় ভাষাতেও দখল থাকা দরকার (যেমন পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের জন্য বাংলা/নেপালি/উর্দু/হিন্দি/সাঁওতালি/ওড়িয়া/পাঞ্জাবি, এই সার্কেলেরই আন্দামান-নিকোবরের জন্য হিন্দি, সিকিমের জন্য নেপালি), অন্তত মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আবশ্যিক/ ঐচ্ছক বিষয় হিসাবে সেই ভাষা পড়ে থাকা দরকার। মাধ্যমিকের চেয়ে উচ্চতর যোগ্যতা থাকলে তার জন্য কোনো বাড়তি সুবিধা পাবেন না, তবে প্রথম সুযোগেই মাধ্যমিক পাশ হলে কমপ্লিমেন্টারিতে পাশ যোগ্যতার তুলনায় উচ্চমেধার বলে গণ্য করা হবে। মার্কশিটে নম্বর, গ্রেড দুইই দেওয়া থাকলে কেবল নম্বরের উল্লেখ করতে হবে। শুধু গ্রেড উল্লেখ করলে বাতিল হবে। বাইরের কাজের পদে সাধারণ জিডিএসদের সাইকেল চালাতে জানা দরকার, মোটর সাইকেল বা স্কুটার চালাতে জানলেও সাইকল চালাতে জানেন ধরা হবে। এটি কোনো সরকারি চাকরি নয়, পুরোপুরি জিডিএস সংক্রান্ত আইন মাফিক পরিচালিত। কোনো ইলেক্টিভ অফিসের সঙ্গে যুক্ত থাকলে আবেদন করা যাবে না। অন্য সংস্থা বা এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত থাকা-না-থাকা (যাতে এই কাজে প্রভাব পড়তে পারে) ইত্যাদি আরও কিছু বিষয়ে কড়াকড়ি আছে, দরখাস্তের ওয়েবসাইটে জানা যাবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে তার জন্য কোনো বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে না।
বয়সসীমা: বয়স হতে হবে দরখাস্ত শুরুর তারিখে ১৮-৪০ বছর। তপশিলি, ওবিসি ও প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা নিয়মানুসারে বয়সের ছাড় পাবেন।
বাসস্থান, আর্থিক সঙ্গতি: যাঁরা গ্রামীণ ডাকসেবক পোস্ট মাস্টার পদের জন্য নির্বাচিত হবেন তাঁদের শাখা ডাকঘরের গ্রামের মধ্যে বাসস্থান হতে হবে, নির্বাচিত হবার ৩০ দিনের মধ্যে বা কাজে যোগদানের আগে। অন্যান্য জিডিএসদেরও বাসস্থান হতে হবে গ্রামীণ ডাকসেবক গ্রামের এলাকার মধ্যে। জিডিএসদের জীবনধারণের উপযুক্ত আর্থিক সঙ্গতিও থাকা দরকার, যাতে কেবলমাত্র সরকারি ভাতার ওপর নির্ভর করতে না হয়। এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। নির্বাচিত হলে সিকিউরিটি ডিপোজিটও জমা রাখতে হবে ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টারদের ২৫০০০ টাকা, অন্যদের ১০০০০ টাকা হারে।
কাজ, ভাতা: আগেই বলেছি, গ্রামীণ ডাক সেবক পর্যায়ে নিয়োগ হবে গ্রামীণ ডাকসেবক ব্রাঞ্চ পোস্টমাস্টার ও সেইসঙ্গে মাল্টি টাস্কিং স্টাফ বা মেল ডেলিভারার/স্ট্যাম্প ভেন্ডার, মেল ক্যারিয়ার/ প্যাকার/ মেলম্যান। দরখাস্তে একজন যে-কোনো সার্কেলে সর্বাধিক ৫টি পর্যন্ত পদ-পছন্দ জানাতে পারেন পরম্পরাক্রমে। এই পদগুলিতে কাজের সময় ন্যূনতম ৪ ঘণ্টা বা ৫ ঘণ্টা। সেই অনুযায়ী ভাতা (টাইম রিলেটেড কন্টিনিউইটি অ্যালাওয়্যান্স, সংক্ষেপে টিআরসিএ) দেওয়া হবে। ভাতার পরিমাণ এবিপিএম/ডাকসেবকদের ন্যূনতম ৪ ঘণ্টা কাজের ক্ষেত্রে ১০০০০-২৪৪৭০ টাকা বা ন্যূনতম ৫ ঘণ্টা কাজের ক্ষেত্রে ১২০০০-২৯৩৮০ টাকা, ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪ ঘণ্টায় ১২০০০-২৯৩৮০ টাকা, ন্যূনতম ৫ ঘণ্টায় ১৪৫০০-৩৫৪৮০ টাকা।
প্রার্থিবাছাই: প্রার্থী বাছাই হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, অনলাইনে আবেদনের সময় দেওয়া প্রার্থীর তথ্যাবলির ভিত্তিতে। কেবল মাধ্যমিকের নম্বরই বিবেচিত হবে, শতকরা হিসাব ধরা হবে চার দশমিক স্থান পর্যন্ত। টাই হলে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা। যাঁদের নম্বর, গ্রেড দুইই আছে তাঁরা শুধু নম্বর উল্লেখ করবেন। এভাবে প্রার্থিবাছাইয়ের ফলাফলও যথাসময়ে ওয়েবসাইটে জানা যাবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের এসএমএস করেও জানানো হবে।
আবেদনপদ্ধতি: আবেদন করতে হবে কেবলমাত্র অনলাইনে, https://indiapost.gov.in বা http://www.appost.in/gdsonline/Home.aspx ওয়েবসাইটে। অফলাইনে বা রাজ্যস্তরে আলাদা করে আবেদন বা যোগাযোগের কোনো ব্যাপার নেই। আবেদনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যাবে মাত্র একবারই, একাধিক বার রেজিস্ট্রেশন করলে প্রার্থিপদ বাতিল হতে পারে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেলে তার উল্লেখ করে যে-কোনো সার্কেলে যে-কোনো পদ-পছন্দের জন্য আবেদন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভুলে গেলে তা উদ্ধার করতে পারেন ‘ফরগট রেজিস্ট্রেশন’ লিঙ্কের মাধ্যমে।
ফি: আবেদনের ফি প্রতি ৫টি পদের জন্য ১০০ টাকা (মহিলা, তপশিলি ও প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের কোনো ফি দিতে হবে না) রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে কোনো হেড পোস্ট অফিসে ওই টাকা জমা দিতে হবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করে (রাজ্যওয়াড়ি হেড পোস্ট অফিসের তালিকা পাবেন www.appost.in/gdsonline/MasterPDF/HO_List.pdf ওয়েবসাইটে) তারপর অ্যাপ্লাই অনলাইন লিঙ্কে ফিরে নিজের পছন্দের রাজ্য/সার্কেলে এক সার্কেলে ৫টি এবং সব সার্কেলে মিলিয়ে ২০টি শূন্যপদের জন্য আবেদন করা যাবে। ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও উপযুক্ত ফি (এক সার্কেলে সর্বাধিক ৫টি পদের জন্য ১০০ টাকা হিসাবে) পেমেন্ট নম্বর উল্লেখ করে আবেদন করা যাবে। দরখাস্তে মাধ্যমিক সার্টিফিকেটের নম্বর উল্লেখ করতে হবে (কোন বোর্ডের সার্টিফিকেটে কোথায় কী নম্বর লেখা থাকে তা দরকার হলে স্কুল থেকে বুঝে নিতে পারেন, তবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর বা রোল নম্বর চেনা যাবে অ্যাডমিট কার্ডের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে, সার্টিফিকেটে এর বাইরে কোনো একটি নম্বর থাকলে সেটিই সার্টিফিকেট নম্বর, একাধিক নম্বর থাকলে কোনটি সার্টিফিকেট নম্বর তা জেনে নিতে পারেন স্কুল থেকে) একবার প্রমাণপত্রাদি (মাধ্যমিক মার্কস মেমো/ সার্টিফিকেট, কাস্ট/কমিউনিটি সার্টিফিকেট, ফটো, সই এসবের জেপিজি/ জেপেগ ফর্ম্যাটে স্ক্যান করা কপি (স্ক্যান করতে হবে সমস্ত সার্টিফিকেট/মার্কশিটের ক্ষেত্রে প্রতিটি এ-৪ মাপের কাগজে ২০০ কেবির মধ্যে, মাধ্যমিক পরীক্ষা দুইয়ের বেশি বারের চেষ্টায় পাশ হলে অতিরিক্ত মার্কশিট সর্বাধিক ৬০০ কেবি, ফটো ও সই প্রতিটি বাঞ্ছনীয়ত ২০০x২৩০ পিক্সেলে কিন্তু ৫০ কেবির মধ্যে) আপলোড করা হয়ে গেলে পরে আর কোনো সার্কেলে বা আর কোনো পদ-পছন্দের ক্ষেত্রে তা আপলোড করতে হবে না, স্বয়ংক্রিয় ভাবে সার্ভার থেকেই তা ব্যবহৃত হবে। তবে মাধ্যমিকের নম্বর ইত্যাদির কোনো ভুল তথ্য বা ভুল/ প্রমাণপত্র আপলোড হলে দরখাস্ত বাতিল হবার সম্ভাবনা থাকবে। সব প্রমাণপত্র খুঁটিয়ে যাচাই হবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
কোন পোস্টাল ডিভিশনে কোন হেড পোস্ট অফিসের অধীনে কোন সাব অফিস, ব্রাঞ্চ অফিসে কোন পদে নিয়োগ, সংরক্ষণ আছে কিনা, কত শূন্যপদ, ভাতার হার কী, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কে এসব জানা যাবে ওপরের ওয়েবসাইটেই, দরখাস্ত করার সময়।