Site icon জীবিকা দিশারী

অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স কী ও কেন

Actuarial Science 1

নানাধরনের পরিষেবা শিল্প, বিমা সংস্থা, বহুজাতিক সংস্থার প্রাবল্য গত কয়েক দশকে কয়েকগুণ বেড়েছে। আর্থিক লেনদেন, মুনাফা, বিমা ইত্যাদির জন্য তৈরি হয়েছে নতুন-নতুন বহু কোম্পানি। স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক সংস্থাগুলির শিল্পঝুঁকি ও ক্ষতির আশঙ্কা কমানো, পাশাপাশি ব্যবসাবৃদ্ধির জন্য অ্যাকচুয়ারিদের গুরুত্ব বৃদ্ধি তথা অ্যাকচুয়ারি পেশার রমরমা চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মজগতে অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্সের প্রয়োগ অভূতপূর্ব। স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক সংস্থাগুলি মাত্রাতীত পরিমাণে নির্ভর করে রয়েছে অ্যাকচুয়ারিদের উপর। অ্যাকাচুয়ারি বলতে এমন এক দক্ষ কর্মজীবীকে বোঝায়, যিনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ম্যাথমেটিক্স, প্রব্যাবিলিটি, স্ট্যাটিস্টিক্স-এর সহায়তায় আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির খাদ থেকে সদর্থক সম্ভাবনার অভিমুখ নির্দেশ করেন। তাঁদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সংস্থাগুলি কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

অ্যাকচুয়ারি কী?

ইনশিওরেন্স, পেনশন, প্রপার্টি সংক্রান্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে সর্বক্ষণের জন্য জড়িয়ে রয়েছে আর্থিক রেখাচিত্র ওঠানামা, শেয়ার বাজারে প্রতিযোগিতা এবং অনিশ্চয়তা। যেখানে আর্থিক বাজারের প্রতি সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ এবং সঠিক ম্যাথমেটিক্যাল তথা স্ট্যাটিস্টিক্যাল পদ্ধতিকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ অ্যাকচুয়ারির। অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করে বিমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রভতি আর্থিক সংস্থাগুলিতে কাজের সুযোগ তৈরি হয়।

অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স বিষয়টি কী?

ম্যাথমেটিক্স, ফিনান্স, প্রব্যাবিলিটি, স্ট্যাটিস্টিক্স, ইকোনমিক্স, ফিনান্সিয়াল ইকোনমিক্স এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এই সবকিছু নিয়ে তৈরি হয়েছে অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স। বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক, রিটায়ারমেন্ট ফান্ড বা বিমা সংস্থাগুলির ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, তা রূপায়ণ এবং পরবর্তীকালে তা উন্নত করার জন্য অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্সকে ব্যবহার করা হয়। জীবন বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, সাধারণ বিমা বা যানবাহন বিমা—সবক্ষেত্রেই এই বিষয়ের প্রভাব রয়েছে। এই বিষয়ের কোর্সের মধ্যে অ্যালজেবরা, ম্যাথমেটিক্যাল নোটেশন— ভেক্টরস, ম্যাট্রিক্স, নিউমেরিক্যাল মেথডস, ডিফারেনসিয়েশন, ইন্টিগ্রেশন এবং পারমুটেশন-কম্বিনেশন, প্রোব্যাবিলিটি, স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডায়াগ্রাম, কোরিলেশনস, রিগ্রেশন, ডিস্ট্রিবিউশন প্রভৃতি বিষয় রয়েছে। ম্যাথমেটিক্যাল এই সমস্ত বিষয়ের পাশপাশি বিভিন্ন ধরনের বিমা, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, পেনশন, কর্মচারীদের প্রদেয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, বিজনেস/ফিনান্সিয়াল ইকোনমিক্স সম্বন্ধেও দক্ষ হতে হয়। কোর্সের শেষের দিকে হেলথ অ্যান্ড কেয়ার বা লাইফ ইনশিওরেন্স বা জেনারেল ইনশিওরেন্স বা পেনশন যে-কোনো একটি বিষয়ে স্পেশ্যালাইজ করা যায়।

কীরকম যোগ্যতা লাগে?

আন্ডারগ্র‌্যাজুয়েট স্তরে এই ধরনের কোর্স করার জন্য সাধারণত ১০+২ বা সমতুল যোগ্যতা চাওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাঠক্রমে অঙ্ক এবং ইংলিশ বিষয় থাকতে হবে। ম্যাথমেটিক্স, স্ট্যাটিস্টিক্স, ইকোনমিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ (ফিনান্স) নিয়ে গ্র‌্যাজুয়েট বা পোস্ট গ্র‌্যাজুয়েট ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। প্রতি বছর জুন এবং ডিসেম্বর মাসে অ্যাকচুয়ারিয়াল কমন এন্ট্রান্স টেস্ট হয়। চূড়ান্ত প্রস্তুতি সহকারে এই প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য আবেদন করা প্রয়োজন। পরীক্ষা অনলাইনের মাধ্যমে নেওয়া হয়। নির্দিষ্ট পরীক্ষা সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন হয় যাতে ৫৫টি প্রশ্ন থাকে। অ্যাকচুয়ারি এন্ট্রান্স টেস্ট উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাকচুয়ারিয়াল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। অ্যাকচুয়ারিয়াল সোসাইটিতে ১৫টি আলাদা বিষয় নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে উত্তীর্ণ হলে আর্থিক সংস্থায় কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। তবে অ্যাকচুয়ারি হওয়ার জন্য উত্তীর্ণ হতে হবে সব কয়টি বিষয়ে। স্বাভাবিকভাবে শুরু থেকেই অঙ্ক এবং স্ট্যাটিস্টিক্সের প্রতি আলাদা নজর দিতে হয়। আর্থিক বাজারের বর্তমান অবস্থার সম্বন্ধে ধারণা তৈরির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নীতি ও অবস্থানের দিকটিও খেয়াল রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

কী ধরনের কাজ করতে হয়?

আর্থিক সংস্থা বা বিমা কোম্পানিগুলিতে নতুন নীতি বা বিমা প্রবর্তন, তার বিস্তার বা কোম্পানির মুনাফার কথা মাথায় রেখে অ্যাকচুয়ারিদের কাজ করতে হয়। নতুন প্রোডাক্ট আনা এবং তার দাম সম্পর্কে ধারণা, বিমা সম্পর্কে সঠিক বাজার বা কাস্টমার নির্ধারণ, ইনশিওরেন্স প্রোডাক্টের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে আনা, কোম্পানির মুনাফা ও ব্যবসা বৃদ্ধি সম্পর্কে সঠিক পথ দেখানো, ইনশিওরেন্স কোম্পানির সচ্ছলতার দিকে নজর দেওয়া প্রভৃতি নানা বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হতে পরে অ্যাকচুয়ারিদের। একটি সমস্যাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নজর রাখার ক্ষমতা, একটি বিষয় নিয়ে একাধিক উপায় তৈরির ক্ষমতা, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক স্বচ্ছলতার চিন্তাভাবনাকে এক ছাতার তলায় আনার দক্ষতা, উপযুক্ত ব্যবসায়িক চিন্তাধারা, অঙ্ক ও স্ট্যাটিস্টিক্সকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানির উন্নয়নে সচেষ্ট থাকতে হয় অ্যাকচুয়ারিদের।

কোথায় করানো হয়?

আ্যকচুরিয়াল ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া, মুম্বাই-এর পাশাপাশি ভারতের একাধিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকচুরিয়্যাল সায়েন্স সম্পর্কে পড়ানো হয়ে থাকে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, ইনশিওরেন্স ইনস্টিটিউট অব মুম্বই, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মুম্বই, ইউনিভার্সিটি অব পুণে, ইনস্টিটিউট অব ইনশিওরেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট হায়দ্রাবাদ এরকম বহু প্রতিষ্ঠানে এই কোর্স করানো হয়ে থাকে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই অবশ্য পোস্ট গ্র‌্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়।

পেশায় চাহিদা কেমন?

সরকারি তথা বেসরকারি একাধিক সংস্থায় অ্যাকচুয়ারিদের কাজের সুযোগ গত কয়েক দশকে অনেকাংশে বেড়েছে। এলআইসি, ব্যাঙ্ক, স্টক এক্সচেঞ্জ, অন্যান্য আর্থিক সংস্থাগুলিতে অ্যাকচুয়ারি হিসাবে কাজের সুযোগ থাকছে। এছাড়াও ইনশিওরেন্স এজেন্ট, ডেভেলপমেন্ট অফিসার, সংস্থাগুলিতে জোনাল ম্যানেজার হিসাবে কাজের জায়গা তৈরি হয়। দেশি সংস্থাগুলি ছাড়াও বহুজাতিক সংস্থাগুলিতে অ্যাকচুয়ারি নিয়োগের দরকার হয়। অ্যাকচুয়ারিয়াল ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার থেকেও বিভিন্ন ন্যাশনাল ইনশিওরেন্স কোম্পানি, রাজ্য ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন বা অন্যান্য অনেক সংস্থায় কাজের জন্য সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও অ্যাকচুয়ারির উপর ফেলোশিপের কাজ করা যায়। উপার্জনের জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় পেশা হয়ে উঠেছে অ্যাকচুয়ারি।

একনজরে

১) অ্যাকচুয়ারি বলতে এমন এক দক্ষ কর্মীকে বোঝায়, যিনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ম্যাথমেটিক্স, প্রব্যাবিলিটি, স্ট্যাটিস্টিক্স-এর সহায়তায় আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির খাদ থেকে সদর্থক সম্ভাবনার অভিমুখ নির্দেশ করেন।

২) ম্যাথমেটিক্যাল বিভিন্ন বিষয়ের পাশপাশি বিভিন্ন ধরনের বিমা, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, পেনশন, কর্মচারীদের প্রদেয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, বিজনেস/ফিনান্সিয়াল ইকোনমিক্স সম্বন্ধেও দক্ষ হতে হয়।

৩) আন্ডারগ্র‌্যাজুয়েট স্তরের জন্য সাধারণত ১০+২ বা সমতুল যোগ্যতা চাওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাঠক্রমে অঙ্ক এবং ইংরেজি বিষয় থাকতে হবে। ম্যাথমেটিক্স, স্ট্যাটিস্টিক্স, ইকোনমিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ (ফিনান্স) নিয়ে গ্র‌্যাজুয়েশন বা পোস্ট গ্র‌্যাজুয়েশন ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।

৪) আর্থিক সংস্থা বা বিমা কোম্পানিগুলি নতুন নীতি বা বিমা প্রবর্তন, তার বিস্তার বা কোম্পানির মুনাফার পাশাপাশি নতুন প্রোডাক্ট আনা এবং তার দাম সম্পর্কে ধারণা, নতুন প্রোডাক্ট বা বিমা সম্পর্কে সঠিক বাজার বা কাস্টমার নির্ধারণ প্রভতি বিষয়ে নজর রাখতে হয়।

৫) এলআইসি, ব্যাঙ্ক, স্টক এক্সচেঞ্জ, অন্যান্য আর্থিক সংস্থাগুলিতে অ্যাকচুয়ারি হিসাবে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।

Exit mobile version