ইন্টারন্যাশনাল প্লাস্টিক ব্যাগ ফ্রি ডে

schedule
2020-07-03 | 18:00h
update
2020-07-03 | 18:00h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

এই মুহূর্তে পৃথিবী যে-যে বিষয়ে ভয়ঙ্কর দূষণের শিকার তার অন্যতম হল প্লাস্টিক। লজেন্সের প্যাকেট থেকে শুরু করে বিশাল ইলেক্ট্র্রনিক দ্রব্যও প্যাকেটজাত হয়ে একদেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্লাস্টিক অন্যতম ব্যবহার্যদ্রব্য হয়ে ওঠার সঙ্গে পৃথিবীকে এক ভয়ঙ্কর দূষণের সামনে ফেলে দিয়েছে। টক্সিন রাসায়নিক মিশ্রণে তৈরি এই প্লাস্টিক শুধু পরিবেশন দূষণ নয় মানবজীবনে ভয়াবহ আকার নিতে চলেছে, যদি না মানব সমাজ আরও বেশি সচেতন হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রের তলদেশ, হিমালয়েও, সবখানেই আজ এই প্লাস্টিক প্রতিনিয়ত এক ভয়ঙ্কর বার্তা প্রেরণ করে চলেছে। আর তারই একটি ব্যাপকতম উপকরণ হল প্লস্টিক ব্যাগ বা থলে।।
প্লাস্টিক ব্যাগ আজ আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এক তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতি মিনিটে এক মিলিয়ন বা দশ লক্ষ প্লাসটিক ব্যাগ ব্যবহার হয়ে চলেছে সারা বিশ্বে। গড়ে প্রতি মানুষ বছরে পাঁচশোর বেশিবার একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করেন। সারা বিশ্বে ৩৪ লক্ষ টন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ প্রস্তুত হয় ও তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেলে দেওয়া হয়। মজার ব্যাপার এখানেই যে, গড়ে ২৫ মিনিটের জন্য যে ব্যাগ আমরা ব্যবহার করে ফেলে দিই সেই প্লাস্টিক কিন্তু সঙ্গে-সঙ্গ বিনষ্ট হয় যায় না। বিজ্ঞানীদের অভিমত, একটা প্লস্টিক ব্যাগ বা বোতল প্রায় অবিকৃত অবস্থায় আড়াই শো থেকে পাঁচশো বছরও থেকে মেতে পারে। অর্থাৎ তার বিনাশ হয় না শীঘ্র। আর চমকে রাবার মতো ব্যাপার হল, প্রতি বছর ২ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ মানুষ ব্যবহার করেন এবং ফেলে দেন। আর এই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকই জমা হয় ভূপৃষ্ঠে বা গিয়ে পড়ে সমুদ্রে। তৈরি হওয়া প্লাস্টিকের ৮০ শতাংশ সমুদ্রের জলে ভেসে থাকে।
Advertisement

এই ভেসে থাকা প্লাস্টিক ব্যাগ, বোতল নানা ভাবে সমুদ্রকে দূষণ ঘটানোর পাশাপাশি সমুদ্রের প্রাণিকূলের এক বিপন্নতার কারণ হয়ে উঠেছে। ফিলিপিন্সে বিশাল তিমির পেট থেকে যেমন বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বেরিয়েছে, অসংখ্য প্রজাতির মাছ প্লাস্টিকের কারণে বিলুপ্তির পথে। এক কথায়, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যই আজ এক অসহায়তার সম্মুখীন। সেই সঙ্গে দিন-দিন বাড়ছে সমুদ্রজলের দূষণ। প্রায় ৩১ ধরনের জলজ প্রাণীর বিপর্যয় ডেকে এনেছে বা বিলুপ্তি ঘটিয়েছে। এই প্লাস্টিক ব্যাগ বা অন্যান্য প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের কারণে ২৫০ প্রজাতির জলজ প্রাণী সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। তার প্রভাব মনুষ্যজীবনেও এসে পড়ছে।
প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের দূষণ নিয়ে সারা বিশ্বেই গবেষণার অন্ত নেই। বহু দেশে আজ সেই ব্যাগ বর্জনের ভাবনা শুরু করেছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। গত শতকের ষাটের দশকের শেষ থেকে এই ব্যাগের প্রচলনের আধিক্য দেখা দেয়। সব থেকে বেশি প্রচলন হয়েছিল চিনদেশে। তারা এখন সেই ব্যবহার কমিয়ে নিষিদ্ধের পথে হাঁটছে। এখনও প্রতি বছর  আমেরিকায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ, জার্মানিতে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ, ব্রাজিলের মতো দেশে ১ কোটি ২০ লক্ষ টন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। ভারতও পিছিয়ে নেই।
প্লাস্টিক দূষণ আজ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতোই ভয়াবহ। যদিও বিশ্বের বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহার করে কী ভাবে দূষণের বিষ থেকে মানব সমাজকে রক্ষা করা যায়। জাপান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের মতো দেশে বিশাল-বিশাল রিসাইক্লিন কারখানা বা প্লাস্টিক গার্বেজ হাব গড়ে উঠেছে। এমনকি কীট বা লার্ভার মাধ্যমেও গবেষণা চলছে।
বিশ্বের বহু দেশে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়েছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ২০০২ সাল থেকেই উদ্যোগ নেয়।পাশাপাশি, ইতালি, চিন, কেনিয়া, কঙ্গো সহ দক্ষিণ আফ্রিকাও তা নিষিদ্ধ করেছে। সিকিমে, হিমাচল প্রদেশেও প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ। কিন্তু দেশ বা রাজ্য নিষিদ্ধ করলেও বহু পর্যটকের অসচেতনতায় দূষণ ঘটে চলেছে। মানুষকে সচেতন হতেই হবে আগামী দিনের ভয়াবহতার কথা ভেবে। নিষেধাজ্ঞা মানতেই হবে।
আর মানুষকে সেই সূচেতনতার বার্তা দিতেই বেশ কয়েক বছর ৩ জুলাই তারিখটিকে  ইন্টারন্যাশনাল প্লাস্টিক ব্যাগ ফ্রি ডে হিসেবে পালন করে চলেছে। বলা হচ্ছে ব্রেক ফ্রি ফ্রম প্লাস্টিক। জীবনকে পলিথিন বা প্লাস্টিক মুক্ত করার স্লোগান নিয়েই ২০০৯ সালের ৩ জুলাই প্রথম এই দিনটির সূচনা হয়েছিল৷
                                                                                                                                   ভাস্কর ভট্টাচার্য
লাইভ টিভি দেখুন : https://chetana.tv/
বাংলার প্রথম এডুকেশনাল চ্যানেল
Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
21.04.2024 - 12:00:36
Privacy-Data & cookie usage: