অশোক চক্রবর্তী
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের পর উচ্চতর শিক্ষাক্রম বেছে নেবার জন্য কতগুলো বিষয় লক্ষ রাখা দরকার। মূলত নিজের প্রবণতা, দক্ষতা, ভালো লাগা-না-লাগা, বরাবরের রেকর্ড, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরামর্শ ইত্যাদি। কেরিয়ার কাউন্সেলিং, আইকিউ টেস্ট, আরও নানা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উপায়েও বেছে নেওয়া যায় শিক্ষাক্রম। যে বিষয়টি সেরা বিবেচিত হবে, সেই পথে এগনোর জন্য যা দরকার তা করতেই হবে, সমস্যা কিছু থাকলে তা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন, সমস্যা যদি আর্থিক হয় তাহলে টিউশনের কথা প্রথমেই ভাবা যেতে পারে, তাতে নিজের পুরনো পড়াশোনার চর্চা ও ফাঁকফোকর মেরামতের সুযোগ থাকে, শিক্ষা মজবুত হয়, আয়ও ভালোই হয়ে থাকে। নানান স্কলারশিপ, স্পন্সরশিপ, আর্থিক সহায়তা প্রকল্প, ব্যাঙ্কঋণ, এমনকি অসম্ভব না হলে সকালে কাগজবিলি-দুধ সাপ্লাই জাতীয় কয়েক ঘণ্টার কাজের চেষ্টাও করা যেতে পারে। যেমন সমস্যা তেমন সমাধান ভাবতে হবে, তা নিজের পড়াশোনার পরিপূরক হলে তো ভালোই, দেখতে হবে পড়াশোনায় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
শিক্ষাক্রম বাছার বিষয়ে গোড়ায় দুয়েকটা কথা খেয়াল রাখা দরকার। যেমন, সরকারি কোর্স, নামী-দামি প্রতিষ্ঠানের কোর্স পড়ার সুযোগ চাইলেই পাওয়া যায় না ঠিকই, তেমনই লক্ষ করার বিষয় হল, পছন্দের বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা যাঁরা মনে-মনে চান তাঁরা কোনো-না-কোনো বিকল্প উপায় বা বাইপাস ঠিক খুঁজে নেন। সহজ পথ বা শর্টকাটের চেষ্টা নয়। কারণ তাঁরা মূলত কাজের জন্য গড়ে উঠতে চান, শিক্ষাটা চান, মূলত সার্টিফিকেটের জন্য নয়। নিয়োগকর্তারাও কিন্তু প্রার্থিবাছাই করেন পাশ করার সার্টিফিকেট দেখে নয়, কর্মদক্ষতাবিচার করে। বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই, সরকারি চাকরিতেও। কর্মদক্ষতা বা উপযুক্ততার সামগ্রিক যাচাইয়ের জন্যই সুপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা হয় দরখাস্তের বয়ান থেকে শুরু করে লিখিত পরীক্ষা-স্কিল টেস্ট-ইন্টারভিউ-গ্রুপ ডিসকাশন ইত্যাদির ছাঁকনি-পম্পরা। তাই ভবিষ্যত কর্মজীবনের জন্য বা স্বপ্নের কাজটির জন্য তৈরি হতে হলে প্রস্তুতি দরকার নির্ভেজাল ভাবে— কাজের মধ্যে দিয়ে ক্রমশ বড় হতে চাইলে তো বটেই। আর, নিজে যে কাজটার জন্য সেরা হয়ে উঠতে পারেন সে-কাজের জন্য প্রস্তুতির সুযোগ চাইলে পাওয়া যাবেই। পেতেও হবেই।
# নিজের প্রবণতা, দক্ষতা, ভালো লাগা-না-লাগা, বরাবরের রেকর্ড, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরামর্শ/ কেরিয়ার কাউন্সেলিং/ আইকিউ টেস্ট/ আরও নানা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উপায়ে নিজেকে পর্যালোচনা>
# ডিগ্রি-ডিপ্লোমা অর্জনের লক্ষ্যে নয়, নিজের সেরা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিষয় বেছে নেওয়া, কারণ ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রেও নির্বাচিত হবেন সেরারাই>
# কোনোভাবেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া নয়, তাই ঠিক সেই কোর্সে সুযোগ না পেলে কোনো-না-কোনো বিকল্প উপায় বা বাইপাস খুঁজে এগোতে থাকা>
# কর্মজগতের প্রতিযোগিতায় সেরাদের মধ্যে থাকতেই হবে তাই চ্যালেঞ্জ-নিষ্ঠা-প্রতিযোগিতার পরিমণ্ডলই শিক্ষাজীবনের সেরা জায়গা, শর্টকাট-সুলভের প্রলোভন থেকে সাবধান>
# উদ্দেশ্য সিদ্ধির পথে কোনো সমস্যা থাকলে তা সুচিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে যখন যেমন দরকার।
আরেকটা কথা: চাকরির জন্য সার্টিফিকেট-ডিপ্লোমা-ডিগ্রি যে চাওয়া হয় তা কিন্তু ন্যূনতম শর্ত। বিপুল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অর্থাৎ আবেদন করার গেটপাস বা ছাড়পত্র মাত্র। তারপর কয়েক হাজারের মধ্যে কয়েকজনের চূড়ান্ত জায়গা দখলের লড়াইয়ে জয়-পরাজয় নির্ভর করে সত্যিকারের যোগ্যতা বা সামগ্রিক উপযুক্ততার ওপরেই। সত্যিকারের কাজের জন্য যেখানে লোক নেওয়া হয় সেখানে দয়ামায়ার কোনো জায়গা নেই। আমার চাকরির দরকারটা আমার কাছে যতই জীবন-মরণ সমস্যা হোক না কেন, কর্তৃপক্ষের দরকার তাঁদের নির্দিষ্ট কাজটির জন্য সেরা কর্মী।
এরকমই আরেকটা জরুরি তথ্য হল: সহজ, শর্টকাট, সুলভ এইসব ডিগ্রি-ডিপ্লোমার প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের দুনিয়ায় পরিচিত, কম-বেশি কালো তালিকাভুক্ত। তাই কাজের প্রয়োজনে যেখানে লোক নেওয়া হয় সেখানে ওই যোগ্যতার কদর বা কোনো দরই পায় না, বিশেষত বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে। সেই ডিপ্লোমা-ডিগ্রির আইনি বৈধতা থাকলে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দরখাস্ত করার বা পরীক্ষায় বসার সুযোগ হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু ওই পর্যন্তই। প্রতিযোগিতার দৌড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয় অচিরে।
তাই কাজের জন্য যদি কিছু শিখতে চান, বেছে নিতেই হবে পরিশ্রম ও নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ। তা যেখানে আছে সেখানে নিশ্চিত হতে পারেন যে, নির্বাচন নির্ভুল হয়েছে। শংসাপত্র যত সহজ যত সুলভ, ততই সন্দেহজনক, কাজের বাজারে মূল্যহীন। তা বহু টাকায় কেনা ডিগ্রিই হোক বা টোকাটুকি করে পাশ।