এক ট্র্যাজিক নায়ক- কার্ল শিল

schedule
2017-12-27 | 12:16h
update
2017-12-28 | 09:49h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

জীবনের রহস্যময় গোলকধাঁধায় একবার ঢুকলে আর রেহাই নেই। কতজন যে সেই রহস্যের কিনারা করতে গিয়ে দমছুট হয়েছেন, আবার কতজন সেখানে ঢুকে জয়টিকা পরে বেরিয়ে এসেছেন, তার কোনও লেখাজোখা নেই। কেউ বা পেয়েছেন নায়কের শিরোপা, কেউ বা রহস্য উন্মোচন করেও থেকে গিয়েছেন নিঃসঙ্গ, একাকী। সফল হয়েও কৃতিত্বের আস্বাদ জোটেনি তাঁদের। সেসব কাহিনির প্লট যেমন টানটান, তেমনই উদ্দীপক। আপনাদের সফরসঙ্গী করে সেসব কাহিনির অন্দরমহলে যাত্রা শুরু হল আমাদের। লিখছেন –
 গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় (সাংবাদিক, অধ্যাপক অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি)

সুইডেনের বিজ্ঞানী কার্ল শিল। একবার মাথায় পোকা নড়লে রক্ষে নেই। যতক্ষণ না সে পোকা বার করে তার ময়না তদন্ত শেষ করছেন ততক্ষণ তাঁর বিশ্রাম নেই। কত কী যে আবিষ্কার করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন প্রমিথিউস, সেই আগুন অবশেষে মানুষের করতলগত হল এই কার্ল শিলের দৌলতে। দেশলাই বাক্সে কাঠি ঘসে আগুন জ্বালানো তাঁরই উদ্ভাবন।

Advertisement

টাকা নেই, পয়সা নেই তবু কাজের বিরাম নেই। এভাবেই আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন আট-আটটি পদার্থের অস্তিত্ব-ক্লোরিন, ফ্লুরিন, ম্যাঙ্গানিজ, বেরিয়াম, মলিবডেনাম, টাংস্টেন, নাইট্রোজেন এবং সর্বোপরি অক্সিজেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। এ সবই তাঁর আবিষ্কার, কিন্তু নিয়তির এমনই পরিহাস যে একটির জন্যও জয়মাল্যের ভাগিদার তিনি হতে পারেননি। হয়, তাঁর আবিষ্কার সকলের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে, নাহয় যতদিনে তাঁর আবিষ্কারের কথা জানাজানি হল ততদিনে অন্য কেউ ওই একই পদার্থ আবিষ্কার করে সে কথা ফলাও করে ছেপে ফেলেছেন। শুধু কি এইসব পদার্থ? একাধিক যৌগও রয়েছে তাঁর আবিষ্কারের ঝুলিতে।অ্যামোনিয়া, গ্লিসারিন এবং ট্যানিক অ্যাসিডও তাঁর আবিষ্কার। ক্লোরিনের ব্যবহার কতরকম হতে পারে, সে কথাও তিনিই প্রথম বার করেছিলেন, কিন্তু হলে কী হবে। নেপোয় মারে দই। ১৭৭২ সালে তিনি বার করে ফেলেছেন জীবনদায়ী অক্সিজেনের অস্তিত্ব। তো?  বিভিন্ন জটিলতার কারণে সময়মতো সে আবিষ্কারের কথা প্রকাশই করে উঠতে পারলেন না। দু’বছর পরে জোসেফ প্রিস্টলি অক্সিজেনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে প্রকাশ করে দিতেই তাঁর নামের পাশে বসে গেল আবিষ্কর্তার নাম। ক্লোরিন দিয়ে যে রং থেকে ব্যাকটিরিয়া, সব গায়েব করে দেওয়া যায় এ কথা তিনিই জেনেছেন প্রথম। অথচ আজও ক্লোরিন আবিষ্কারের কৃতিত্বর সিংহভাগ খেয়ে ফেলেন হামফ্রি ডেভি। এমনকী পাঠ্যবইয়েও ডেভির নাম জ্বলজ্বল করতে থাকে।

পাকা রাঁধুনি যেমন রান্না করে খূশি হন না, চেখে দেখতে চান, স্বাদ কেমন হল। কার্ল শিলেরও স্বভাব ছিল সেরকম। কখনও পারদ, কখনও প্রাসিক অ্যাসিড (এও তাঁর আবিষ্কার) আবার কখনও মারণবিষ হায়ড্রোসায়ানিক অ্যাসিড পর্যন্ত জিভে চেখে দেখতে তাঁর আগ্রহের শেষ ছিল না। এই চেখে দেখাই শেষ পর্যন্ত তাঁর কাল হল। ১৭৮৬ সালে যখন তিনি মারা গেলেন, তখন তাঁর মৃতদেহের চারপাশে ছড়িয়েছিল বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ভর্তি শিশি, বোতল।

মাত্র তেতাল্লিশ বয়সে শেষ হয়ে গেল এক প্রতিভাধর বিজ্ঞানীর জীবন। হায় রে জীবন! পথপ্রান্তে পড়ে রইল জীবনের যা কিছু সঞ্চয়।

 

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
02.05.2024 - 00:18:12
Privacy-Data & cookie usage: