Site icon জীবিকা দিশারী

ওমর খৈয়াম, ৯৭১ বছর পরেও


বিশ্ব দেখা জামশেদিয়া পেয়ালা খুঁজি জীবন-ভর

ফিরনু বৃথাই সাগর গিরি কান্তার বন আকাশ-ক্রোড়।

জানলাম শেষ জিজ্ঞাসিয়া দরবেশ এক মুর্শিদে

জামশেদের এই জাম-বাটি এই আমার দেহ আত্মা মোর।

কবিতার এত শক্তি? পৃথিবীর অন্যতম একজন গণিতবিদ, দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীকেও হারয়ে কবি হয়ে সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করা সম্ভব? সেদিন ফিৎজেরাল্ড যদি তাঁর কবিতা পাঠকদের সামনে তুলে ধরতেন তাহলে তিনি হয়তো একজন বিখ্যাত গণিতবিদ, জ্যোর্তিবিজ্ঞানী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত হতেন। কিন্তু আজ তিনি সেই সব পরিচয়কে যেন একটু পেছনে ফেলে একজন সুরার কবি, প্রেমের কবি হয়েই বিশ্ববন্দিত। আশা করি আর বুঝতে অসুবিধে নেই কার কথা বলতে চাইছি। হ্যাঁ, তিনি পারস্যের কবি ওমর খৈয়াম। ইরান তখনও পারস্য হয়নি। সেই ইরানের নিশাসুর নামক এক গ্রামে এই প্রতিবাবান বালকের জন্ম। সেটা সেলজুকের যুগ। হিজরি পঞ্চম শতকের সময়। বাবা ছিলেন তাঁবুর কারিগর। এই কারিগরের ছেলেই একদিন বিশ্বকে জয় করবেন। জ্যামিতি তাঁর প্রিয় বিষয়। তাঁর ভাবনা থেকেই যেন জন্ম নিল জ্যামিতির ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের পদ্ধতি। সেকালের পণ্ডিতদের চোখ বড় করে দিল তাঁর প্রতিভা। কেউ-কেউ বলেন রেনেƒদেকার্তেরও নাকি তিনি আগে। গণিতের দ্বিপদী উপপাদ্য, বীজগণিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান তিনিই প্রথম করেন। আজ থেকে এত বছর আগে তাঁর গণিতের আবিষ্কার নিয়েই এগিয়ে চলেছি আমরা। জ্যামিতির নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি জ্যোতির্বিদ্যাতেও অসম্ভব প্রতিভার পরিচয় রেখেছিলেন। পারস্য পঞ্জিকা তৈরিতে তাঁর অবদান আজও স্বীকৃত। নানা রহস্য ভেদ করেও এহেন গণিতবেত্তা দার্শনিক সময় পেলেই লিখেছেন চতুষ্পদী কবিতা বা রুবাই। এই মণিমুক্তোকেই আমাদের নাগালে এনেছিলেন আরেক কবি ফিৎজেরাল্ড। তিনিই যেন ওমর খৈয়াম নামক সমুদ্র থেকে মুক্তে কুড়িয়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই মুক্তো নিয়েই আমরা নাড়াচাড়া করি। খৈয়ামের সেইসব কবিতাই যুগ-যুগ ধরে মানুষের অতল মনের অনুসন্ধানী জাহাজ যেন। দর্শন বা বিজ্ঞান দিয়ে যে ভাব তুলে ধরা যায় না, খৈয়াম যেন সেই ভাবই তুলে ধরেছিলেন তাঁর রুবাইয়ে। তাঁর খ্যাতি সুরার কবি হিসাবে। তাঁর খ্যাতি প্রেমের রুবাইয়াত হিসেবে। সেই বিশ্ববন্দিত বিস্ময়ের আজ জন্মদিন। পুরো নাম গিয়াসউদিন আবুলফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আলখৈয়াম নিশাপুরি। জন্ম ১৮ মে, ১০৪৮। মৃত্যু ৪ ডিসেম্বর ১১৩১।

Exit mobile version