করোনা ভাইরাস : কিছু খুঁটিনাটি তথ্য

1892
0
CORONA, General Knowledge,

বিশ্বজনীন মহামারীর আকার ধারণ করে জনমানবের অন্যতম ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছে করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে “প্যানডেমিক” আখ্যা দিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি, পর্যটন থেকে শুরু করে বাণিজ্য, উৎপাদন সমস্ত কিছুর উপর এক বিশাল ছাপ ফেলেছে এই সংক্রমণ।

দেখে নেওয়া যাক একনজরে এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত  কিছু আপডেটেড তথ্য

করোনা ভাইরাস কী? কোথা থেকে এল ?

লাতিন শব্দ করোনার অর্থ “ক্রাউন” বা “মুকুট “।  ১৯৬০ সালে প্রথম এই ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়, মূলত সংক্রমিত ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসাবে। মূলত স্তন্যপায়ী ও পক্ষী প্রজাতির দেহে এই গ্রুপ অব ভাইরাস সংক্রমিত হয়। এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মূলত SARS, MERS, COVID -19 সংক্রমণ বা রোগ হয়। সম্প্রতি এই ভাইরাসের যে প্রকারটি সবথেকে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে তার নাম দেওয়া হয়েছে COVID – 19।

এটি শরীরে কী ধরনের সমস্যা তৈরি করে ?

করোনা ভাইরাস মূলত শ্বাসনালী বা শ্বাসযন্ত্র সংক্রমণকারী ভাইরাস। স্বাভাবিকভাবেই এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা, কাশি, সর্দি হয়।  সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণে যে সমস্যাগুলি হয়, অনেকটা সেইরকম সমস্যা এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে হয় বলেই, চটজলদি বুঝে ওঠা মুশকিল দেহে নির্দিষ্ট ওই ভাইরাস সংক্রমিত কিনা। অবশ্য প্রাণী বিশেষে এর সংক্রমণ ভিন্ন হয়। যেমন গরু বা শুয়োর প্রাণীতে এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে তাদের ডায়েরিয়া দেখা দেয়।

কীভাবে ছড়াচ্ছে ?

করোনা ভাইরাস হল Respiratory Tract Infectious একরকম RNA ভাইরাস । অর্থাৎ এই ভাইরাসের মধ্যে জেনেটিক মেটিরিয়াল রয়েছে। যার ফলে এ বংশবৃদ্ধি করতে পারে।  যেহেতু এই ভাইরাসে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটে তাই হাঁচি-কাশি থেকে এই ভাইরাস অন্যের দেহে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ভাইরাসের প্রোটিন স্পাইক কোষের ভিতরে ঢুকতে সাহায্য করে।

কতগুলি দেশ ও অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত ?

অ্যান্টাকর্টিকা বাদে প্রায় পৃথিবীর সব মহাদেশে এবং সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর ১২৭টি দেশে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।

আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কত ?

এখনো পর্যন্ত (শুক্রবার, ১৩ মার্চ পর্যন্ত) সারা বিশ্বে মোট ১,৩৪,৮২৮ জন মানুষ এই করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যে ৪,৯২৮ জন মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত হওয়ার পরেও সুস্থ হয়েছেন ৭০,৩৯৫ জন। খুব সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন ৫,৭৫৮ জন। ভারতে ৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ১ জন নিহত হয়েছেন।

কোথা থেকে এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ২০১৯-২০২০ শুরু ?

মধ্যচিনের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের প্রভাব পরে। ২৩ জানুয়ারি, ওই শহরে সমস্ত পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। চিনের বাইরে প্রথম ফিলিপাইন্সে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ঘটে। ৩০ জানুয়ারি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) বিশ্বব্যাপী “হেলথ এমার্জেন্সি” ঘোষণা করে। গত ১১ মার্চ, ২০২০ হু এটিকে “প্যানডেমিক” বলে ঘোষণা করে।

সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ?

এই সংক্রমণের ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চিন, ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও আমেরিকা।

কীভাবে পরীক্ষা করা হয় ?

হু(WHO)বেশ কিছু প্রটোকল তৈরি করেছে এই সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য। যার মধ্যে সবথেকে বেশি গ্রহণযোগ্য মূলত reverse transcription polymerase chain reaction (rRT-PCR) । নাকের ভেতরের অংশ, গলা, থুতু স্যাম্পেল থেকে এই সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয়। ফল আসতে কয়েক ঘন্টা থেকে ২ দিন লাগতে পারে।

ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আছে কি ?

নির্দিষ্ট কোনও ভ্যাকসিন বা মেডিসিন এই করোনাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার জন্য তৈরি হয়নি। তবে কোরিয়ান ও জাপানি কিছু প্রতিষ্ঠান কয়েকটি অ্যান্টিভাইরাস তৈরি করেছে। কয়েকটি প্রদেশে এগুলি গ্রহণযোগ্য হলেও পৃথিবীর সর্বত্র গ্রহণযোগ্য নয়। গবেষণার মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রতিষেধক তৈরি করতে এখনো একটা বছর লাগবে বলে জানা গিয়েছে। করোনা হলে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তুলনামূলক মৃত্যুসম্ভাবনা এরকম:

এবোলা ২৫.৯০%, বার্ড ফ্লু  ৫০%, সার্স ৯.৬%, ডেঙ্গু ১%, করোনা ভাইরাস ১-২% (চিনে মৃত্যুহার প্রায় ২.৫%)। ক্রমশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা-চিকিৎসা-সচেতনতার উন্নতির ফলে মৃত্যুহার‌ও কমছে। সাধারণত শিশু থেকে ১৮ বছরের নিচর বয়সীরা আক্রান্ত হয় না, হলেও নিদেন ফ্লু জাতীয় পর্যায়ে হতে পারে।

ইবোলা, সার্স-এর পর বিশ্বব্যাপী সর্ববৃহৎ সংক্রমণ হিসাবে ক্ষতি করে চলেছে করোনা। সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সতর্কতা এই বিশ্বব্যাপী মহামারীকে প্রতিরোধ করতে পারবে বলেই সমস্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

 

ক্লিক করে দেখে নিন কোন কোন সরকারি চাকরির আবেদন চলছে : –

 

CORONA, General Knowledge