কল সেন্টারগুলির ২৪ ঘণ্টা সরকারি-বেসরকারি পরিষেবায় বাড়ছে কাজের সুযোগ

2356
0
Call Centre Job

যখন দরকার, এমনকি মাঝরাতেও একটা ফোন করলেই হল। ৭x২৪। অমুক ট্রেন কত লেট করছে, মোবাইলের ফোনকলে কেন বেশি পয়সা কাটা হল, ব্যাঙ্কের অমুক পরিষেবা কীভাবে পাওয়া যাবে, ফ্রিজ বা এসি বা ওয়াটার ফিল্টার ইত্যাদি-ইত্যাদির কোন মডেলে কী সুবিধা— হাজারো ধরনের পণ্য-পরিষেবা বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া বা সমস্যা বা অভিযোগ জানানো, ট্রেন-প্লেন ইত্যাদির রিজার্ভেশন/বুকিং, কোনো নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহায়তা যখন যেমন চাই মানুষ এখন ঘরে বসেই তৎক্ষণাৎ ফোন তুলে নিতে পারেন। অপর প্রান্ত থেকে ফোনালাপেই সঠিক নির্দেশিকা বা সমাধান দেওয়া হয় উপভোক্তাদের। গত কয়েক দশকে মৌখিক এবং অনেক ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সহায়তার জন্য কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস ও মার্কেটিংয়ের সূত্রে এক বিশাল কাজের জগৎ তৈরি হয়েছে কল সেন্টারের মাধ্যমে। তৈরি হয়েছে বিপুল কর্মসংস্থান, বিশেষত বিপিওর হাত ধরে। আন্তঃরাজ্য বা আন্তর্দেশীয় যোগাযোগ এবং পরিষেবার জন্যেও কল সেন্টারের সহায়তা আজ অপরিহার্য। শেষ দশ বছরে এই ধরনের কাজের চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি বা সুযোগ না থাকলে অথবা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পরেই অর্থ উপার্জনের তাগিদ প্রবল হলে মুশকিল আসান হতে পারে এই পেশায়।

কল সেন্টার জব কী?

যে-কোনো ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিজস্ব প্রোফাইল, প্রোডাক্ট বা পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য, নতুন স্কিম সংক্রান্ত তথ্য উপভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে বা পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে কারিগরি-প্রযুক্তিগত সমাধান, বিজনেস ডিলিং ইত্যাদি সমস্ত কিছুর ক্ষেত্রেই কোম্পানি এবং তার উপভোক্তা উভয়ের জন্যেই যোগসূত্র হিসাবে কল সেন্টার এগজিকিউটিভরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন করেন। টেলিকম ফেসিলিটি, এক বিশাল ডেটা বেস এবং ইন্টারনেট সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে পরিষেবা দিয়ে থাকেন কল সেন্টার পার্সোন্যালিটিরা। কোম্পানির ডেস্ক হিসাবে কাজ করতে হয় এই কাস্টমার কেয়ার সেন্টারকে। অনেক নামী-দামি তথ্য-প্রযুক্তু সংস্থা নিজস্ব কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস ইউনিট তৈরি করে রেখেছে অন্য কোম্পানিগুলিকে সহায়তা করার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই, কলসেন্টার ও তার কাজের জায়গা তৈরি হয়েছে অনেক বড় কোম্পানির অঙ্গ হিসাবে, স্বতন্ত্র সংস্থা হিসাবেও।

যোগ্যতা কেমন লাগে?

মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক যোগ্যতাতেই এই পেশায় আসা যায়। তবে এই পেশার সবথেকে প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু হল কণ্ঠস্বর ও বলিয়ে-কইয়ে গুণ। অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকলেও উন্নতমানের কমিউনিকেশন স্কিল থাকলে পেশায় উন্নতি করা সম্ভব। দুটি বা তিনটি ভাষায় পরিষ্কার, স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গিতে কথা বলার দক্ষতা তৈরি করতে হবে। নিজের কথা বা নির্দেশ কাস্টমারের বোধগম্য করা উচিত, ঠিক তেমনই কাস্টমারের বক্তব্য শুনে, বুঝে চটজলদি উত্তরপ্রদানের দক্ষতা তৈরি করতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে বারংবার বিভিন্ন ধরনের কাস্টমারদের সুবিধামাফিক বিষয়ে কাজ করার জন্য নিজের মানসিক স্থিতাবস্থার দিকেও নজর দিতে হবে। মাথা ঠান্ডা রেখে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার মানিসকতা, দিনে-রাতে যে-কোনো সময়ে কাজের জন্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কখনও-কখনও কাজ করতে হতে পারে পারে একাধিক শিফটেও। অনেক সময় পেশার চাহিদায় এই কাজের জগতে এসেও অনেক প্রার্থী বছরানুক্রমে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, তাই পেশার জগতে আসার আগে ভার্বাল কমিউনিকেশন অর্থাৎ মুখে-মুখে বাক্যালাপের মাধ্যমে পরিষেবা প্রদানের কাজের জন্য দৃঢ় আত্মবিশ্বাস তৈরি করা দরকার। এর বাইরে কম্পিউটারের গোড়ার জ্ঞান ও টাইপিং দক্ষতা থাকাও প্রয়োজন।

কী রকম কোর্স রয়েছে?

এই পেশার জগতে আসার জন্য নিজের মাতভাষা ছাড়াও অন্য দুয়েকটি যেমন ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায়  অনর্গল কথাবার্তার দক্ষতা তৈরি করা দরকার। কল সেন্টার বা বিপিওগুলিতে রিজিওনাল ভাষার বাইরেও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজিকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ইংরেজিতে ভালো কথা বলার দক্ষতা তৈরির জন্য স্পোকেন ইংলিশ-এর ট্রেনিং নেওয়া যেতে পারে। স্পোকেন ইংলিশ-এর সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। এখনকার দিনে আলাদা করে কল সেন্টার জবের জন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং সেন্টার তৈরি হয়েছে। পেশার জগতে এই ধরনের কোর্সও যথেষ্ট উপযোগী।

কোথায় পড়া যেতে পারে?

স্পোকেন ইংলিশ নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য কলকাতায় সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান আছে। রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইন্দো-আমেরিকান সোসাইটি, রবীন্দ্রভারতী বা যাদবপুর ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেও স্পোকেন/কমিউনিকেটিভ ইংলিশের কোর্স করানো হয়। সরাসরি কল সেন্টার জবের জন্য ট্রেনিং নিতে হলেও এরকম ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে মনে রাখতে হবে, এই ধরনের পেশায় কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণে ফ্রেশারদেরই সুযোগ দেওয়া হয়। ফ্রেশারদের সুযোগ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রোফাইল বা চাহিদা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করে নিজেদের উপযোগী ট্রেনিং দিয়ে নেয়।

কী ধরনের কাজ রয়েছে?

বিভিন্ন ধরনের বা কজের কল সেন্টার রয়েছে। ইনবাউন্ড-আউটবাউন্ড, ডোমেস্টিক বা ইন্টারন্যাশনাল এরকম ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। ডোমেস্টিক-এর ক্ষেত্রে সাধারণত রাজ্য বা দেশের কাস্টমার বা উপভোক্তাদের সার্ভিসিং প্রদানের কাজ হয়ে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল-এর ক্ষেত্রে বাইরের দেশের উপভোক্তাদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য হেলপ ডেস্ক তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানির নিজস্ব হেলপ ডেস্ক থাকে, আবার অনেক ক্ষেত্রে এজেন্সি মারফত সাপোর্ট দেওয়া হয়। এর জন্য বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা নেয়।

কোম্পানিগুলিতে প্রথম ফ্রেশার হিসাবে নিয়োগ হওয়ার পর কল সেন্টার অপারেটর বা কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ হিসাবে কাজ করা যেতে পারে। কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একটি কল সেন্টার অপারেটর টিমের লিডার হিসাবে উন্নীত হয়ে কল সেন্টার সুপারভাইজার বা ম্যানেজার পদে বা কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে অপারেটরদের কল রিসিভিং টার্গেটও দিয়ে দেওয়া হয়। কাস্টমার বা কনসিউমারদের সন্তুষ্টি বিধানের উপর কর্মীদের কাজের পারফরম্যান্স রিপোর্ট তৈরি হয়, যেটা তাঁদের পদোন্নতিতে পরবর্তীকালে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে কল সেন্টার সুপারভাইজার পদে উন্নীত হয়ে গেলে কমিউনিকেশনের পাশপাশি, সার্ভিসিং এবং ওরিয়েন্টেশন-এর দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। যেহেতু মৌখিক কমিউনিকেশনের মাধ্যমে কাস্টমারদের সমস্যা সামধানে সহায়তা করা হয়, সেহেতু কাস্টমাররা কী ধরনের সমস্যামূলক প্রশ্ন করতে পারেন, সে ব্যাপারে আগে থেকেই প্রস্তুত থেকে, আগে থেকেই সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন।

পেশায় চাহিদা কেমন?

একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই এদেশে কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসমূলক কাজের প্রসার ঘটেছে। যেটা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এক বিশাল কর্মজগত সৃষ্টি করেছে যুবক-যুবতীদের জন্য। কলেজ পড়ুয়ারা বা দূরশিক্ষায় পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা এই রকম পেশাকে বেছে নিচ্ছেন সাময়িক পেশা হিসাবে। যে-কোনো ধরনের ব্যাঙ্কিং, প্রোডাক্ট নির্ভর কোম্পানি, সার্ভিসিং এজেন্সি, অনলাইন মার্কেটিং, রিজার্ভেশন, মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি, ইনশিওরেন্স কোম্পানি ইত্যাদি সরকারি ক্ষেত্রেও হেল্প ডেস্ক বা ইনফরমেশন ডেস্ক রাখা হচ্ছে উপভোক্তাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য। এর বাইরে বিভিন্ন আইটি কোম্পানিগুলিও নিজস্ব বিপিও তৈরি করে থার্ড পার্টি হিসাবে বিভিন্ন জাতীয়-বহুজাতিক সংস্থাকে সহায়তা প্রদানের জন্য কল সেন্টার এগজিকিউটিভ নিয়োগ করছে অনবরত। স্বাভাবিকভাবেই, এই পেশায় কীরকম চাহিদা সেটা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের কমিউনিকেশন স্কিলে দক্ষ হয়ে উঠতে পারলে রাজ্যে, রাজ্যের বাইরে অজস্র সুযোগ খোলা রয়েছে এই পেশায় আসার জন্য।

একনজরে

১) যে-কোনো ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিজস্ব প্রোফাইল, প্রোডাক্ট বা পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য, নতুন স্কিম সংক্রান্ত তথ্য উপভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে বা পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে কারিগরি-প্রযুক্তিগত সমাধান, বিজনেস ডিলিং ইত্যাদি সমস্ত কিছুর ক্ষেত্রেই কোম্পানি এবং তার উপভোক্তা উভয়ের জন্যেই যোগসূত্র হিসাবে কল সেন্টার এগজিকিউটিভরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২) এই পেশার সবথেকে প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু হল কণ্ঠস্বর ও বলিয়ে-কইয়ে গুণ। অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকলেও উন্নতমানের কমিউনিকেশন স্কিল থাকলে পেশায় উন্নতি করা সম্ভব। দুটি বা তিনটি ভাষায় পরিষ্কার, স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গিতে কথা বলার দক্ষতা তৈরি করতে হবে।

৩) পেশায় কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণে ফ্রেশারদেরই সুযোগ দেওয়া হয়। ফ্রেশারদের সুযোগ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রোফাইল বা চাহিদা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করে নিজেদের উপযোগী ট্রেনিং দিয়ে নেয়।

৪) কোম্পানিগুলিতে প্রথম ফ্রেশার হিসাবে নিয়োগ হওয়ার পর কল সেন্টার অপারেটর বা কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ হিসাবে কাজ করা যেতে পারে, কল সেন্টার সুপারভাইজার পদে উন্নীত হয়ে গেলে কমিউনিকেশনের পাশপাশি, সার্ভিসিং এবং ওরিয়েন্টেশন-এর দিকেও খেয়াল রাখতে হয়।

৫) হিসাবে। যে-কোনো ধরনের ব্যাঙ্কিং, প্রোডাক্ট নির্ভর কোম্পানি, সার্ভিসিং এজেন্সি, অনলাইন মার্কেটিং, রিজার্ভেশন, মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি, ইনশিওরেন্স কোম্পানি ইত্যাদি সরকারি ক্ষেত্রেও হেল্প ডেস্ক বা ইনফরমেশন ডেস্ক রাখা হচ্ছে উপভোক্তাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য।