Site icon জীবিকা দিশারী

কাজী নজরুল ইসলাম

Nazrul Islam

জন্ম অধুনা পশ্চিম বর্ধমানের চুরুলিয়ায় ২৪ মে ১৮৯৯। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম। বাবা ছিলেন ইমাম। কিন্তু ছোটবেলায়ই পিতৃহীন নজরুল নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়ে ওঠেন। তাঁর বিক্ষুব্ধ জীবনে নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে যেতে হয়েছে। মক্তব, মাদ্রাসায় পাঠ নেওয়ার পাশাপাশি অল্প বয়স থেকেই কোরান, হাদিস প্রভৃতি পড়তে শুরু করেন। দারিদ্যের কারণেই মাঝে-মাঝেই পড়ায় ছেদ ঘটে। এমনকী কিশোর বয়সে একটি পাঁউরিুটির কারখানায় কাজ করে পরিবারকে দেখতে হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনায় ছিল প্রবল আগ্রহ। সংস্কৃত পড়তেও ভালবাসতেন। ভারতীয় পুরাণ চরিত্রদের প্রতি ছিল আকর্ষণ। ছোটবেলায় শকুনি বধ, যুধিষ্ঠির পালা, কর্ণ, কালিদাস প্রভৃতি পালা লিখে নাটক করার কথাও জানা যায়। চুরুলিয়া থেকে এক সময় বাংলাদেশে যান পড়াশোনার জন্য। ১৯১৪ সালে বর্তমান বাংলাদেশের দরিরামপুরে যে স্কুলে পড়েছিলেন সেখানেই আজ তাঁর নামে গড়ে উঠেছে কাজি নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবেই বাংলা সরকার তাঁকে স্কীকৃতি দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন। দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়ে ১৮ বছর বয়সে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দেন। নজরুল তাঁর বিক্ষুব্ধ জীবনের মধ্যেই সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি ভাষা শিখেছিলেন এবং গভীর অনুরাগের সঙ্গে পাঠ করেছিলেন। এক সময় হিন্দুস্থানি ধ্রুপদী সগীত বিষয়েও গভীর চর্চা করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাউন্ডুলে স্বভাবের এই কিশোর কবিয়াল বা ‘লেটোর দল’ দলে নাম লিখিয়ে বিভিন্ন আসরে গান গেয়ে বেড়াতেন। পরবর্তী কালে ‘বিদ্রোহী কবি’ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামি সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। স্বদেশি যুগে রাজরোষে তাঁর লেখা বই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোনো ধর্ম তিনি বিশ্বাস করতেন না। বাউন্ডুলের আত্মকাহিনি তাঁর প্রথম লেখা। তাঁর রচিত অসংখ্য গানও দুই বাংলায় আজও সমান জনপ্রিয়। এক সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সাক্ষাতের পর বলেছিলেন আমি কোনো ঠাকুর মানি না কিন্তু আজ দেখলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর ছিল এতটাই প্রগাঢ় শ্রদ্ধা। রবীন্দ্রনাথের মতোই তিনি অসংখ্য গান লিখে নিজস্ব ধারা বহন করেছেন যা আজ নজরুলগীতি নামে পরিচিত। এই মহান কবিকেই বাংলাদেশ সরকার সম্মান জানিয়েছেন জাতীয় কবি বলে। এই বাংলায়ও তাঁর নামে আসানসোলে গড়ে উঠেছে কাজি নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি। এমনকি দুর্গাপুরের অন্ডালে বিমান বন্দরও তাঁর নামে নামাঙ্কিত। একই কবির নামে দুই দেশে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করার মতো। তাঁর ১১৯ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসানসোলে গড়ে ওঠা নজরুল ইউনিভার্সিটির সাম্মানিক ডি লিট প্রদান এবছরই।

Exit mobile version