স্কুল বা বিদ্যালয় বলতেই যে বিষয়গুলি প্রথমেই মাথায় আসে তা হল— স্কুল রুটিন, হোম টাস্ক, ব্ল্যাক বোর্ড, জীবনের কিছু আদর্শ মানুষদের শিক্ষক হিসাবে পাওয়া এবং অবশ্যই ছুটির ঘণ্টা। কিন্তু এই ঘেরাটোপের বাইরেও যে শিক্ষালাভ সম্ভব এবং এই চেনা গণ্ডির বাইরে গিয়েও যে বিশ্বমানের বিদ্যালয় হতে পারে, সেটা প্রায় একশো বছর আগেই দেখিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর মাধ্যমে। আমাদের ভারতে এরকম ধরনের ব্যতিক্রমী কিছু স্কুল বা বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলি গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে অন্যরকম শিক্ষাঙ্গনের উদহারণ তুলে ধরেছে আমাদের সামনে। এরকম কতগুলি স্কুলের বিবরণ এখানে তুলে ধরা হল।
লোকটাক এলিমেন্টারি ফ্লোটিং স্কুল: ভূগোলে অনেকদিন আগেই পড়া হয়ে গেছে, ভারতের সবথেকে স্বচ্ছ জলের হ্রদ হল লোকটাক হ্রদ। এই লোকটাক হ্রদকে মণিপুরের লাইফলাইন বলা হয়। প্রচুর মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে এই হ্রদের উপর। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থাও। এই হ্রদের নিকটবর্তী এলাকাগুলিতে এক বিপুলসংখ্যক মানুষ মৎস্যজীবী। সেই অনেক পরিবার থেকেই ঘরের বাচ্চাদের দূরে স্কুলে পাঠানো সম্ভব নয়। সেকারণে লোকটাক হ্রদের উপরেই ভাসমান স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে এই স্কুলছুট বা স্কুলের গণ্ডির বাইরে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। একটি এনজিওর সহায়তায় অল লোকটাক লেক ফিশারম্যান ইউনিয়ন এই প্রাইমারি স্কুল গড়ে তুলেছে। আপাতত ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে এই ছোট স্কুল তার কাজ শুরু করেছে।
দ্য ট্রেন প্ল্যাটফর্ম স্কুল: ট্রেনে চলতে-ফিরতেই দেখা যায় প্ল্যাটফর্মের ধারে প্রচুর ছেলে-মেয়ে পড়াশুনা তো দূরের কথা সামান্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। ফলত, এখান থেকেই এইসব বাচ্চাদের অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়ে থাকে। সেই কথা মাথায় রেখে ১৯৮৫ সালে একজন স্কুল টিচার ইন্দরজিৎ খুরানা ট্রেনের প্ল্যাটফর্মের উপরেও নাচ, গান, নাটক, ট্রিক্স-এর মাধ্যমের এই সমস্ত বাচ্চাদের আকর্ষণ করে কিছু শেখানোর উদ্দেশ্যে প্ল্যাটফর্ম স্কুল চালু করেন। বর্তমানে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে ১০টি স্টেশনে প্রায় ৭০০ বাচ্চাদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয় এভাবে।
ড্রুক পদ্মা কর্পো স্কুল: থ্রি ইডিয়টস সিনেমাটি কার না দেখা? লাদাখ-এর সেই স্কুলটার কথা এখন প্রায় সবারই মনে আছে। স্কুল বিল্ডিংটিকেই তৈরি করা হয়েছে ভূমিকম্পরোধক, সৌরশক্তি সম্পন্ন। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এক অন্যরকমভাবে পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে এই স্কুলে। ওরকম প্রতিকূল পরিবেশেও বৌদ্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা গড়ে তুলছে তাদের ভবিষ্যৎ।
এয়ারপোর্ট স্কুল, আমেদাবাদ: লেক হল, প্ল্যাটফর্ম হল, এবার বলা যাক এয়ারপোর্ট স্কুলের কথা। হ্যাঁ, এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার কর্মীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করার জন্য সিবিএসই বোর্ডের অনুমোদনে স্কুল তৈরি করা হয়েছে। আমেদাবাদ এয়ারপোর্টে এয়ারপোর্ট অথরিটির উদ্যোগে অ-লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয় ১৯৭৭ সালে।
কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স: ভিন্নধরনের স্কুলের কথা বলতে গেলে অবশ্যই এই স্কুলের কথাও বলতে হয়। ১৯৯৩ সালে মাত্র ১২৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই সম্পূর্ণ অবৈতনিক আবাসিক স্কুলটি। কিন্ডার গার্টেন থেকে শুরু করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত সমস্ত স্তরেই পড়াশুনা করানো হয়। যেখানে খাওয়া-দাওয়া, থাকা, হেলথ কেয়ার, ভোকেশনাল ট্রেনিং সমস্ত রকম সুবিধাই দেওয়া হয় সমাজের পিছিয়ে পড়া বাচ্চাদের জন্য। এখন ছাত্রসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। ওড়িশার প্রত্যন্ত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের থেকে বেছে নেওয়া হয় এদের।