Site icon জীবিকা দিশারী

কী কথায় কী কথা

Ki kathaya Ki katha Picture

থ্রি চিয়ার্স! হিপ হিপ হুররে!!

সেদিন সন্ধেবেলা একদল তরুণ কিশোর আরেক পাড়াকে ফুটবলে হারিয়ে হাতে বিজয়ী শিল্ড নিয়ে উল্লাসে চিৎকার করতে-করতে ফিরছিল। সোৎসাহে তারা গলা মেলাচ্ছিল থ্রি চিয়ার্স ফর … হিপ হিপ হুররে। ক্লাব-স্কুল-কলেজের খেলা ছাড়িয়ে এখন প্রায় যে-কোনো জয় বা বিশেষ কৃতিত্বেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বেরিয়ে আসে সমর্থকদের এই উল্লাসধ্বনি। কিন্তু থ্রি চিয়ার্স কেন? এক বা দুই নয় কেন? জড়িয়ে আছে অনেক গভীর এবং অবিশ্বাস্য কাহিনি। সপ্তদশ শতকে ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের একটি দল যখন ফরাসি কারাগার থেকে মুক্তি পায়, একে-অপরকে দেখে উল্লসিত হয়ে চিৎকার করে ওঠে থ্রি চিয়ার্স বলে। সেই শব্দ পরবর্তী কালে লোকমুখে ভাসমান হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসে ১৮১০ সালে। থ্রি চিয়ার্সই আবার টম অ্যান্ড জেরির বহুল প্রচারিত গল্পের দৌলতে জনপ্রিয় হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। অস্ট্রেলিয়ান লেখক টমাস কেলিয়ানি ‘থ্রি চিয়ার্স ফর দ্য প্যারাক্লিট’ নামে একটি উপন্যাস লিখে এক সময় সাড়া তুলেছিলেন এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিও পেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ড্যানিয়েল ডিফো-র রচনার মধ্যেও পাই থ্রি চিয়ার্সের আনন্দের ছবি।

যাইহোক, থ্রি চিয়ার্সের থ্রি কেন? এমনিতেই ৩ সংখ্যাটার গুরুত্ব আদিকাল থেকে, বিশ্ব জুড়ে। আমাদের জেমন ত্রিমূর্তি, ত্রিনয়ন, ত্র্যম্বক, ত্রিভুবন, ত্রিকাল, ত্রিপিটক, তিন সত্যি, তিন তালাক, তেমনই পশ্চিমী দুনিয়ায় ট্রিনিটি, ট্রায়ো, ট্রায়াম্ভির, ট্রিলজি ইত্যাদি। আরিস্ততল বলেছিলেন থ্রি একটি ত্রিবৃত্ত শব্দ অর্থাৎ প্রারম্ভ, মধ্য এবং শেষ। আবার বৌদ্ধ ধর্মেও তিনটি ধাপ বুদ্ধ, ধর্ম এবং সংঘ।

তিনের একই গুরুত্ব বা টানের জোরেই হয়তো কারও বিজয় বা কৃতিত্বের স্বীকৃতিব্যঞ্জক উল্লাসের প্রকাশও তিনতালে বাঁধা পড়েছে।

আর, হিপ-হিপ-হুররে? এখানেও নানা মত। যেমন, ১৮০৬ সাল নাগাদ উনিশ শতকের শুরুতে ইংল্যান্ডে একটি টোস্ট তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ‘হিপ হিপ’-এর ব্যবহার। যেখানে টোস্ট তৈরিতে উৎসাহ দিতে ব্যবহৃত হয়েছিল এই শব্দবন্ধ। এই ‘হিপ’ শব্দটি আাবার মধ্যযুগের একটি লাতিন আদ্যক্ষরবন্ধ। ‘হিয়োরোসোলিমা এস্ত পারদিতা’ যার অর্থ জেরুজালেম ইজ লস্ট। আবার, জার্মানিতে ১৮১৯ সালে আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বেশ কয়েকবার প্রাণঘাতী দাঙ্গা হয়েছিল তখন সেই দাঙ্গাবিধ্বস্ত অবস্থাকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়েছিল এবং মাইকেল ফন্টেইন নামক এক জার্মান কর্নেল এক চিঠিতে ‘হেপ হেপ’ শব্দটি ঘৃণার অর্থে ব্যবহার করেছিলেন। অন্যদিকে, ইয়োরোপীয়রা মঙ্গলসূচক শব্দ বোঝাতে ‘হুররে’ শব্দটি প্রচলন করেছিল।

Exit mobile version