গণিতশিল্পী কে সি নাগ

2304
0

পুরো নাম কেশবচন্দ্র নাগ। কে সি নাগ নামেই সমধিক পরিচিত। কিন্তু সেদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কালিদাস রায় প্রভৃতি সাহিত্যের বন্ধুরা যদি তাঁকে গণিতের বই লেখার অনুরোধ বা পীড়াপীড়ি না করতেন তা হলে কি ছাত্রছাত্রীরা কেসি নাগকে পেতেন? শুধু সেদিন কেন, বছরের পর বছর কেশবচন্দ্র নাগ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকমহলে অঙ্কের জনপ্রিয় শিক্ষক হয়ে বেঁচেছিলেন। ১২৫ বছর পর আজও ছাত্রছাত্রীদের কাছে কে সি নাগ সমান জনপ্রিয় ও সমাদর পেয়ে আসছেন।

১৯৩০-এর দশক। ঘরোয়া আড্ডা বসে কবিশেখর কালিদাস রায়ের বাড়িতে। সেই আড্ডায় নিয়মিত আসতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, জলধর সেন-এর মতো প্রথিতযশা মানুষরা। কবি-লেখক না হলেও সেই একত্র সমাবেশের আসরে নিয়মিত হাজির থাকতেন কেশবচন্দ্র। একদিন কথার মধ্যে কালিদাস, শরতচন্দ্ররা কেশবনাগকে ধরে বসলেন একটা বই লেখার জন্য। কেশবনাগ তো অবাক। আমি লিখব বই? কী বই? কালিদাস রায় বললেন, কেন অঙ্কের বই? বের হল কেশবচন্দ্র নাগের নব পাটিগণিত। প্রথম বইতেই এমন জনপ্রিয়তা পেলেন যে কিছুদিনের মধ্যেই স্কুলপাঠ্যে স্থান হল সেই বইয়ের। ঘরে-ঘরে ছড়িয়ে পড়ল সেই অঙ্ক বইয়ের সহজ সরল ভাষা। এ যেন বিদ্যাসগরের প্রথম ভাগের মতো গণিতের প্রথম পাঠ। সেই জনপ্রিয়তা তাঁকে দিয়ে তারপর আরও অনেক গণিতের বই লিখিয়ে নিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখে-মুখে তাঁর নাম, ঘরে-ঘরে পড়ার টেবিলে তাঁর বই। শুধু বাংলাতেই নয়, ইংরেজি, হিন্দি, নেপালি, উর্দু ভাষাতেও তাঁর বই অনূদিত হয়েছিল। এক সময় নিজেই খুলে ফেলেন একটি প্রকাশনা। বইয়ের সঙ্গে-সঙ্গে অঙ্কের সহায়িকা। জনপ্রিয়তায় সব বইকে ছাড়িয়ে গেল সেদিন। বাংলার অঙ্কপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকারা মনে রাখবেন এই মানুষটিকে।

জন্ম হুগলির গুড়াপের এক অখ্যাত গ্রামে। শৈশবেই পিতাকে হারান। গুড়াপের স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর স্কুল পালটে পড়তে যেতে হত তিন মাইল পথ পেরিয়ে ভাস্তাড়া যজ্ঞেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ে। নবম শ্রেণিতে আবার স্কুল বদল। এবার কিষেণগঞ্জ হাইস্কুল। ১৯১২ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করলেন এই স্কুল থেকেই। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হলেন রিপণ কলেজে যা আজকের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। সেখান থেকে আইএসসি প্রথম ভাগে পাশ করার পর গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের প্রথম পড়া স্কুলে শিক্ষকতা। বিএ পাশ করে কিষেণগঞ্জ স্কুলে শিক্ষকতা। তারপর যোগ দিলেন কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কু্ল। সেখান থেকে সোজা কলকাতায় মিত্র ইনস্টিটিউশনে। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে। এই ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনেই জীবনের বাকি অংশ শিক্ষকতা করেছেন, প্রধান শিক্ষকও হয়েছিলেন। শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের অঙ্কের বইয়ের লেখক হিসেবেই তিনি আজও জীবন্ত হয়ে আছেন শিক্ষা মহলে। গত ১০ জুলাই পূর্ণ হল তাঁর জীবনের ১২৫ বছর। শরৎচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় যাঁকে বলতেন ‘গণিতশিল্পী।’