ধরুন আপনার এখন ১৬ বছর বয়স ! স্বাভাবিকভাবেই, মাধ্যমিক নিয়ে চিন্তা, ভাবছেন উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কী নিয়ে পড়বেন, ভবিষ্যতে কোন কলেজে ভর্তি হওয়া যায়। এবার কল্পনা করুন আপনি এই ১৬ বছর বয়সেই একটি স্বীকৃত স্কুলের প্রধানশিক্ষক হয়ে গেলেন? ভাবছেন, এরকমটা আবার হয় নাকি। হ্যাঁ, এরকমই এক কল্পনাতীত বিষয়কে বাস্তবে করে দেখিয়েছেন আপনারই পাশের জেলার ছেলে।
নাম বাবর আলী। মুর্শিদাবাদের গাঙপুরের ছেলে। বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে বেলডাঙা সিআরজিএস স্কুলে পড়ত বাবর। স্কুল থেকে ফেরার পথে রাস্তায় দেখত অনেক ছেলে-মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, সময় নষ্ট করছে, পড়াশুনার জগৎ থেকে অনেক দূরে তারা। কী ইচ্ছা হল, ভাবল নিজে স্কুলে যেগুলো শিখছে সেগুলিই এই বাচ্চাদের শেখালে কেমন হয়? নিজেদের বাড়ির পিছনে একটি পেয়ারা গাছের তলায় নিজের বোন আমিনা ও আর ৭টি বাচ্চাকে নিয়ে শুরু করে দিল পড়ানো। সালটা ২০০২। এরপর তার বাবা মহম্মদ নাসিরুদ্দিন (পেশায় পাট বিক্রেতা) তাকে ৬০০ টাকা দিলেন কিছু বই-খাতা কেনার জন্য। আস্তে-আস্তে বাবর-এর স্কুলের প্রধান শিক্ষক, তার বাবার একবন্ধু তাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করলেন। দেখতে-দেখতে এক বছর গেল। ২০০৩ সালে মুর্শিদাবাদের ছেলে বাবর চালু করল আনন্দ শিক্ষা নিকেতন স্কুল। পরবর্তীকালে তার এই স্কুলকে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্কুল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সরকার স্বীকৃত একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হলেন বাবর আলী। ২০০৯ সালে বিবিসি থেকে তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানশিক্ষক হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
বাবর-এর সেই স্কুল এখন মুর্শিদাবাদের শঙ্করপাড়া গ্রামে। একজন এনআরআই-এর সহায়তায় ৭,২০০ বর্গ ফুট জায়গা জুড়ে স্কুল বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তাঁর পুরোনো স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৮০০ হয়ে গিয়েছিল। নতুন স্কুলও চলছে পুরোদমে। বাবর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছেন। তাঁর ইচ্ছা ভবিষ্যতে ইউপিএসসির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার। তবে বাবর এই স্কুলের উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট থেকে যাবেন, কেননা তাঁর চোখে স্বপ্ন সব শিশু যেন ন্যূনতম শিক্ষা পায়। ইউরোপে, সিঙ্গাপুরে অনেক অনুষ্ঠানে এখন ডাক পান বাবর। জনপ্রিয় টিভি শো “সত্যমেব জয়তে”-তেও তাঁর জীবনী নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছে।