ডক্টরস ডে

1100
0

ট্যাক্সি চালক থেকে মেল নার্স এবং সেখান থেকে শুরু করে একসময় দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেছিলেন। সে সবের বাইরে সব কিছু ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রূপকার, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং সর্বোপরি একজন স্বনামধন্য প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসক। প্রথমে মেডিকেল কলেজ প্রত্যাখান করলেও দমে যাননি। লড়াই করে গেছেন মানুষের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ একজন ডাক্তার হবার জন্য। বিদেশ থেকে এমারসিপি এবং এফারসিএস হয়ে চিকিৎসায় মনোনিবেশ করেছিলেন। মানুষের জন্য কাজ করার অদম্য বাসনাতেই চিকিৎসার পাশাপাশি সমাজ সেবায় নিযুক্ত করেছিলেন নিজেকে। ঠাকুমার আদরের ‘ভজন’ একদিন হয়ে উঠলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর চিকিৎসার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল দিল্লির দরবারেও। স্বয়ং জওহরলাল নেহরু থেকে তাঁর পরবর্তী ইন্দিরা গান্ধীও ছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ। ডাক্তারির পাশাপাশি স্বরাজ সমর্থক বিধানচন্দ্র রায় একদিন বসলেন পশ্চিমবালার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে। বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী  হয়েছিলেন ( ১৯৪৮-১৯৬২)।
এই মুখ্যমন্ত্রীকালেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলার উন্নতির কারিগর। বাংলার রূপকার হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর উদ্যোগেই গড়ে উঠেছিল আসানসোল, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। দুর্গাপুর উপনগরী, কল্যাণী উপনগরী সহ তাঁর নামাঙ্কিত বিধাননগর উপনগরী। তাঁর উৎসাহে এবং উদ্যোগে গড়ে ওঠে ফরাক্কা ব্যারেজ, হলদিয়া হয়েছিল দ্বিতীয় নদী বন্দর।।
তিনি একদিকে ছিলেন প্রশাসক, অন্যদিকে জনদরদী চিকিৎসক। তাই তো তাঁর সহায়তায় চিত্তরঞ্জন সেবাসদন, চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল এবং যাদবপুরে টিবি হাসপাতালের সূচনা হয়েছিল। কমলা নেহরু হসপিটাল গড়ে ওঠার পেছনেও ছিল তাঁর অবদান। তাঁর সমগ্র কাজের জন্য তিনি আজও বাংলা ও বাঙালির শুধু নয় গোটা দেশেই নানা সম্মানে সম্মানিত হয়ে রয়েছেন। ভারত সরকার শুধু ভারত রত্ন নয়, পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের ডাকটিকিটেই নয়, তাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে দেশের বিশেষ করে  বাংলার নানা প্রতষ্ঠানের সঙ্গে।
এখানেই উল্লেখ্য, সেদিন যদি তিনি সহযোগিতা না করতেন সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী সেসময় মুক্তি পেত কিনা সন্দেহ। যে পথের পাঁচালী বিশ্বের কাছে‌ বাংলা সিনেমার আন্তর্জাতিক সম্মান আদায় করে নিয়েছিল এবং জেনেছিল সত্যজিৎ রায়ের নাম।
এই বহুধা ব্যাপ্ত মানুষটির রাজনৈতিক কাজকর্মের পাশাপাশি চিকিৎসক ও জনদরদি হিসাবে পরিচিতি তাঁকে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দিতে বহু অসাধ্য সাধন ও ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।  কাকতালীয় ভাবে তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর তারিখটি একই ১ জুলাই।। এই দিনটিকে তাঁর প্রতি সমস্ত চিকিৎসকদের প্রতি সম্মান জানাতে ১৯৯১ সালের ১ জুলাই দিনটিকে ‘ডক্টরস’ ডে’ হিসাবে পালন করা হয়েছিল। সেটা ছিল তাঁর জন্মশতবার্ষিকী। সেই বছর থেকে প্রতি বছর তাঁর এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করা হয়ে থাকে।
তাঁকে নিয়ে উৎসাহ ও গবেষণা আজও অব্যাহত। বেশ কিছু বই লেখা হয়েছে তাঁর জীবন ও কর্মকে নিয়ে। একদা দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাঁকে উপজীব্য করেই লিখেছিলেন ‘একটি পেরেকের কাহিনী’। বিদেশি লেখক কে পি টমাস লিখেছিলেন একটি বই। আর‌ও অনেক বই লিখিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে ডক্টরস’ ডে পালিত হয়। ব্রাজিলে পালিত হয় ১৮ অক্টোবর, কানাডায় ১ মে, আমেরিকায় ৩০ মার্চ। আর  ১ জুলাই ভারতে ডক্টরস’ ডে পালিত হয় বিধানচন্দ্র রায়ের স্মরণে।।
লাইভ টিভি দেখুন : https://chetana.tv/
বাংলার প্রথম এডুকেশনাল চ্যানেল