ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট পড়ে সরকারি চাকরির অনেক সুযোগ

schedule
2020-05-27 | 17:04h
update
2020-05-27 | 17:04h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

বিপর্যয় শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক বিপদ। তা কোথায় কেমনভাবে আসবে, কেউ জানি না।  তবে সতর্ক হলে তা থেকে কিছুটা নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। তা অনেকটাই আমরা দেখতে পেলাম আমফান বা উমপুন ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্য দিয়ে। যদি আধুনিক আবহাওয়া দফতর আগাম সতর্কবার্তা না দিত, তাহলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি কত মানুষ যে মারা যেত তা অনুমান করাও মুশকিল। সতর্কতা সত্ত্বেও ৮৬ জন মারা গেছেন সরকারি হিসেবে। আর ঝড়ের ফলে কৃষিক্ষত্র সহ হাজার-হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে সরকার প্রশাসন প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার ফলে প্রাণহানি কিছু কম হয়েছে। শুধু ঘরবাড়ি কৃষিজমি নয়, কম করে হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধূলিসাৎ হয়েছে, পঠনপাঠন শিকের উঠেছে।
সরকারি প্রাথমিক হিসাব বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ২১,৫০৭ বর্গ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ১০.৫০ লক্ষ। মোট আক্রান্ত মানুষ এক কোটি, ৩৬ লক্ষ। এই আংশিক পরিসংখ্যান থেকেই উপলব্ধ হয় শুধুমাত্র একটা ঝড়ের দাপটেই কী বিপুল ক্ষয়ক্ষতি। এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গের হিসাব। ঝড় তাণ্ডব চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশা ও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও। মানুষ, ঘরবাড়ি,  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বিপুল বিপর্যয়ের পাশাপাশি গোটা রাজ্যে দশ হাজারেরও বেশি শুধুমাত্র বড় বড় গাছ‌ই উপড়ে পড়েছে, জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে।  আর এই বিপর্যয় মোকাবিলাতেই  রাজ্যজীবনে স্বাভাবিকতা আনতে সাহায্য নিতে বা ডাকতে হয়েছে কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। এসেছে ওড়িশার ৫০০ কর্মীও। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পরিভাষায় বলে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (NDRF)। যে-কোনো বড় বিপর্যযয়ের জন্য এই ফোর্স তৈরি থাকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অধীনে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে-কোনো ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলার বিভাগ রয়েছে। যাদের মূল কাজ ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, শরণার্থী বিপর্যয় সহ, আগ্নেয়গিরি, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ পরিবহণ, রাসায়নিক নির্গমন সহ নানা বিপর্যয়ের রক্ষায় এদের ভূমিকা প্রধান হয়ে ওঠে। সেনা জওয়ানরা ঝাঁপিয়ে পড়েন যে-কোনো বিপর্যয় মোকাবিলায়। এদের মূল কাজই হচ্ছে বিপর্যয় সামলানো। যা আমরা আগে বার-বার প্রত্যক্ষ করে এসেছি, বিভিন্ন সময়ে ঘটা বিপর্যয়ে। তা সে নেপাল, বা ইন্দোনেশিয়া, চিনের ভূমিকম্পেই হোক, বা ভারতে ২০১৪ সালের ভয়াবহ কাশ্মীর বন্যাই হোক। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের বানে গোটা উত্তর ভারতের বিপর্যয়ের ভয়াবহতার ছবি আজও দগদগে। সেদিন এনডিআরএফকে ভারত সরকার উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য বা বিপন্ন মানুষকে উদ্ধারের জন্য সরকার থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।  হিসাব বলছে, গত দু দশকে প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার। এবং ৮০ কোটি পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
Advertisement

কাজের সুযোগ
  • বর্তমান দিনে দিকে-দিকে পরিবেশ দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন সহ নানাবিধ কারণে বিপর্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সঙ্গে-সঙ্গে এই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রভূত বেড়েই চলেছে এবং পরিবেশবিদ বিজ্ঞানীদের মতে আরও বাড়বে। আর এই বিষয়টিকেই যদি ছাত্রছাত্রীরা পেশা হিসাবে নিতে পারে তাহলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের এক বড় সুযোগ রয়েছে। দেশে-বিদেশে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর জন্য গড়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে জীবনে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা ভালো সুযোগ রয়েছে এই বিষয়ে পড়াশোনার। বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখান থেকে সার্টিফিকেট, আন্ডার  গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, পিজি, ডিপ্লোমা এবং এমবিএ কার্যক্রম করার সুযোগ রয়েছে।
পড়ার জন্য যোগ্যতা
  • দ্বাদশ শ্রেণি থেকেই এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। কেউ-কেউ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স বা এমবিএ করতে চাইলে ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে যে-কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হলেই যোগ্যতা দরকার। সুযোগ রয়েছে আইটি পার্সোনেল, সফটওয়্যার তৈরি করা, ডিজাস্টার প্রেডিকশন ইত্যাদি নানা ধরনের কাজের। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিষয় নিয়ে পড়লে অনেক সম্ভাবনা তো রয়েছেই, সরকারি চাকরির সঙ্গে-সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে দেশ ও রাজ্যের ধ্বংস সারিয়ে পুনর্গঠনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা যায়। সেইসঙ্গে মানসিক আনন্দ। ভারতে এই কাজের সুযোগ অনেক বেশি, কারণ,  বেশ কিছু অঞ্চল বিপজ্জনক। এ ছাড়াও সমাজসেবা, পুলিশ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, প্রতিরক্ষা সহায়ক, ফায়ার ফাইটার্স, আকাশ নিরাপত্তা মূলক কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে।
কী শিখতে হয়
  • ছাত্রছাত্রীদের শিখতে হয় বিপর্যয় মোকাবিলার নানা পন্থা। কী করে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়, বিপর্যয়ের সতর্কতা, অবস্থা, স্থানীয় এলাকা ফাঁকা করার পদ্ধতি। জনতা ও বিপর্যস্ত মানুষদের কাছে খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছনোর পদ্ধতি ইত্যাদি।
তিনভাগে বিভক্ত
বিপর্যয় সব সময় অবিন্যস্ত রূপেই আসে। কখনও ঝড় হয়ে, কখনও ভূকম্পন হয়ে। বিপর্যয়কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১।  প্রাকৃতিক― হারিকেন, টর্নেডো, ভূকম্পন, বন্যা, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি।
২। টেকনোলজিক্যাল― বিভিন্ন রকম রাসায়নিক নির্গমন, বিদ্যুৎ ফরিবহনমুখ, প্রাকৃতিক গ্যাস বিস্ফোরণ।
৩।  ম্যানমেড― জঙ্গিহানা,  ধর্মীয় দাঙ্গা, ব্যাপক গুলিগোলা ইত্যাদি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ভারতে  উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে নয়াদিল্লি, কানপুর, আমেদাবাদ, হায়দরাবাদ, গান্ধীনগর প্রভৃতি অঞ্চলে। যেমন
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজাস্টার, নিউ দিল্লি,  ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ কোয়েকার ইঞ্জিনিয়ারিং, আইআইটি, কানপুর।
অল ইন্ডিয়া মিটিগেশন ইনস্টিটিউট, আমেদাবাদ।  এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, হায়দরাবাদ।  ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, গুজরাট, গান্ধী নগর।
Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
23.04.2024 - 12:57:10
Privacy-Data & cookie usage: