কোনো-কোনো ত্রুটি ঘটলে দরখাস্ত বাতিল হবেই, কোনো-কোনো ত্রুটির মার্জনা কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে। অনলাইনে হোক বা অফলাইন। কীভাবে তৈরি করা যায় নির্ভুল দরখাস্ত? আলোচনা করছেন অশোক চক্রবর্তী।
চাকরির দরখাস্ত হচ্ছে নিয়োগকারীদের কাছে নিজের প্রথম পরীক্ষা। দরখা্স্ত গ্রাহ্য হলে তবেই পরবর্তী ধাপের পরীক্ষাগুলো দেওয়ার সুযোগ আশা করা যায়। তাই চূড়ান্ত সাবধানতা নিতে হবে দরখাস্ত বাতিল হবার সম্ভাবনাগুলো এড়াবার জন্য।
কিছু-কিছু ত্রুটি আছে যা ঘটলে দরখাস্ত বাতিল করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না, তেমনই কিছু-কিছু ত্রুটি আছে যার ফলে দরখাস্ত বাতিল হতেও পারে, নাও হতে পারে– পুরোটাই নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর। তবে তাঁরা একবার বাতিল করে দিলে সাধারণত পুনরুদ্ধারের আর কোনো উপায় থাকে না। বিশেষত প্রতিরক্ষা দপ্তরের কোনো চাকরির দরখাস্তে পান থেকে চুন খসার উপায় নেই, সামান্য ত্রুটিতেই বাতিল হতে পারে দরখাস্ত।
যে–কোনো চাকরির দরখাস্ত বাতিল হবেই কোন–কোন ক্ষেত্রে
১. দরখাস্তে নির্দিষ্ট জায়গায় স্বাভাবিক সই না থাকলে।
২. নির্দেশমতো ফটো না দিলে।
৩. দরখাস্ত ফি বা পরীক্ষার ফি নির্দেশমতো না দিলে।
৪. শিক্ষাগত/পেশাগত যোগ্যতা ঠিকমতো না থাকলে।
৫. অভিজ্ঞতা চাওয়া হলে তা ঠিকমতো না থাকলে।
৬. বয়স ঠিকমতো না থাকলে।
৭. দরখাস্তের নির্ধারিত ফর্ম্যাটে আবেদন না করলে।
৮. দরখাস্তের ফর্ম নির্দেশমতো পূরণ না করলে, যেমন যে ঘরগুলি পূরণ করতে বলা হয়েছে সেরকম ঘর ফাঁকা রাখলে।
৯. সংরক্ষিত পদের জন্য অসংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীরা বা অসংরক্ষিত পদের জন্য সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে কেউ আবেদন করলে।
১০. দরখাস্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না পৌঁছলে।
১০. স্থানগত/ভাষাগত সীমারেখা বা বিশেষ কোনো রেজিস্ট্রেশনের শর্ত থাকলে এবং তার অন্যথা হলে।
১১. প্রামাণপত্রাদির কপি যদি চাওয়া হয়, সেগুলি ঠিকমতো না দিলে।
১২. ফটো, প্রমাণপত্র ইত্যাদি প্রত্যয়িত/স্বপ্রত্যয়িত চাওয়া হলে যদি তা না করে দেওয়া হয়।
১৩. নিজের ঠিকানা ঠিকমতো না লিখলে।
১৪. দরখাস্তে ফি পেমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য ঠিকমতো উল্লেখ না করলে।
১৫. যোগ্যতা, কাস্ট সার্টিফিকেট ইত্যাদির শর্ত যে তারিখের মধ্যে পূর্ণ হবার কথা সেইমতো না হলে।
কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে কোন–কোন ক্ষেত্রে
১. একই পদের জন্য একাধিক দরখাস্ত করলে বা নিষেধ সত্ত্বেও একাধিক পদের জন্য আবেদন করলে।
২. দরখাস্তে কোনো কিছু কাটাকুটি বা ওভাররাইট করা হলে।
৩. রঙিন ফটোর বদলে সাদা-কালো বা সাদা-কালোর বদলে রঙিন ফটো দিলে বা ফটোর মুখচ্ছবি, ব্যাকগ্রাউন্ড ও ধরন নির্দেশমতো না হলে।
৪. নিজের নাম-ঠিকানা লেখা ও ডাকটিকিট সাঁটা খাম চাওয়া সত্ত্বেও তা না দিলে।
৫. মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটে লেখা নিজের ও বাবা-মায়ের নামের বানানের সঙ্গে দরখাস্তে লেখা বানান না মিললে।
৬. পোস্টাল অর্ডার, ড্রাফ্ট ইত্যাদিতে নিজের নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা বা আর যা-যা লেখার নির্দেশ থাকবে সেরকম না হলে।
৭. পোস্টাল অর্ডার/ড্রাফ্ট ক্রস করে দিতে বলা সত্ত্বেও ক্রস করে না দিলে।
৮. খামের ওপর প্রার্থিত পদের/পরীক্ষার নাম লিখে দিতে বলা সত্ত্বেও তা না দিলে।
৯. কোনো কিছু সুতো দিয়ে গেঁথে দেওয়ার বদলে পিন/স্টেপল করে দিলে।
১০. দরখাস্ত বা অনলাইনে পূরণ করা দরখাস্তের প্রিন্ট-আউট সাধারণ ডাকে পাঠাতে বলা সত্ত্বেও রেজিস্টার্ড/ক্যুরিয়ার/স্পিড পোস্টে পাঠালে।
১১. ফর্ম কালো কালিতে পূরণ করতে বলা হলেও নীল কালিতে বা পেন্সিলে তা করলে।
১২. ফর্মে লেখার সময় একই শব্দের ক্ষেত্রে মাঝের কোনো খোপ বাদ দিয়ে শব্দটি লিখলে বা একাধিক শব্দের ক্ষেত্রে একটি শব্দের পর কোনো খোপ না ছেড়েই আরেকটি শব্দ লিখলে।
ভুলত্রুটি এড়ানোর জন্য মূলত কী–কী সাবধানতা নেওয়া যায়
১. আবেদন করার আগে বিজ্ঞপ্তি ভালো করে পড়ে নেওয়া। দরকারে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিয়ে।
২. ইংরেজি-বাংলা ডিকশনারি, কাগজ, কালি, পেন্সিল, আঠা, ইরেজার, কাঁচি, ছুরি, সুঁচ-সুতো, স্কেল, খাম ইত্যাদি যা-যা লাগার সম্ভাবনা আছে, সব হাতের কাছে নিয়ে বসা।
৩. অভিজ্ঞ সঙ্গী, পেনড্রাইভ, টর্চ/মোম ইত্যাদিও থাকা উচিত।
৪. মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড থেকে শুরু করে সব প্রাসঙ্গিক পরীক্ষার মার্কশিট, সাটির্ফিকেট, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কাস্ট, এনওসি ইত্যাদি সার্টিফিকেট এবং সেসবের জেরক্স (প্রত্যয়িত চাওয়া হলে প্রত্যয়িত)।
৫. পেমেন্টের ব্যাপারে পোস্টাল অর্ডার/ডিমান্ড ড্রাফ্ট/অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে মোবাইল, চার্জার, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড/পাশবই। অনলাইন দরখাস্ত করতে হলেও মোবাইল দরকার।
৬. ওয়েবসাইটে দরখাস্ত পূরণের নমুনা দেখানো থাকে, সেটা ধাপে-ধাপে বুঝে নিতে হবে।
৭. দরখাস্তের ফর্ম পূরণ করা থেকে শুরু করে পোস্ট করা পর্যন্ত কাজের পরম্পরার একটা তালিকা তৈরি করে রাখা ভালো, সেক্ষেত্রে দরখাস্ত পোস্ট করার আগে পর-পর মিলিয়ে টিকমার্ক দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে।
৮. পারলে দরখাস্তের ফমের্র একটা ডামি বা জেরক্স/নকল করে নিয়ে প্রথমে তাতে হাত পাকিয়ে শুদ্ধ চেহারায় দাঁড় করালে পরে সেটা দেখে-দেখে আসল দরখাস্ত পূরণ সহজ হবে।
৯. দরখাস্তে একটা পরিচ্ছন্নতা ও যত্নের ছাপ থাকা দরকার। একাজটাও প্র্যাক্টিস করে রপ্ত করা যায়।
১০. দরখাস্ত করার কাজ অযথা ফেলে না রেখে যথেষ্ট সময় থাকতে করে ফেলা ভালো, শেষ মুহূর্তের ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনা এড়ানো যায়।
১১. দরখাস্ত এমন সময়ের মধ্যে পোস্ট করবেন যাতে নির্ধারিত শেষ তারিখ ও সময়ের মধ্যে পৌঁছয়।
১২. দরখাস্তে প্রমাণহীন বা ভুল তথ্য একদম নয়।