Site icon জীবিকা দিশারী

দ্য অ্যানিমাল ফার্ম রচয়িতা জর্জ অরওয়েল

george-orwell-554x350

আসল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। কিন্তু ছদ্মনাম জর্জ অরওয়েল বললেই আমাদের চোখের সমনে ভেসে উঠবেন দ্য অ্যানিমাল ফার্ম-এর স্রষ্টা। বাংলায় যা ‘পশুখামার’ নামে সমধিক পরিচিত। এই একটি উপন্যাসই ব্রিটিশ এই লেখককে কালজয়ী পরিচিতি দিয়েছে। তাঁর রচিত ‘নাইটিন এইটি ফোর’ও বিশ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের তালিকায় পড়ে।

অরওয়েলের জন্ম ১৯০৩ সালের ২৫ জুন ঔপনিবেশিক ভারতে বাংলাপ্রদেশের মতিহারিতে। জন্মানোর কিছুকাল পরেই চলে যেতে হয় ইংল্যান্ডে। সেখানেই শিক্ষাদীক্ষার শুরু। ইটনে পড়াশেনো শেষ করেই নব্য যুবক প্রবল উৎসাহে বার্মায় পুলিশ বাহিনিতে যোগদান করেন। বার্মায় ইন্ডিয়ান ইমপেরিয়াল পুলিশে অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট পদে যোগদান করেন। বেশ কয়েকবছর কাজ করার পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে দেওয়ার। চাকরি ছেড়ে  নিজেকে নিযুক্ত করলেন লেখালেখিতে। বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কাহিনী নিয়ে প্রথম বই লেখেন ‘ডাউন অ্যান্ড  আউট ইন প্যারিস অ্যান্ড লন্ডন’। প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ সালে। নিজেকে আড়ালে রাখতে গ্রহণ করলেন ছদ্মনাম: জর্জ অরওয়েল। এই নামেই লিখলেন পরের বই ‘বার্মিজ ডে’জ’ (১৯৩৪)। ক্রমশ লেখাই হয়ে উঠল তাঁর প্রধান জীবিকা। সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সাংবাদিকসুলভ লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। সে সময়ের ইংল্যান্ডের একাংশের বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের ছবি তুলে ধরলেন তাঁর ‘দ্য রোড টু উইগান গিয়ার’ (১৯৩৭) নামক রচনায়। পরবর্তীকালে লেখার কারণেই ১৯৩৬ সালে যাত্রা করেন স্পেনে। এবং স্পেনের রাষ্ট্রপ্রধান ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর বিরোধিতা করে সোচ্চার কলম ধরেন। ফ্রাঙ্কো কারও-কারও কাছে ছিলেন আধুনিক স্পেনের মুখ, আবার ভিন্নমহলে ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত। বিরুদ্ধ  মতবাদের জন্য আলোচিত এই রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধেই কলম ধরেন জর্জ। অতঃপর বিরুদ্ধবাদীদের আতঙ্কে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন এবং সারাজীবন স্তালিন বিরোধিতা করে প্রতিবাদী ভূমিকায় সোচ্চার থেকেছেন। সেখান থেকে ফিরে এসে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ বিবিসির সাংবাদিকতা করলেন। সেই সঙ্গে ‘সাপ্তাহিক ট্রিবিউন’ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদনার ভারও গ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে লেখেন ‘অ্যানিমাল ফার্ম’। প্রকাশের পর একদিকে সম্মান-স্বীকৃতি, খ্যাতি-পরিচিতি, সঙ্গে প্রভূত অর্থোপার্জন। বিশ্বসাহিত্যে রাতারাতি স্থান করে নিল এই গ্রন্থ। এর চার বছর পর ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘নাইনটিন এইটি ফোর’। এই বইটিও সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়। ১৯৪৫ সালের এই লেখক ১৯৮৪ সালের পৃথিবীকে কল্পনা করেছিলেন যেখানে বাক্‌ স্বাধীনতার কোনো স্থান নেই, যেখানে মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। যে বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের বিভিন্ন নামকরণও হয়েছিল যেমন ‘বিগ ব্রাদার ওয়াচিং ইউ’। উপন্যাসে দেখানো হয়েছিল প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে একটি যান্ত্রিক পর্দা রয়েছে যার মাধ্যমে সরকার বাড়ির অধিবাসীদের উপর নজর রাখতে পারে। বর্তমান দিনে কত প্রাসঙ্গিক। লেখক, সাংবাদিক, ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা এরিক আর্থার ব্লেয়ার হারিয়ে যান জর্জ অরওয়েলের খ্যাতির আলোকে। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৫০ সালের ২১ জানুয়ারি লন্ডনে ইউনিভার্সিটি কলেজ হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অরওয়েল।

 

Exit mobile version