করোনা আমাদের সামাজিক জীবনকে একদিকে যেমন রুদ্ধ করেছে তেমনি গোটা বিশ্বের শিক্ষার মানচিত্রে পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। একটা বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে গোটা পড়াশোনার জগতে।
দীর্ঘ কয়েক মাস ছাত্রছাত্রীরা বিচ্ছিন্ন রেগুলার স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়াশোনা থেকে। সেই সঙ্গে সংশয় ও অনেক প্রশ্নের মুখে পড়েছে আগামীদিনের শিক্ষার গতিপ্রকৃতি। স্কুলের রেগুলার ক্লাস তো বটেই সেইসঙ্গে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং নানা জটিলতায় ছাত্রছাত্রীরা যেমন উদ্বিগ্ন ভবিষ্যত কেরিয়ার গড়ায়, তেমনই উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহলও।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে একটা বিষয়ের প্রাপ্ত উচ্চ নম্বরের সঙ্গে গড় নম্বর দিয়ে পাশ করানোর সিদ্ধান্তে চরম জটিলতার মুখে ছাত্রছাত্রীরা। এই সমস্যা স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের সেমেস্টার পরীক্ষার ক্ষেত্রেও।
এইরকম পরিস্থিতিতে গোটা পড়াশোনাটাই এখন প্রায় অনলাইন নির্ভর হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, অনলাইন ব্যবস্থা শুধু পড়াশোনাতেই নয়, আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে বা দিন-দিন আরও অনলাইন নির্ভর হয়ে উঠছি আমরা।
নিও নর্মাল শব্দের সঙ্গে এসে গেছে ওয়েবিনার শব্দটিও। আস্তে-আস্তে সমস্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, বড়-বড় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই ওয়েবিনারের প্রচলন দিন-দিন খুবই কার্যকরী ভূমিকা নেবে। করোনো পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস বাড়িতেই যেমন শুরু হয়ে গিয়েছে তেমনই বিভিন্ন কলেজ-ইউনিভার্সিটির সভা-সমাবেশ, শিক্ষামূলক বক্তৃতা, প্রেজেন্টেশন, ডেমনস্ট্রশন বা বিভিন্ন বিষয়ের গুরুগম্ভীর আলোচনার ক্ষেত্রেও চালু হয়ে গেছে ওয়েবিনার। মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কলেজে আয়োজিত হচ্ছে ওয়েবিনার বা অনলাইন আলোচনা। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নিজেদের বিদ্যালয়ের নানা ভাবনাচিন্তা ছাত্রছাত্রী-অভিভাবক সহ সাধারণ উৎসাহীদের কাছেও এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে জানাতে চাইছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ‘কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি’ও তুলে ধরা হচ্ছে এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে।
ওয়েবিনার কী? সংক্ষেপে ওয়েব এবং সেমিনার এই দুটি শব্দের সংযুক্তিকেই বলা হচ্ছে ওয়েবিনার। যাকে বলা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা। সে যে-কোনো বিষয় হতে পারে। পড়াশোনা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় কোম্পানির সমস্ত কর্মচারীদের জানানোর জন্যও অনলাইন সেমিনার বা ওয়েবিনার করা যেতে পারে। লক্ষ করলে দেখা যাবে সম্প্রতি বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় উৎসাহী ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার করছেন, যেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষরা তাঁদের মতামত রাখছেন নিজ-নিজ ঘরে বসেই। এ জন্য কলকাতার অধ্যাপককে বর্ধমান ছুটে যেতে হচ্ছে না, বা উত্তরবঙ্গের কোনো শিক্ষককে কলকাতায় সেমিনার হলে অ্যাটেন্ড করতে হচ্ছে না।
এই ওয়েবিনারে অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে। এতে আয়োজক সংস্থাকে আলাদা করে সেমিনার কক্ষ ভাড়া করতে হচ্ছে না যেমন, তেমনই অগুনতি শ্রোতা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুনতে পারছেন, আবার সেই সময় শুনতে না পারলে পরে কোনো নিজস্ব সময়ে সেই রেকর্ড করা বিষয়টি শুনে নিতে পারবেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব তো থাকছেই। এক কথায় কোনো একটি বিষয় অভিজ্ঞরা বললে, একসঙ্গে অসংখ্য শ্রোতার কাছে পৌঁছানো সম্ভব।
বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতেও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষদের ওয়েবিনার লক্ষ করা যাচ্ছে। আগামী দিনে এর ব্যবহার দিন-দিন বাড়বে বই কমবে না। কারণ গোটা বিশ্বেই নিও নর্মাল জীবনে অনলাইন শিক্ষা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে। ভারতের মতো গরিব দেশগুলিতে নানা সমস্যা থাকলেও প্রসার ঘটছে। যদিও এখানেই দ্বিধাবিভক্ত সমাজ― চলছে হ্যাঁ অনলাইন, না অনলাইন নিয়ে বিতর্ক। সে অন্য বিষয়। ওয়েবিনার ব্যবহারপদ্ধতি জানা জরুরি। ইন্টারনেটে গুগল প্লে স্টোর থেকে ওয়েবিনার ইনস্টল করতে হবে এবং আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নিজেকে আধুনিক ওয়েবিনারে মানানসই করে নিতে হবে। এবং আরও আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠা সম্ভব সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে।
ভাস্কর ভট্টাচার্য