নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস : একটা নাম, একটা ইতিহাস

3429
0

একটা নাম, একটা ইতিহাস। কারাগার থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ওঠার ইতিহাস। এক বিরলতম ব্যক্তিত্বের দেশনেতার নাম নেলসন ম্যান্ডেলা। পিতৃপ্রদত্ত নাম মুছে এই নামেই বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছিলেন। জীবনের ২৭ বছর কারাবন্দি থেকে মুক্তি পেয়ে শ্বেতাঙ্গবাদী দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিলেন শান্তিপূর্ণ সর্বধর্মের সর্ববর্ণের মানুষের দেশ হিসেবে। শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গের ভেদ মুছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চেহারা দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখেছিলেন সর্ববর্ণ সর্বধর্মের সমানাধিকার থাকবে আফ্রিকায়। এবং সেই স্বপ্ন তাঁর সফল হয়েছিল। ইতিহাস তাঁকে ‘আফ্রিকান গান্ধী’ তকমা দিয়েছে। বিশ্বের জনপ্রিয় কিংবদন্তি নেতা হিসাবে আজও সমান ভাবে তিনি স্বীকৃত ও সম্মানিত। তাই তো সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ এই প্রবাদপ্রতিম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানবাদী মানুষটির জন্মদিনকে নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে ২০০৯ সালে। সেই থেকে তাঁর জন্মদিন ১৮ জুলাই তারিখটি নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস নামে পরিচিত।
জন্মেছিলেন ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। এক থেম্বু রাজবংশে। জানা যায় তিনিই তাঁর পরিবারে প্রথম স্কুলের পাঠ নিয়েছিলেন। পড়াশোনায় উৎসাহী মেধাবী এই ছাত্র একদিন নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে হয়ে উঠেছিলেন একজন আইনজীবী। নিপীড়িত শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই প্রধান কাজ হয়ে উঠেছিল। কারণ সেসময়  কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গের অত্যাচার ছিল বর্ণনাতীত। সব সুবিধা ভোগ করত শ্বেতাঙ্গরা। দেশের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ কৃষ্ণাঙ্গ থাকলেও।
এই অসাম্য, অনৈতিক অত্যাচার ও নিপীড়নই নেলসন ম্যান্ডেলাকে প্রতিবাদী ম্যান্ডেলা তৈরি করেছিল।
তার পরের ইতিহাস অনেক বড়। কখনো মার্কসইজমে বিশ্বাসী হওয়া, কখনো দক্ষিণপন্থী। ১৯৪২ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ ও প্রত্যক্ষ সরকার বিরোধিতায় রাজনীতির ময়দানে ঝাঁপিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধিতা বা প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা । একদিকে আন্দোলন অন্যদিকে জনপ্রিয়তা। এমন এক পরিস্থিতিতে এই প্রতিবাদী চরিত্রটির সঙ্গে কারারুদ্ধ করা হল তাঁর অসংখ্য অনুগামীকে। শুধু গ্রেপ্তার নয়, বিচারে যাবজ্জীবন সাজা। দীর্ঘ ২৭ বছর পর কারামুক্ত হলেন দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এই কান্ডারি। তিনি মুক্তি পেলেন দেশের নতুন রাষ্ট্রপ্রধান ডি ক্লার্কের সহযোগিতায়।  ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রয়ারি। আর এই দীর্ঘ জেলজীবনেই লিখেছিলেন আত্মজীবনী “লং ওয়াক টু ফ্রিডম”।
১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত।
১৯৯৪ সালে গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত হয়ে হলেন দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭।
অ্যাক্টিভিস্ট, রাজনীতিবিদ , চিন্তাবিদ, মানবতাবাদী এই নেতাকে সারা বিশ্ব নানা সময়ে নানা সম্মানে ভূষিত করেছে। তিনি পেয়েছেন শাখারভ পুরস্কার (১৯৮৮), ভারত রত্ন (১৯৯০), নিশান-ই-পাকিস্তান (১৯৯২) সহ বিশ্বের আড়াইশোর বেশি সম্মান।
সমানাধিকার, দারিদ্র দূরীকরণ ইত্যাদির পাশাপাশি এইডস-এইচআইভির মতো ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
তিনি মনে করতেন এবং সেই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন যে, ‘ শিক্ষা সব থেকে শক্তিশালী অস্ত্র যার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দেওয়া যায়। ‘ ঘৃণা মনকে অন্ধকার করে, ঘৃণা নিয়ে কেউ জন্মায় না’
তাঁর নিঃসৃত বাণী ছিল। সফলতার ভিত্তিতে আমায় বিচার কোরো না, আমাকে বিচার কোরো, আমার ব্যর্থতা এবং আমার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিকে দিয়ে।’
হ্যাঁ, তিনি, তিনিই পারেন এমন কথা বলতে। তিনি ৬৭ বছরের জীবনে ২৭ বছর কারাগারে  কাটিয়েও হেরে যাননি, থেমে যাননি, মানুষকে এগিয়ে চলার বার্তা দিয়ে গেছেন। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলা।
তিনি নব্বইয়ের দশকে বামপন্থীদের আহ্বানে কলকাতায় এসে সংবর্ধনা নিয়ে গেছেন।
৫ ডিসেম্বর ১৯১৩ এই বিশ্ববন্দিত বহুবৈচিত্র্যময় মানুষটির জীবনাবসান হয়।
ভাস্কর ভট্টাচার্য
Nelson Mandela, Personality