রাজ্যে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন ও আসন সংরক্ষণ বাড়ানো হবে বলে জানানো হল। ৯ জুলাই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পার্শ্বশিক্ষকদের এক সমাবেশে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর এক মোবাইল বার্তায় একথা শোনান। প্রাথমিক স্তরে ১০০০০ টাকা এবং উচ্চপ্রাথমিক স্তরে ১৩০০০ টাকা বেতন হবে পার্শ্বশিক্ষকদের। অন্যদিকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১০%-এর জায়গায় এবার ৩০% আসন সংরক্ষণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযাযী বর্তমানে রাজ্যে প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক মিলিয়ে মোট ৪৮০০০ পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত নিরাপত্তা ও ধাপে-ধাপে তাঁদের স্থায়ীকরণের কথাও বলা হয়েছে। এর সঙ্গে এনসিটিইর নির্দেশ মতো শিক্ষক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে তাঁদের স্থায়ীকরণে অনেকটা সুবিধা করে দেবে। পার্শ্বশিক্ষকদের ওই সভায় জানানো হয়েছে, ২০১৮-র মার্চ থেকে ওই বেতনবৃদ্ধি কার্যকর হবে।
রাজ্য শিক্ষাসচিবকে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রকের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি না ঘটালে সর্বশিক্ষা অভিযানের যাবতীয় অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপরই নড়ে বসে সরকার।
দেখে নেওয়া যাক, দেশে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগের ইতিবৃত্তান্ত:
১) ১৯৮৪ সালে হিমাচল প্রদেশে মূলত ভলেন্টিয়ার শিক্ষক হিসাবে এই ধরনের পেশার শুরু। পরবর্তীকালে ধীরে-ধীরে সমস্ত রাজ্যের স্কুলগুলিতেই পার্শ্বশিক্ষক বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়।
২) ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’ প্রকল্পের পর থেকেই সমস্ত রাজ্যে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত বজায় রাখার জন্য পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগের চাহিদা বাড়তে থাকে।
৩) সংশ্লিষ্ট রাজ্য নিয়োগ আয়োগগুলির মাধ্যমে স্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ বলে দ্রুত প্রয়োজন মেটাতে রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলগুলিতে চুক্তিভিত্তিক পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ হতে থাকে।
৪) Right to Education Act 2009 তৈরি হওয়ার পর ২০১০ সাল থেকে রাজ্যে পার্শ্বশিক্ষকদের কাজের মেয়াদ ৬০ বছর পর্যন্ত করে দেওয়া হয়।
৫) আমাদের রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকদের ২০১৯ সালের মধ্যে টিচার্স ট্রেনিং কোর্স শেষ করতে হবে, তাহলে তাঁদের স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করা যাবে।
৬) আমাদের দেশের প্রায় সব রাজ্যেই পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ হয়, যার মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণে হয়েছে মধ্যপ্রদেশে।
৭) বেশিরভাগ রাজ্যই প্যারাটিচারদের স্থায়ীকরণের দিকে এগোচ্ছে, যার মধ্যে হরিয়ানা রাজ্যের উদ্যোগ অন্যতম।
৮) পার্শ্বশিক্ষকদের মূলত নিয়োগ করে থাকেন জেলা স্তরের কমিটির মাধ্যমে স্টেট প্রজেক্ট অফিসার। এই কমিটিই মূলত পার্শ্বশিক্ষক, ভিআরপি, শিক্ষক-বন্ধু নিয়োগ করে থাকে।
৯) পার্শ্বশিক্ষকদের দায়িত্ব মূলত রেমেডিয়াল টিচিং, চাইল্ড ট্র্যাকিং, টিচিং লার্নিং মেটিরিয়াল প্রিপারেশন।
১০) প্রসঙ্গত, বেতন বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যে অনেকটা এগিয়ে আছে অন্য কিছু রাজ্য। যেমন অরুণাচলে পার্শ্বশিক্ষকরা পান প্রাথমিকে ২১১৭৫ টাকা ও উচ্চপ্রাথমিকে ২৬৫৪৩ টাকা, উত্তরাখণ্ডে প্রাথমিকে ১৩০০০ টাকা ও উচ্চপ্রাথমিকে ২০ হাজার টাকা, ছত্তিশগড়ে যথাক্রমে ১৫ হাজার ও ২৩ হাজার টাকা।