Site icon জীবিকা দিশারী

মাধ্যমিক পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন, উত্তর

Higher Secondary Exam, HS Exam

বিষয়বাংলা

শিক্ষকজয়ন্ত কুমার অধিকারী

বিদ্যালয়: কেন্দা হাই স্কুল

প্রতিবেদন রচনা (প্রশ্নের মান ): (১) “নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী”– এ বিষয়ে সংবাদপত্রের জন্য একটি প্রতিবেদন রচনা করো। (২) কোনো গ্রামীণ এলাকায় একটি সরকারি হাসপাতাল উদ্বোধন হল– এ বিষয়ে প্রতিবেদন রচনা করো। (৩) তোমার এলাকায় একটি পাঠাগার উদ্বোধন হল– এ বিষয়ে প্রতিবেদন রচনা করো। (৪) “রক্ত দান, জীবন দান” শিরোনামে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন রচনা করো। (৫) বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘শিক্ষক দিবস’ সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা করো। অথবা বিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিষয়ে শিরোনাম সহ প্রতিবেদন রচনা করো। (৬) “প্লাস্টিক বর্জন আমাদেরই বাঁচাবে”– এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন রচনা করো। (৭) ভাষা শহিদ দিবসে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মিলনের প্রয়াসকে বিষয় করে প্রতিবেদন রচনা করো। (৮) তোমার বিদ্যালয়ে আয়োজিত বিজ্ঞান প্রদর্শনী নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো। (৯) অতিবর্ষণে দক্ষিণবঙ্গ প্লাবিত– এ বিষয়ে সংবাদপত্রের জন্য একটি প্রতিবেদন রচনা করো। (১০) বে-আইনি পুকুর ভরাট নিয়ে সংবাদপত্রের জন্য একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

প্রতিবেদনপ্রতপ্রতিবেদন লেখার নমুনা:

১) বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটা প্রতিবেদন রচনা করো।

সাধারণ মানুষের দুর্দশার মূল কারণ বিদ্যুৎ ঘাটতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, পানাগড়, ১০ জানুয়ারি: লোডশেডিং এখন একটা নিয়মিত সমস্যা। এই লোডশেডিংয়ের জন্য সাধারণ মানুষের দুর্দশার শেষ শেষ নেই। লোডশেডিং এর মূলে আছে ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতি। এই ঘাটতির ফলে সাধারণ মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত। নার্সিংহোমের মুমুর্যু রোগীদের অপারেশন প্রায় বন্ধ। বিদ্যুতের অভাব নানা জায়গায় জল পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়ছে। আজ প্রায় ছয় মাস ধরে এই অবস্থা চলছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল পুজোর আগে এই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু সরকারি এই আশ্বাস বাস্তবে কোনো কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেনি। পুজোর সময় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগিয়ে আসে। বিদ্যুতের এই ঘাটতির কারণ হিসাবে নিম্নমানের কয়লার সরবরাহ, প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ না আসা, হুকিং ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়েছে। বজবজ ও অন্যত্র ইউনিটগুলি বসে যাওয়ার ফলে এই ঘাটতি বলেও সরকারি তরফে জানানো হয়েছে। লোডশেডিং এর অবস্থা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এক এক জায়গায় দু-তিন দিন কোনো বিদ্যুৎ থাকে না। যেখানে সারা রাজ্য জুড়ে বিদ্যুতের এমন অবস্থা সেখানে রাজ্য সরকার কিভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সাহস করছে তা সাধারণ মানুষ বুঝে উঠতে পারছে না। যাতে এই ব্যাপক ঘাটতির আশু সমাধান হয়, এটাই এখন সাধারণ মানুষের দাবী।

২) দ্রব্যের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন রচনা কর।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য জনজীবন বিপর্যস্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, পানাগড়, ১০ জানুয়ারি: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এখন একটা নিয়মিত ঘটনা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবন আজ বিপর্যস্ত। যেভাবে নিয়মিত লাফিয়ে লাফিয়ে জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে তার সাথে সাধারণ মানুষ তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না। ফলে সাধারণ মানুষের এখন প্রাণান্তকর অবস্থা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া যা এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত হারে বৃদ্ধি পেলেও দিন এনে দিন খাওয়া সাধারণ মানুষের অবস্থা প্রতিনিয়ত দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রায়দিনই স্থানে স্থানে আন্দোলন ও ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকার এখনও তেমনভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে রাশ টানতে পারছে না বরং দিনের পর দিন দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটেই চলেছে। রেশন দোকান থেকে নির্ধারিত মূল্যে দ্রব্য সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ধর্মঘট ডেকে তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তারা কতটা চিন্তা করে তা ভাববার সময় এসেছে এখন। সরকারি তরফে যদি অবস্থার উন্নতি না ঘটানো হয়, তাহলে পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

প্রবন্ধ (প্রশ্নের মান ১০): (১) ছাত্রজীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা। (২) সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা। (৩) নিয়মানুবর্তিতা ও শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা। (৪) চরিত্র গঠনে ধেলাধূলার ভূমিকা। (৫) ইন্টারনেটের উপযোগিতা। (৬) কন্যাশ্রী প্রকল্পের উপযোগিতা। (৭) জনমত গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা। (৮) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। (৯) বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য। (১০) তোমার প্রিয় লেখক/কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। (১১) কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। (১২) বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮। (১৩) বিজ্ঞান ও কুসংস্কার। (১৪) বিজ্ঞানের ব্যবহার ও অপব্যবহার। (১৫) বিশ্ব উষ্ণায়ন: ক্ষতি ও তার প্রতিকার। (১৬) গাছ লাগাও, প্রাণ বাঁচাও। (১৭) একটি নদীর আত্মকাহিনি। (১৮) একটি শহর বা গ্রামের আত্মকথা। (১৯) একটি কলমের আত্মকথা। (২০) তোমার জীবনের লক্ষ্য।

প্রবন্ধের নমুনা: বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু

ভূমিকা: বোস আইনস্টাইন পরিসংখ্যানের প্রবর্তক বিজ্ঞানচর্চা সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১ জানুয়ারি ১৮৯৪)। ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্থায়ী স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। এই বিজ্ঞানসাধক শুধু বাঙালির গর্ব নয়, সারা ভারতের গর্ব। বিজ্ঞানের নবদিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, দেশ আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাখায় ভর করে একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে যাচ্ছে, তবুও আমরা এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানীকে ভুলতে পারিনি, পারবও না।

জীবনী: পরাধীন ভারতের বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম কলকাতায়। অসাধারণ মেধাশক্তির অধিকারী, সংগীতে, দর্শনে ও সাহিত্যের একনিষ্ঠ অনুরাগী বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন পূর্ণতার সাধক। হিন্দু স্কুলে পড়ার সময় তিনি এক বাৎসরিক পরীক্ষায় ১০০ -র মধ্যে পেয়েছিলেন ১১০। বোস পরিসংখ্যানের সাহায্যে প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম মতবাদের ওপর নতুনভাবে আলোকপাত করে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষকের ভবিষ্যদ্বানী সফল করেছিলেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন (৫ম স্থান)। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র হলেন, শিক্ষক হিসাবে পেলেন জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে আই.এস.সি তে প্রথম হলেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে গণিত সাম্মানিক সহ স্নাতক হলেন এবং প্রথম স্থান পেলেন। মেধনাদ সাহা তাঁর সতীর্থ ছিলেন, তিনি হলেন দ্বিতীয়। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মিশ্র গণিতে এম.এস.সি তে প্রথম হলেন। এতেও মেঘনাদ হলেন দ্বিতীয়। তাঁর এই পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের রেকর্ড এখনও কেউ ভাউতে পারেনি।

কর্মজীবন: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে স্যার আশুতোষের আমন্ত্রণে বিজ্ঞান কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান ও মিশ্র গণিতের `লেকচরার’ হিসেবে যোগ দেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি রীডার পদে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র- `প্ল্যাঙ্কের সূত্র এবং সালোক কোয়ান্টাম প্রকল্প। প্রবন্ধটির মৌলিকত্বে আইনস্টাইন মুগ্ধ ও বিস্মিত হন। আইনস্টাইন মনে করেছিলেন, এই প্রবন্ধ পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করবেন। শুধু তাই নয়, আইনস্টাইন নিজে এই প্রবন্ধটির অনুবাদ করে জার্মান পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এরই ফলশ্রুতি হল `বোস- আইনস্টাইন পরিসংখ্যান’।

সম্মান: ১৯২৪-২৫ খ্রিস্টাব্দে তাই ইউরোপ যাত্রা ও আইনস্টাইনের সান্নিধ্য লাভ। এছাড়া জার্মানি ও ফ্রান্সের বহু বিজ্ঞানীর সঙ্গে মত বিনিময়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে তিনি পদার্থ বিজ্ঞান শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক পদে যোগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে `পদ্মভূষণ’ উপাঘি লাভ এবং ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি লাভ। ১৯৫৯ থেকে আমৃত্যু (১৯৭৪) তিনি জাতীয় অধ্যাপক রূপে স্বীকৃতি পান। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে `দেশিকোত্তম’ উপাধি প্রদান করেন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিনের জন্য উপাচার্য নিযুক্ত হন তিনি।

উপসংহার: শুধু বিজ্ঞানী হিসাবে নয়, তিনি ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ। বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সংগীত ও সাহিত্য চর্চাতেও তিনি সময় ব্যয় করতেন। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা স্মরণযোগ্য। তাছাড়া তিনি ছিলেন বড় মাপের মানুষ। তিনি ছিলেন এক হৃদয়বান, নিরহংকারী, ঋষিতুল্য মানুষ, ছাত্রবৎসলও ছিলেন। সারল্য ও মমত্ববোধ ছিল তাঁর সহজাত।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ১ নম্বরের এমসিকিউ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, বঙ্গানুবাদ, কাল্পনিক সংলাপ রচনা এবং ব্যাকরণের জন্য টেস্ট পেপার অনুশীলন করতে হবে।

Exit mobile version