শিক্ষা থেকে সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগর

schedule
2018-09-26 | 12:29h
update
2018-09-26 | 12:29h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

বাংলা ও বাঙালির নবজাগরণে যে কতিপয় মানুষ আত্মনিয়োগ করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের অগ্রণী একজন। বাংলা গদ্যের জনক না হলেও বাংলাভাষায় দাঁড়ি-কমার প্রয়োগে সুমার্জিত সুখপাঠ্য করে তোলার প্রথম প্রয়াস তাঁরই। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে সহজবোধ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন। প্রথম সার্থক গদ্যকার তিনিই। ১৮৫৫ সালে বাংলা নববর্ষের দিনে প্রথম বর্ণপরিচয় প্রকাশ করে তিনি বাঙালির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তার দু বছর আগে নিজগ্রামে অবৈতনিক বিদ্যালয় গড়ে সবার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। আজ থেকে দুশো বছর আগে মেদিনীপুরের এক অখ্যাত গ্রাম থেকে কলকাতা শহরে এসে শুধু নিজে অসাধারণ শিক্ষিত হননি, গোটা সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দিতে চেষ্টার অন্ত ছিল না তাঁর। তাঁর হাত ধরেই নারী শিক্ষার এক প্রবল ঝড় বয়ে গেছিল তাঁর সময়ে। তাঁর উদ্যোগেই ১৮৫৭-৫৮ সালে এক বছরে সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গে প্রায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। আজকের যে বেথুন কলেজয়িটে স্কুল থেকে বিদ্যাসগর কলেজের গোড়াপত্তন সেই প্রতিষ্ঠান তো গড়ে ওঠে তাঁরই অক্লান্ত প্রয়াসে। পাশে পেয়েছিলেন সে সময়ের আরও বহু শিক্ষানুরাগী মানুষকে। তাঁরাও কম স্মরণীয় নয়। এক কথায় সমাজ সংস্কারক, বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলনে বিদ্যাসাগর ছিলেন অগ্রণীর ভূমিকায়। এক কথায়, বাংলার নবজাগরণের পুরোধাপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর মেধা, পাণ্ডিত্য এবং দরিদ্র আর্ত মানুষের প্রতি সহানুভূতিই তাঁকে একদিকে ‘বিদ্যাসাগর’ অন্যদিকে ‘দয়ার সাগর’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। ১৮৩৯ সালে হিন্দু ল কমিটির যে পরীক্ষা হয়েছিল তাতে তাঁর পারদর্শিতা দেখে কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি প্রথম দিয়েছিলেন। তার আগে সে সময়ের অলংঙ্কার পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। সেই পরীক্ষায় প্রথম হবার সুবাদে পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছিলেন ‘রঘুবংশম’, ‘উত্তর রামচরিত’, ‘মালতীমাধব’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য সংস্কৃত বই। যে বইগুলি তিনি সহজপাঠ্য অনুবাদ করে বাঙালির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তারই ফল স্বরূপ একে-একে আমরা পেয়েছিলাম আখ্যানমঞ্জরী, কথামালা, সীতার বনবাস, কাদম্বরী, মেঘদূতম, হর্ষচরিত, কিরাতার্জ্জুনীয়, বাল্মিকী রামায়ণ প্রভৃতি ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদের পুস্তক। অসংখ্য উচ্চমানের পাঠ্যপুস্তকও। বিধবাবিবাহ প্রচলন হওয়া উচিত কিনা, বাল্যবিবাহ রোধ ইত্যাদি বিষয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছিলেন তেমনই তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব শিক্ষা সংস্কার। বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে যে অক্লান্ত সংগ্রাম চালাতে হয়েছিল তা আজকের দুনিয়ায়ৎ অনুমান করা কঠিন। ১৮৪১ কর্মজীবন শুরু। একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলার প্রধান পণ্ডিতের পদ। তারপরের ইতিহাস বিস্তৃত। সংস্কৃত কলেজ, বেথুন সোসাইটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই কোনো-না-কোনো ভাবে যুক্ত ছিলেন। নিজে উদ্যোগে সংস্কৃত ডিপোজিটরি প্রেস খুলে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে অনেক সাড়া জাগানো গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। সেই প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বই বেতাল পঞ্চবিংশতি। আর এই বইয়েই প্রথম বিরাম চিহ্নের ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা। ১৮৫৯ সালের ১ এপ্রিল পাইকপাড়া রাজার সহায়তায় মুর্শিদাবাদের কান্দিতে প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম ইংরেজি-বাংলা মাধ্যম স্কুল। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় গড়ে ওঠা প্রথম মেট্রোপলিটান কলেজই আজকের বিদ্যাসাগর কলেজ। মেদিনীপুরে তাঁর নামেই পরবর্তী কালে গড়ে উঠেছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁর নামাঙ্কিত বিদ্যাসাগর সেতু, রাস্তার নামের মধ্য দিয়ে তিনি আজও বাংলা-বাঙালির মানসে উজ্জ্বল। ১৮৬৪ সালের ৪ জুলাই ইংল্যান্ডের রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁকে সদস্য করে নেয়, যা খুব কম ভারতীয়ই এই সম্মানের অধিকারী। জন্ম ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০, প্রয়াণ ২৯ জুলাই ১৮৯১।

Advertisement

 

 

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
29.04.2024 - 15:42:23
Privacy-Data & cookie usage: