আজ ১৩ আগস্ট মারা গেলেন লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বয়স হয়েছিল ৮৯। বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সারিতেই তিনি রয়ে গেলেন। তাঁর রাজনৈতিক শিষ্টাচার শিক্ষণীয়। নিজস্ব বিশ্বাস ও মতাদর্শ থেকে কোনো দিন বিচ্যুত হননি। পেশাকে পাশে সরিয়ে রাজনীতিকেই জীবনের অঙ্গ করেছেন। বর্ণময় ও সফল একজন পরিপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠলেও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন আচার-আচরণে। শুধু রাজনৈতিক গণ্ডির মধ্যেই নয়, বৃহত্তর পরিসরেও মানুষের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। একবার-দুবার নয়, দশ বারের ভারতীয় লোকসভার সাংসদ এবং বামপন্থী ধারার ব্যক্তিত্ব সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ই প্রথম বাঙালি যিনি লোকসভার অধ্যক্ষ হয়েছিলেন (২০০৪-২০০৯)। ১৯৯৬ সালে পেয়েছিলেন সেরা সাংসদের পুরস্কার। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও সুমিষ্ট স্বভাবের জন্যই দলমতনির্বিশেষে সবার কাছে তিনি ছিলেন ‘সোমনাথদা’। বাবা নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন প্রথিতযশা ব্যারিস্টার, অখিলভারতীয় হিন্দুমহাসভার অন্যতম সংগঠক। পরে জ্যোতি বসুর সংস্পর্শে আসেন সোমনাথ। এবং বাম রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯২৯ সালের ২৫ জুলাই আসামের তেজপুরে জন্ম। কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশন, তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করে সোজা কেমব্রিজের হেসাস কলেজ, আইনের উচ্চতর পাঠের জন্য। ফিরে এসে কলকাতার হাইকোর্টে আইনজীবীর পেশা গ্রহণ। অন্তরের টানেই বামপন্থী রাজনীতিতে প্রবেশ। পেশার পাশাপাশি ক্রমশ রাজনীতিই পেল প্রাধান্য। ১৯৬৮-তে পুরোপুরি রাজনীতির অঙ্গনে। বামপন্থী পিতার শূন্য আসনে ১৯৭১ সালে সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসাবে জিতে সাংসদ হন। ১৯৮৯-২০০৪ পর্যন্ত বোলপুরের সাংসদ। আর এই বোলপুরই তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় ওতপ্রোতভাবে। রাস্তা ঘাট নির্মাণ থেকে উন্নয়নের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর উদ্যোগেই বোলপুরে গড়ে উঠেছিল প্রথম মহিলা কলেজ। শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্ব সামলেছেন বহু বছর। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বড় ক্ষত যদি হয় দল থেকে নির্বাসন তাহলে বড় লজ্জা ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পরাজয়, জীবনে মাত্র এই একবারই নির্বাচনে হার। সুবক্তা, অননুকরণীয় সুভদ্র এই রাজনৈতিক মানুষটির প্রয়াণে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জগতে শূন্যতা বাড়ল।