এবছরই উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছো? শুরু হবে কলেজ জীবন। এবছর যারা কলেজে ভর্তি হবে তাদের সামনে পরীক্ষা ও পঠন-পাঠন পদ্ধতিতে আসছে অনেক উদারতা, বিশেষত পরীক্ষায় ফেল করার কারণগুলি খতিয়ে দেখে আনা হচ্ছে বিষয় নির্বাচন ও পাশ-ফেল পদ্ধতির নানা পরিবর্তন। ইউজিসির নির্দেশ মেনে কোনো-কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এইসব নতুনত্ব চালু করে দিয়েছে, বাকিরাও শুরু করতে চলেছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাঠ্যক্রমে চালু হতে চলেছে বৃত্তিপাঠের বিষয়— কর্ম তথা শিল্পজগতের চাহিদার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও এবছর থেকে স্নাতক স্তরে একাধিক পরিবর্তন আনছে। সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠকে এরকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোনো-কোনো বদল গতবছর থেকে বাণিজ্য বিভাগে চালু হয়ে গেছে, এবার কলা ও বিজ্ঞান বিভাগেও চালু হবার কথা। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক কী-কী নতুনত্ব আসছে:
১) প্রথমেই বলে রাখা দরকার, আগে পার্ট ১, পার্ট ২ ও পার্ট ৩ তিন বছরে তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার তিন বছরের স্নাতক কোর্স পরীক্ষা হবে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মতো সেমেস্টার ভিত্তিক। তিন বছরে মোট ছয়টি সেমেস্টার। ১৫ থেকে ১৮ সপ্তাহ পড়ার পর একটি করে সেমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
২) এর থেকেও বড় বিষয় হল, কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে সেমেস্টারে ফেল করলে আটকে রাখা যাবে না। অর্থাৎ সেই সেমেস্টারে ফেল করলেও পরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আবার পরের সেমেস্টারে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। এভাবে ডিগ্রি কোর্স সম্পূর্ণ করার জন্য ৫ বছর সময় পাওয়া যাবে। বলা যেতে পারে, অনেক ছাত্র-ছাত্রী আগে অনার্স নিয়ে পড়াশুনা করলেও অনার্স কেটে যাওয়ার ভয় থাকত অনেকেরই। সেমেস্টার পদ্ধতিতে সেই ভয় নেই। ইউজিসির নিয়ম মেনেই এই নতুন পদ্ধতি আনা হচ্ছে।
৩) ছাত্র-ছাত্রীদের আরও একটি খুশির খবর, ১০০ নম্বরের একটি বিষয়ের পরীক্ষায় কলেজের হাতেই থাকবে ২০ নম্বর। যে সব বিষয়ে প্র্যাক্টিক্যাল নেই, সেখানে লিখিত পরীক্ষা ৬৫ নম্বরের, নন-ল্যাব বিষয়ের ক্ষেত্রে প্র্যাক্টিক্যালের জায়গায় থাকছে “টিউটোরিয়াল” ১৫ নম্বরের, কলেজে উপস্থিতির উপর থাকছে ১০ নম্বর এবং কলেজের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের উপর ১০ নম্বর। যে সব বিষয় প্র্যাক্টিক্যাল আছে তাতে ৫০ নম্বরের লিখিত ও ৩০ নম্বরের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা, কলেজে উপস্থিতির উপর থাকছে ১০ নম্বর এবং কলেজের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের উপর ১০ নম্বর। কলেজের হাতেই নম্বরের অনেকটা থাকার ফলে পরীক্ষা নম্বর তোলার জায়গা অনেক বেশি। মার্কশিটে নম্বরের বদলে থাকবে গ্রেডেশন। কেউ নম্বর বাড়াতে চাইলে আবার পরীক্ষা দিতে পারবে।
৪) বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলিতে সব মিলিয়ে ২৬টি বিষয়ে অনার্স, ২৪টি বিষয়ে পাস সাবজেক্ট হিসাবে পড়ানো হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবার পাস্ সাবজেক্ট পড়ার ক্ষেত্রেও অনেক শিথিলতা আনছে।
৫) বিজ্ঞান শাখার ছেলে-মেয়েরাও যাতে কলা বিভাগের কোনো বিষয় পাস সাবজেক্ট হিসাবে পড়তে পারে সেরকম পদ্ধতি আনা হবে। এরকম পদ্ধতিকে বলা হয় সিবিসিএস (চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম)। এমনকি সেই বিষয় যদি সংশ্লিষ্ট কলেজে নাও থাকে, তবে অন্য কলেজ থেকেও যাতে সেই বিষয় পড়তে পারে সেরকম ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হচ্ছে। পরে এরকম নিয়ম চালু হতে পারে।
৬) অনার্স পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে অনার্স পত্রের সঙ্গে পড়তে হবে জেনেরিক ইলেক্টিভ বিষয়। তাতে অনার্স -এর পাশাপাশি কী বিষয় নিয়ে পড়া যায় তার জন্য আটটি সাবজেক্ট কম্বিনেশন তৈরি হবে। সব বিষয়ে ক্রেডিট সমান নয়। যেমন বাধ্যতামূলক ভাষায় অর্থাৎ কম্পালসারি ল্যাঙ্গোয়েজ বিষয়ে ক্রেডিট ২ হলেও অনার্স পেপারে ক্রেডিট ছয়।
৭) স্নাতকোত্তর স্তরেও একটি উল্লেখযোগ্য সিধান্ত হল, যেসব কলেজে স্নাতকোত্তর কোর্স পড়ানো হয়, তারা আর পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারবে না, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্রের মূল্যায়ন এসবও করতে পারবে না, এসবের দায়িত্ব থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতেই।
বলা বাহুল্য, ক্রেডিট সিস্টেম, কোর্স শেষ করতে বেশি সময় পাওয়া ও মিশ্রবিষয় বাছাই ব্যবস্থায় অনেকটা মিল লক্ষ করা যায় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থার সঙ্গে। নতুন ব্যবস্থাগুলির কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে (http://www.caluniv.ac.in/news/news.html)।