“আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”
এই কয়টি শব্দবন্ধ বর্তমান পরিস্থিতে মনোবল বাড়িয়ে নতুন কিছু করার সাহস যোগাবার একমাত্র অবলম্বন। আর তার জন্য সবথেকে আগে পা বাড়িয়ে রয়েছেন যাঁরা, সেটা হলো আমাদের ছাত্রসমাজ। করোনা মোকাবিলায় সবথেকে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরাও। সাড়া জাগানো নানা অবদানের মাধ্যমেও।
সারা দেশে সামগ্রিকভাবে সবার প্রথম যে কাজগুলি প্রাধান্য পাচ্ছে, তা হল সংক্রমণ রোধ, অসুস্থদের সেবাদান প্রক্রিয়া এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে জরুরিভিত্তিক কর্মীদের নিরাপত্তার দিকটি খেয়াল রাখা। করোনা সংক্রমণ খুব অল্প সময়ের মধ্যে যে ভংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, সেটা মোকাবিলার জন্য আগে থেকে কোনো প্রস্তুতির সময় ছিল না। এহেন পরিস্থিতিতে চমৎকার কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রসমাজকে।
এর জন্যে প্রথমেই যাঁদের কথা উল্লেখ করতে হয়, তা হল আইআইটির ছাত্র-ছাত্রীদের কথা। আইআইটি, গুয়াহাটির ছাত্র-ছাত্রীরা, তাঁদের কেমিস্ট্রি ও বায়োসায়েন্স অ্যান্ড বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় তৈরি করেছেন, অ্যান্টি-ভাইরাল কোটিং সহ ওয়াটারপ্রুফ প্রোটেকটিভ গিয়ার। এর পাশাপাশি, ‘থ্রি-ডি প্রিন্টেড প্রোটোটাইপ’ সম্পূর্ণ মুখের বর্ম তৈরি করেছেন আইআইটি, গুয়াহাটির ডিজাইনার এক্সপার্টরা। শুধু তাই নয়, ছাত্ররা তৈরি করছেন, ১০ থেকে ১৫ লিটার ওজন বহনকারী ড্রোন, এমনকি কিছুদিনের মধ্যে ৫০ লিটার ওজন বহনকারী ড্রোন করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা, যা ওষুধ থেকে শুরু করে যে-কোনো এমার্জেন্সি প্রয়োজনীয় জিনিস দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল টেস্টিং। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে এই টেস্টিং কিটের চাহিদা বিশাল এবং তা বেশ খরচ সাপেক্ষ। আইআইটি দিল্লির ছাত্রছাত্রীরা ইতিমধ্যে কম খরচ সম্পন্ন টেস্টিং কিট নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে তার ট্রায়ালের কাজ চলছে।
আইআইটি দিল্লি এবং আইআইটি রুরকির ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার প্রস্তুত করা এবং তা বাজারজাত বা বিলিবণ্টণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। আইআইটি রুরকি ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫০ লিটার প্রাকৃতিক স্যানিটাজার প্রস্তুত করে, যা তাদের ক্যাম্পাস থেকে বিতরণও করেছে।
আমরা ইতিমধ্যে জানি, কেন্দ্রীয় সরকার একটি অ্যাপ তৈরি করেছে জনসাধারণের জন্য। ঠিক তেমনিই, আইআইটি বম্বের ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীরা মিলে তৈরি করেছেন একটি অ্যাপ যার নাম “করোনাইন” যার মাধ্যমে জিও-ফেন্সিং, কোয়ারেন্টাইন অ্যালার্ট সিস্টেম, সংক্রমিত সংক্রান্ত সতর্কতা দিতে সাহায্য করবে।
এবার আসা যাক, একটু অন্যদিকে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ইতিমধ্যে দেশের যুব ছাত্র সমাজের কাছে তাঁদের মতামত, উপদেশ ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ওয়েবসাইটে উপচে পড়ছে এরকম একাধিক কার্যকরী চিন্তা-ভাবনা বা উপদেশ সংক্রান্ত বার্তায়। এর বেশিরভাগটাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থভাণ্ডার থেকে রিলিফ ফান্ডের অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে, আয়ুর্বেদিক দ্রব্যের ব্যবহার, অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম থেকে মোবাইল মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এরকম নানাবিধ অভিনব উদ্যোগের পরমার্শ দেওয়া হচ্ছে অনবরত।
অর্থনৈতিক সংকট থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অবক্ষয় একাধিকবার দেশের তথা দশের স্বার্থে দেশের ছাত্রসমাজের এগিয়ে আসার উদাহরণ রয়েছে বহুক্ষেত্রে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা ব্রাত্য নয় তো বটেই, যথেষ্ট প্রশংসনীয়।
CORONA, Exam, Govt Exam