হায় ইতালি! হায় রোম!

schedule
2020-04-20 | 07:39h
update
2020-04-20 | 07:39h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

যে ইতালি করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে চিনকে টপকে গেছে, সেই ইতালির ইতিহাস, রাজধানী রোমের গৌরব বিশ্বময়। গত বছর এই ইতালিতেই এক চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার হয়েছিল যা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছে। ইতালির সানগিউলিয়ানা লেকের কাছ থেকে বিশালাকার একটা নীল তিমির জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে সেই তিমির দৈর্ঘ্য ছিল নাকি ৮৫ ফুট। ওজন ১৩০ থেকে ১৫০ টন। যার ওজন ছিল ১ লক্ষ ১৭ হাজার কিলোগ্রাম মতো। এত বড় তিমি আগে দেখা মেলেনি। যা নাকি ২১টা আফ্রিকান হাতির সমান ছিল। লম্বায় ছিল তিনটি বিশালাকার লরির সমান। এ পর্যন্ত যত জীবাশ্ম দেখা গিয়েছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। তিমিরা এতই বড় ছিল যে তার সম্পূর্ণ কঙ্কাল মাটি খুঁড়ে বের করতে  দু বছর লেগেছে। এটা প্রায় দশ লক্ষ বছরের পুরনো জীবাশ্ম। এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা।  সব থমকে গেছে। কেউ কেউ বলছেন কত মানুষকে কবরের বদলে জলেই ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতালির ইতিহাসে মর্মান্তিক।

 

এই ইতালির শিল্প সাহিত্যের ইতিহাস ঘাঁটলে চমকে উঠতে হয়। রাজধানী রোম ছাড়াও, মিলান, নেপলস, ফ্লোরেন্স, জেনোয়া, তুরিন এক একটা ঐতিহ্যবাহী শহর। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির। এখানেই জন্মেছিলেন মিকেলাঞ্জেলো, লিওন বাতিস্তার মতো ভুবনজয়ী শিল্পীরা। এখানেই রচিত হয়েছিল দান্তের বিশ্ববিশ্রুত “ডিভাইন কমেডি”। লুসিয়ানো পাভারত্তি, গুসেপ্পে ভারদি, রুগেইরোলিওনোকাভেল্লোর মতো চলচ্চিত্র পরিচালকরা।

Advertisement

 

এখানেই ১৮১৪ সালে এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ চরিত্রদের একজন নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে। সে এক ইতিহাসের বিশাল অধ্যায়। ইতালি থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে সুনাম অর্জন করেছে যে খাবারটি তার নাম এ প্রজন্মের মুখে মুখে। কে না মজেছে স্প্যাগেটি পিজ্জায়। এ দেশের জন সংখ্যার ৯৫ শতাংশ শিক্ষিত। কাপ্রিয়াতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। ইউরোপের মধ্যে একমাত্র ইতালিতে ভিসুভিয়াস, এত না, স্ত্রমলি প্রমুখ কয়েকটি জীবন্ত আগ্নেয় গিরি রয়েছে। আর ইতালিয়ান মার্বেল তো জগৎখ্যাত।

 

এমন দেশটির এ হেন বিপর্যয় যেন সভ্যতারই বিপর্যয়। রেনেসাঁ মানবতা বা ধ্রুপদী সভ্যতার প্রথম পাঠ শুরু হয়েছিল ইতালিতেই। যা রোম ফ্লোরেন্স ছুঁয়ে পরবর্তীতে পশ্চিমি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। রোমেই শুরু হয়েছিল একত্ববাদ খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে রোমান বহু ঈশ্বরবাদের। যা রোম সাম্রাজ্যের মসনদ নাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে এই রোমানরাই হাজার বছর ধরে খ্রিস্টধর্মের ধজা উড়িয়েছে। আজও ভ্যাটিকান চার্চের অবস্থান রোমে। অধিকাংশ খ্রিস্টান রোমান ক্যাথলিক।

 

এখানেই আসে রোমানদের কথা। রোমানদের উৎপত্তিই হয়েছিল ইতালিতে। রাজধানী রোমের নামানুসারেই নামকরণ করা হয়েছে রোমান নামে। রোম সাতটি পাহাড় দিয়ে ঘেরা এক আকর্ষণীয় শহর। মানব ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে ছিল রোমান সাম্রাজ্য। এখানেই অভ্যুত্থান জুলিয়াস সিজারের। মিশরের রানি ক্লিওপেট্রার সঙ্গে তাঁর প্রণয়ের কাহিনি তো সর্বজনবিদিত।

পুত্র অগাস্টাস যেন আরও দুর্বিনীত। রোম প্রজাতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ছিলেন শুধু নয়, পিতার নামের সঙ্গে যদি জড়িয়ে থাকে জুলাই মাসের ইতিহাস,  এই অগাস্টাস চেয়েছিলেন তাঁর নামে হোক অগস্ট। জুলাই মাস ছিল ৩১ দিনের। অগস্ট ছিল ৩০ দিনের,  অগাস্টাস জুলিয়াস চেয়ে কোনো অংশে কম নন,  সেটা প্রমাণ করতেই ফেব্রয়ারি থেকে একদিন কেটে ২৮ দিন করেন।

 

আসে ইতালির স্বর্ণযুগের সেইসব নাম। ভার্জিল, পেত্রার্ক, বোক্কচিও, মাতসিনি, গ্যারিবল্ডির নাম। এক এক জন যেন বিশ্ববিশ্রুত প্রতিভা। ফ্রাঞ্চেসকো পেত্রার্ক শুধু একজন কবি নন, তাঁকে মানব তন্ত্রের পিতা বলা হয়। তৈরি করেছিলেন ‘পিয়েত্রো বেম্বো নামে আধুনিক ইতালীয় ভাষা। তাঁর বিশ্ববিখ্যাত রচনা কানসোনিয়েরে। এনিড-এর লেখক ভার্জিল আজও পাঠ্য। যা রোমান সাম্রাজ্যের জাতীয় মহাকাব্যের মর্যাদা লাভ করেছিল।

 

ডেকামেরন, ফেমাস উওমেনস এর লেখক বোক্কাচ্চো ছিলেন কবি ও একজন মানবতাবাদী সংস্কারক।

শেষ হবে না অতীত ইতালির ঐতিহ্য ও অহঙ্কারের ইতিহাস খ্যাত নাম, ঘটনা ও ঐতিহাসিক কালপঞ্জির কথা।

 

আজ করোনা বিধ্বস্ত ইতালির দিকে তাকিয়ে মনে পড়ছে বাঁশিবাদক নিরোর কাহিনি। জ্বলন্ত রোমের সেই বিশ্ববিখ্যাত সুরেলা বাঁশির সুর আমাদের কান্না ঝরায়।

 

হায় রোম, হায় ইতালি!!!

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
22.04.2024 - 09:14:49
Privacy-Data & cookie usage: