নতুন বছর আসার সঙ্গে-সঙ্গে ছাত্র থেকে যুব, কর্মপ্রার্থী থেকে শুরু করে কর্মজীবী প্রত্যেকেই এক নতুন আশা নিয়ে পথ চলা শুরু করেন। একটি বছর ভালো–মন্দ কাটার পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মানুষটির কর্মস্থলের উন্নতি, কর্ম পরিবেশের পরিবর্তন, পরিকাঠামোগত উন্নতি এবং সর্বোপরি আয়বৃদ্ধি। সারা বিশ্বে নেট দুনিয়া, প্রযুক্তি, নতুন ধরনের পেশার জন্ম এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে তার নিরিখে একটু ঘেঁটে দেখা যাক আগামী বছরটি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কেমন।
শুরুতেই বলে রাখা প্রয়োজন, আগামী দিনে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, বস্ত্র, বিপণন যে–কোনো ক্ষেত্রই অত্যন্তভাবে টেকনোলজি নির্ভর হয়ে পড়তে চলেছে। আমাদের দেশের জিডিপির ৫০ % অসংগঠিত কর্মজগৎ। উল্টোদিকে সংগঠিত কর্মজগতের ক্ষেত্রে সারা ভারতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি এমএসএমই (MSME) ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে আপাতত ১০ % কর্মীদের হাতে–কলমে প্রশিক্ষণ থাকে। আগামী দিনে সরকার চাইছে, উন্নত থেকে উন্নততর প্রুযুক্তির সঙ্গে খাপ–খাইয়ে নেওয়া কর্মী তৈরি করতে। এবার সোজা কোথায় বলা যায়, প্রথাগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে প্রযুক্তিগত ট্রেনিংপ্রাপ্ত (আইটি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কিল্ড ট্রেনিং প্রমুখ) কর্মী বা প্রার্থীদের কর্মসংস্থানের জায়গা সর্বাধিক ও আবশ্যিক হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণত ছাত্র–ছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকদের একটা ধারণা থাকে, ছেলেমেয়েদের ২০–২২ বছর পর্যন্ত প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণ করে নিক, বাকি কর্মজীবন পড়ে রয়েছে ফিল্ড ট্রেনিং, প্রযুক্তিগত শিক্ষা নেওয়ার জন্য। কিন্তু যে হারে বা যতটা দ্রুততার সঙ্গে টেকনোলজি আপগ্রেডেশন হচ্ছে, তাতে কিন্তু স্কুল জীবন থেকেই এই ধরনের শিক্ষার সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাখতে হবে।
আরও একটি বিশেষ এবং ঊর্ধ্বমুখী সেক্টর–এর জন্য ছাত্র–ছাত্রীদের তৈরি থাকতে হচ্ছে। তা হল অনলাইন ইকোনোমি। ভারতের জিডিপিতে একটি বড় ছাপ ফেলতে চলেছে এই অনলাইন ইকোনোমি। অনলাইন ইকোনোমিক ইন্ডাস্ট্রি আগামীদিনের সব থেকে বেশি প্রতিশ্রুতিমূলক কর্মসংস্থানের জগৎ।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন সেক্টরে কীরকম পরিবর্তন হতে চলেছে আগামী বছরগুলিতে:
আইটি এবং বিপিএম সেক্টরে — ১০–২০% সম্পূর্ণ নতুন সংস্থান/পদ সৃষ্টি, ৬০–৬৫ % ক্ষেত্রে কর্মজগতের স্কিল সেকশনে সমূহ পরিবর্তন হবে, ২০–৩৫% সেকশন অপরিবর্তিত থাকবে।
অটোমোবাইল সেক্টরে — ৫–১০% সম্পূর্ণ নতুন সংস্থান/পদ সৃষ্টি, ৫০–৫৫% ক্ষেত্রে কর্মজগতের স্কিল সেকশনে সমূহ পরিবর্তন হবে, ১০–১৫% সেকশন অপরিবর্তিত থাকবে।
টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল সেক্টরে — ৫–১০% সম্পূর্ণ নতুন সংস্থান/পদ সৃষ্টি, ৩৫–৪০% ক্ষেত্রে কর্মজগতের স্কিল সেকশনে সমূহ পরিবর্তন হবে, ১৫–২০% সেকশন অপরিবর্তিত থাকবে।
ব্যাঙ্কিং ও ফিনান্সিয়াল সেক্টরে — ১৫–২০% সম্পূর্ণ নতুন সংস্থান/পদ সৃষ্টি, ৫৫–৬০% ক্ষেত্রে কর্মজগতের স্কিল সেকশনে সমূহ পরিবর্তন হবে, ২০–২৫% সেকশন অপরিবর্তিত থাকবে।
রিটেল সেক্টরে — ৫–১০% সম্পূর্ণ নতুন সংস্থান/পদ সৃষ্টি, ২০–২৫% ক্ষেত্রে কর্মজগতের স্কিল সেকশনে সমূহ পরিবর্তন হবে, ১৫–২০% সেকশন অপরিবর্তিত থাকবে।
* সূত্র: “ভারতের ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান-2022” [ ন্যাসকম(NASCOM) ও ফিকির (FICCI) যৌথ রিপোর্ট ]
কোন সেক্টরে আগামী দিনে পর্যাপ্ত সংস্থানের জায়গা থাকবে, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা রেখে এখন থেকেই এগোনো দরকার। শেষ কয়েক বছরে স্বাস্থ্য–পরিষেবা, শিক্ষা এবং পর্যটন সেক্টরে প্রযুক্তিগত ব্যবহারের নিরিখে আমূল পরিবর্তন হয়েছে, যা সরাসরি কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। এখানেই সরকারি বা অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগেও পরিকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলে তা আরও খানিকটা কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে।
এবার একটু সঙ্কটজনক বিষয় জেনে নেওয়া যাক। একদিকে, যেমন সময়ের তালে কর্মজগতের প্রসার ও পরিবর্তন ঘটছে, তেমনি বেকারত্বের বা কর্মহীনতার সমস্যাও আমাদের পিছু ছাড়ছে না। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন (ILO)-এর ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুকের রিপোর্ট বলছে, ২০১৯–এর মধ্যে ১.৮৯ কোটি মানুষ কর্মহীন থাকবেন আমাদের দেশে যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৯.৭৬% এবং ২০১৭–১৮–এর থেকে এর পরিমাণটাও বেশি। তবে এর পাশাপাশি যে পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, তার প্রায় ৭৭% হতে চলছে দুর্বল মানের কর্মসংস্থান।
সব মিলিয়ে কিছু না হওয়ার থেকে, দুর্বল মানের কাজের জায়গা তৈরি হলেও তা বর্তমান সময়ের কর্মপ্রার্থীদের কাছে আশাজনক বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে আগামী দিনে কাজের পরিসর, পরিমাণ ও আয় বাড়ুক এই চিন্তা দিয়েই শুরু হোক নতুন বছর।
Job in 2019, New Employment in Upcoming Year