ভারতের `স্যাটেলাইট ম্যান’

1199
0

উদুপী রামচন্দ্র রাও ভারতের `স্যাটেলাইট ম্যান’ হিসেবে পরিচিত। ভারতের মহাকাশ গবেষণার প্রাণপুরুষও বলা যেতে পারে। মহাকাশ বিজ্ঞানের চর্চায় যে নাম আগে উঠে আসে সেই বিক্রম সরাভাই-এর কাছেই প্রথম মহাকাশ নিয়ে গবেষণায় আত্মনিযোগ করেছিলেন মহাকাশ গবেষণাবিজ্ঞানী উদুপি রামচন্দ্র রাও। প্রথমে তিনি আলোক রশ্মি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে মহাকাশ গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।  তিনি শুধু একজন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীই ছিলেন না, তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বের বহু দেশ তাঁকে নানা সম্মানে ভূষিত করেছে। তিনি  বেঙ্গালুরুতে নেহরু প্ল্যানেটোরিয়াম এবং তিরুবনন্তপুরমে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইএসটি)র চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই ভারত ১৯৭৫ সালে প্রথম স্যাটলোইট “আর্যভট্ট” মহাকাশে প্রেরণ করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল।

১৯৭৬ সালে এই বিজ্ঞানীকে ভারত সরকার পদ্মভূষণ এবং ২০১৭ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। ২০১৩ সালে স্যাটেলাইট প্রফেশনাল ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি এক অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটনে `হল অব ফেম’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসাবে এই সম্মান পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনটিক্স ফেডারেশন (আইএএফ) তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়। এমন সম্মানের অধিকারী প্রথম ভারতীয়।

কর্নাটকের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানীর প্রথম শিক্ষাজীবন কাটে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উদুপি থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি করে বিক্রম সরাভাইয়ের পরিচালনায় আহমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে আমেরিকার ডালাস ইউনিভার্সিটি সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং তাঁর নির্দেশনায় ১৯৭৫ সালে প্রথম ভারতীয় উপগ্রহ “আর্যভট্ট” দিয়ে শুরু করে পরবর্তীকালে ভাস্কর, অ্যাপল, রোহিণী, ইনস্যাট -১ এবং ইনস্যাট -২ সিরিজের বহুমুখী উপগ্রহ এবং আইআরএস-১ এ এবং আইআরএস-১ বি দূরবর্তী সংবেদনশীল উপগ্রহ সহ ১৮টিরও বেশি উপগ্রহ ছিল  যোগাযোগ, রিমোট সেন্সিং এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিষেবা সরবরাহের জন্য নকশা এবং চালু করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউ আর আর রাও একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিযুক্ত মহাকাশ বিজ্ঞানী যিনি ভারতে মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যোগাযোগ এবং দূরবর্তী সংবেদনে এর বিস্তৃত প্রয়োগে মূল অবদান রেখেছিলেন।

 ১৯৮৪ সালে স্পেস কমিশনের সচিব ও মহাকাশ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরে, অধ্যাপক রাও রকেট প্রযুক্তির বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছিলেন, যার ফলে এএসএলভি রকেট এবং অপারেশনাল পিএসএলভি উৎক্ষেপণ যানটি সফলভাবে চালু হয়েছিল। উপগ্রহে মানচিত্রে ভারতের বিশেষ অবদানকে তুলে ধরতে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁরই উদ্যোগে ১৯৯১ সালে ক্রায়োজনিক প্রযুক্তি বিকাশ ঘটে। মহাজাগতিক রশ্মি, মহাকাশে প্রযুক্তি বিষয়ক প্রায় ৩৫০০টিরও বেশি প্রবন্ধ বা রচনা প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন জার্নালে। রয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উপগ্রহ বিষয়ক গ্রন্থ। ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় বোলোগোনা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ২৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।

এই বিজ্ঞানীরই সম্মানে ৮৯তম জন্মবার্ষিকী হিসেবে গুগল ডুডুল তাঁকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছে।  উদুপী রামচন্দ্র রাওয়ের জন্ম ১৯৩২ সালের ১০ মার্চ। প্রয়াণ ২০১৭ সালে। আজকের মহাকাশ গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সেদিনের এই বিজ্ঞানীর অবদানকে ভোলার নয়। তিনি ইসরোরও চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।