শুরু করেছিলেন ভরত নট্টম দিয়ে কিন্তু তিনি হয়ে উঠলেন `লেডি শচিন’। মহিলা ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার।
তিনি ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের `লিঞ্চপিন’। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেট মাঠে সমানে দাপিয়ে ব্যাট করে গেছেন। শুধু বড় রানের ইনিংসই গড়েননি, প্রতি ক্ষেত্রেই একের পর এক প্রথম রেকর্ডধারী হয়ে উঠেছেন এই `লেডি শচিন’ খ্যাত মিতালি রাজ।
সর্বশেষ রেকর্ড তাঁর শুক্রবার লক্ষ্ণৌয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতীয় তৃতীয় ওয়ানডে খেলার সময় এই মাইল ফলকটি এল। মিতালি রাজ তাঁর ক্রিকেট জীবনে ১০ হাজার রান অতিক্রম করলেন। প্রথম মহিলা ভারতীয় হিসেবে। আর মাত্র কয়েকটা রান (২৬ ) ছুঁলে ভারতের মিতালি ক্রিকেট বিশ্বের সর্বোচ্চ মহিলা ক্রিকেটারের রান সংগ্রহকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
সামনে রয়েছেন ইংল্যান্ডের শার্লট এডোয়ার্ডস। ভারতের মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে সবচেয়ে বেশি রান পাওয়া ৩৮ বছর বয়সি মিতালি রাজ।
জন্ম ১৯৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর। রাজস্থানের যোধপুরে। ১০ বছর বয়সে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। ১৭ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেট মঞ্চে অভিষেক আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে। সেই ইনিংস ওপেন করেন এবং ১১৪ রান করেছিলেন।
তাঁর ব্যাট-প্যাডে ক্রিজে যাওয়া মানেই এক নির্ভরযোগ্যতা ও সাহস সঞ্চার সতীর্থদের মধ্যে। কপিবুক ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে নামলেই তাঁর নির্ভরযোগ্য ব্যাটিং ও পিচে টিকে থাকার আত্মবিশ্বাস সমগ্র দলকে সব সময় উৎসাহ ও সাহস জুগিয়েছে। তিনি শুধু দক্ষ ব্যাটসম্যানই নন, একজন ভালো লেগব্রেক বোলারও।
সেকেন্দ্রাবাদের কস্তুরবা গান্ধী জুনিয়র উইমেন’স স্কুলে ইন্টার মিডিয়েট পড়তে-পড়তেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি। ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে-খেলতেই চোখে পড়ে যান প্রশিক্ষক জ্যোতিপ্রসাদের। অনেকেই তাঁর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি। একে-একে ক্রিকেট বিশ্বে অনুপ্রবেশ এবং জয় করে নেওয়া একেকটা মাইল ফলক। পাশে পেয়েছিলেন পরিবারকে। ভারতীয় রেলের হয়ে মিতালি তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন।তারপর এয়ার ইন্ডিয়া সহ অনেক সংস্থারই নেতৃত্ব দিয়েছেন। সব যে সহজ পথে এসেছে তা নয়। একবার এক প্রশিক্ষকের কাছে অন্যায় আচরণ ও বৈষম্যমূলক ব্যবহারেরও শিকার হয়েছেন তিনি।
দেখে নেওয়া যাক তাঁর রেকর্ডের তালিকা:
প্রথম ৫০টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৭ নং ওয়ান ডে টেস্টে (ওডিআই)। যা একমাত্র পুরুষদের মধ্যে জাভেদ মিয়াঁদাদের কৃতিত্বে আছে।
প্রথম মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে ২০০টি ওডিআই খেলেছেন।
প্রথম ভারতীয় এবং বিশ্বে পঞ্চম ১০ হাজার রান সংগ্রহকারী।
ভারতের হয়ে ১০৯টি ওয়ান ডে।
২০০৩ সালে পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কার।
২০০৪ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের মহিলা কিরেকটার দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০০৬ সালে তিনি ইন্ডিয়া উইমেনকে ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০১৫ সালে প্রথম মহিলা `উইজডেন ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার’ সম্মান।
তাঁর নেতৃত্বেই পর-পর দুবার এশীয় কাপে অংশগ্রহণ ও জয়।
২০১৫ সালে পদ্মশ্রী সম্মান অর্জন।
২০১৭ সালে ভোগ পত্রিকার ইউথ স্পোর্টস এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড।
এবার তাঁর ঝুলিতে নতুন রেকর্ড। এখন দেখার ৩৮ ছোঁয়া এই মিতালি আর কোন রেকর্ড রেখে যান ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের জন্য।
আইপিএল শুরুর প্রাক্কালে এই মহিলার এমন উজ্জ্বল রেকর্ড গোটা বিশ্বের কাছে এক নতুন ঝলক যেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কাছাকাছি সময়েই।