শুক্রবার ১৩ দুর্ভাগ্যের দিন?

1240
0

আরেকটা দিন এল ১৩ জুলাই ও শুক্রবার। শুক্রবার এবং সেটা যদি হয় ১৩ তারিখ তাহলে আজও অনেকেই একটু পিছিয়ে যান। এই বিশ্বায়নের যুগেও। অনেকেই তার প্রথম চাকরিতে ‘আনলাকি থার্টিনে’ জয়েন করতে চান না। অনেকে বিয়ের তারিখও এড়িয়ে যেতে চান। ভ্রমণযাত্রাতেও ১৩ তারিখ অনেকের কাছে ছিল অনীহার। আনলাকি থার্টিন বলে কথা। ১৩  ১৩ অক্ষরের নামও রাখা ব্রিটিশ সার্ভিস জার্নাল ১৯৯৩ সালে নোটিস দিয়ে জানাল ‘ইজ ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ ব্যাড ফর ইয়োর হেলথ’। ভারতীয় রেল গেজেট কয়েক দশক আগে হাসান-মাঙ্গালোর ট্রেন লাইন পথের ওয়ালটেয়ার-কিরানডুল টানেলের ১৩ নম্বর টানেলটির সংখ্যার পরিবর্তে ১২-এ রেখে ছিল। আর ফিফার ফর্মুলা ওয়ান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় ১৩ নম্বরের কোনো গাড়ি রাখা হয় না। কয়েকশো বছর ধরে ১৩ তারিখ এবং শুক্রবার দিনটি দুর্ভাগ্যের তারিখ বলে চিহ্নিত করে বিশেষত সেই মাসটি যদি হয় জুলাই। শুধু জুলাই মাস নয় শুক্রবার এবং ১৩ পৃথিবীর অনেক উল্লেখয্যেগ্য স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী। নাসার মহাকাশ যাত্রার সেই দিনের যাত্রী কল্পনা চাওলা মহাকাশে দুর্ভাগের শিকার, বিলীন হয়ে গেলেন। তারিখটা ছিল ১৩। আর ১৯৯৭ সালের ১৩ জুন দিল্লির উপহার সিনেমা হলে প্রায় একশো মতো মানুষ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। দিনটা ছিল শুক্রবার। ১৩ তারিখ এবং শুক্রবার পশ্চিমি সংস্কারের একটা দুর্ভাগ্যজনক দিন হিসেবে চিহ্নিত। বীর আলেকজান্ডার নিজেকে দেবতার আসনে বসাতে চেয়েছিলেন। সাম্রাজ্যের ভূমিতে ১২টি স্বমূর্তি স্থাপন করিয়েছিলেন আর ১৩তম মূর্তিটি গড়ার পরই তাঁর মৃত্যু। তেরোর গেরোয় সেদিন বীর আলেকজান্ডারও। আর জেসাস ক্রায়েস্ট? পৃথিবীর স্মরণীয় শুক্রবার। ১২ জন খ্রিস্টকে ক্রুশে ঝোলানোর পর ১৩তম ব্যক্তিটি হলেন স্বয়ং তিনি। দুর্ভাগ্যের ১৩। গুড ফ্রাইডে। এ প্রসঙ্গেই উল্লেখ্য লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ‘দ্য লাস্ট সাপার‘ স্মরণীয়, সেটাও ছিল শুক্রবার।

এই সব নানাবিধ কারণেই অনেক মানুষ ১৩ সংখ্যাটিকে অশুভ বা ‘আনলাকি’ বললেও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। না থাকলেও শুক্রবার এবং ১৩ তারিখটিকে আজও অনেক দেশ অশুভ বলেই মনে করেন। গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে মাসের ১৩ তারিখটি অশুভ বলেই চিহ্নিত। প্রতি বছর অন্তত একবার এই তারিখ এবং বার একই দিনে আসে। কোনো-কোনো বছর আবার একই বছরে তিন বার পর্যন্ত হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার এবং জুলাই ১৩ পড়েছিল শুক্রবার। এ বছরও দুবার অর্থাৎ এপ্রিল ১৩ ছিল শুক্রবার এবং ১৩ জুলাই হল শুক্রবার। ঐতিহাসিকদের মতে ১৩ তারিখের এই অশুভ ভাবনা এসেছে জেসাসের ক্রুশবিদ্ধ হবার দিন থেকে। এই সংস্কার বা ভয়ের বৈজ্ঞানিক একটা নাম আছে। ডাক্তারি পরিভাষায় এই ভয়কে ‘পারাস্কেভিডক্যাট্রিয়া ফোবিয়া’ বলে। গ্রিক পারাস্কে অর্থ শুক্রবার আর ডেকাত্রেই অর্থ ‘তেরো’ থেকে উদ্ভূত এই শব্দটি। এই পারাস্কেভিডক্যাট্রিয়া ফোবিয়া বিভিন্ন দেশেই ছড়িয়ে আছে। এর শিকড় অনেক গভীরে। অনেক বইও লেখা হয়েছে এই ফ্রাইডে থার্টিন নিয়ে। ১৯০৭ সালে টমাস ডব্লিউ লোসনের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিনথ’। সাংবাদিক হেনরি লুথারল্যান্ড এডোয়ার্ড-এর ‘গিওচিনো রসিনি’কে নিয়ে লেখা উপন্যাস স্মরণীয়। যেখানে নায়িকা ১৩ তারিখে মারা যান আর সেটাও ছিল শুক্রবার। শুক্রবারের সংস্কার ও দুর্ভাগ্য অনেক দেশ মানলেও হিস্পানিক ও গ্রিক সংস্কৃতিতে মঙ্গলবার ও ১৭ তারিখ দিনটি বেশি অশুভ। সেখানে মহাকাশে মঙ্গল বা মার্সের লড়াই হয়েছিল, তাই বলা হয় গড অব ওয়ার। ইতালীয় সংস্কৃতিতে ১৩ নয়, শুক্রবার ১৭ অশুভ বা দুর্ভাগ্যের দিন।