১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা প্রথম ভারতীয় মহিলা

111
0
Ashalata Devi

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, আশালতা দেবী ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের রক্ষণে একটি প্রবাদপ্রতিম খেলোয়াড়।

এই মুহূর্তে খেলা অনুরাগীদের চোখ কাঠমান্ডুর মাটিতে। সেখানে সাফ গেমসে ভারতীয় ফুটবলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আশালতাদেবী।

ভারতের হয়ে ১০০টি আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলা প্রথম ভারতীয় মহিলা হয়ে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আরও একটি পালক যোগ হল।

সেই মণিপুর যা সব সময়ই খবরের শিরোণামে রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। আগুন এবং ধ্বংস এবং গুলির লড়াই।

গোটা মণিপুর আজ এক আগুনের মধ্য দিয়ে চলা রাজ্য। সেই রাজ্যেরই মেয়ে আশালতা।

তিনি ভারতের প্রথম ১০০ তম ম্যাচ খেলা ফুটবলার হিসেবে এই মুহূর্তে উল্লেখযোগ্য নাম।

পুরুষে যদি সুনীল ছেত্রী তবে মহিলা প্রথম ১০০ ম্যাচ খেলা ফুটবলার।

১৯৯৩ সালের ৩ জুলাই মণিপুরের ইম্ফলে জন্ম।  আশালতার বয়স তখন সবেমাত্র ১৩।

সেই সময়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তে পড়েত ছেলেদের ফুটবল খেলা দেখে  তরুণী আশালতার মনে হয় সেও এই ফুটবল খেলবে।

তার অতীত চারণয়া তিনি বলেছেন, “আমি সবসময় ছেলেদের খেলতে দেখেছি কিন্তু মেয়েদের খেলা দেখিনি। আমি স্কুলের একজন শিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম যে আমিও খেলতে চাই।

তিনি বলেছিলেন যে এ খেলা একার খেলা নয়।  একটি দল দরকার। হতাশ হবার মেয়ে নয়।

বন্ধুদের খেলার জন্যে রাজি করিয়ে দল গঠন করতে সসক্ষম হয়েছিল। তার পর আর পেছন পিরে তাকাতে হয়নি।

এ ভাবেই শুরু হয়েছিল আজকের ভারতীয় মহিলা জাতীয় দলের নায়ক আশালতা দেবীর খেলার জীবন।

২০০৮ সালে ১৫ বছর বয়সে,  আশালতা অনূর্ধ্ব ১৭ ভারতীয় মহিলা দলে যোগ।

সে বছরই ডিফেন্ডার হিসেবে খেলার সুযোগ এবং জায়গা তৈরি করে নেওয়া। মিড ফিল্ডার হিসাবে খেলতে খেলতেই ডিফেন্ডার হযে ওঠা।

ভারতের প্রাক্তন আন্তর্জাতিক এবং মহিলা দলের কোচ চাওবা দেবীর জেদের উপর মণিপুরি ক্লাব ক্রিফসা এফসি-তে খেলার সময় ডিফেন্সে পাকাপাকি জায়গা করে নেওয়া।

২০১৯ সালে মর্যাদাপূর্ণ এএফসি-র   প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত।  বর্তমান ভারত অধিনায়ক ইতিমধ্যেই নিজেকে সেরা ফুটবল খেলোয়াড়দের একজন হিসাবে প্রমাণ করেছেন।

ভারতের হয়ে ১০০টি আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলা প্রথম ভারতীয় মহিলা হয়ে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আরও একটি পালক যোগ করলেন কাঠমান্ডুর মাটিতে।

কাঠমান্ডুতে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু। প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি পাকিস্তান –ভারত।

ভারতের উদ্বোধনী ম্যাচের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে এক ইতিহাস তৈরি করলেন।

তিনি ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রির পরে ১০০টি আন্তর্জাতিক ক্যাপ অর্জনকারী দ্বিতীয় ভারতীয় ফুটবলারও হয়ে উঠলেন।

সুনীল ছেত্রী ১৫১টি ম্যাচ খেলে এই বছরের শুরুতে অবসর নিয়েছেন।

আশালতা দেবীর কৃতিত্ব ও উপাধি

মার্চ ২০১১ । ঢাকায় প্রাক-অলিম্পিক ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিনিয়র অভিষেক হয়।

সেই থেকে আশালতা ভারতীয় দলে সেন্টার-ব্যাক পজিশনকে নিজের করে নিয়েছেন।

তিনি ভারতীয় দলের একজন অংশ ছিলেন যেটি ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের স্বর্ণপদক এবং

পরপর চারবার সাফফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন- ৩০১২, ২০১৪,২০১৬ এবং ২০১৯।

কিংবদন্তি বেম্বেম দেবীর কাছ থেকে ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার নেওয়ার পর থেকে আশালতা সফলভাবে ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করেছেন।।

২০১৫ সালে, আশালতা দিভেহি প্রিমিয়ার লিগে মালদ্বীপের ফুটবল ক্লাব নিউ রেডিয়েন্টের জন্যও চুক্তিবদ্ধ হন।

উল্লেখ্য, বেমবেমের পরে বিদেশি ক্লাবের হয়ে খেলা দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা।

এ ছাড়াও তিনি ইন্ডিয়ান উইমেনস লিগ (IWL), প্রিমিয়ার ঘরোয়া মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতা তিন বার জিতেছেন-২০১৮-১৯  সেতু এফসি-র সঙ্গে, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ গোকুলাম কেরালার সাথে।

তিনি ২০১৮-১৯ মৌসুমের জন্য এআইএফএফ মহিলা বর্ষসেরা খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছিলেন।

২০১৯ সালে, আশালতা দেবী পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না এর লি ইং এবং চূড়ান্ত বিজয়ী জাপানের সাকি কুমাগাই-এর সাথে এএফসি বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারের জন্য চূড়ান্ত তিন খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন।

একজন প্রাক্তন মহিলা ফিফা বিশ্বকাপ বিজয়ী এবং রৌপ্য পদক বিজয়ী। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক।

আশালতা ছাড়া আর কোনো ভারতীয় মহিলা এই সম্মানে সম্মানিত হননি।১৭ অক্টোবর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নেমে অধিনায়ক আশালতা দেবী ১০০টি  আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা প্রথম ভারতীয় মহিলা ফুটবলার হয়ে উঠলেন।

৩১ বছর বয়সি এই মণিপুরী ২০১১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকায় প্রাক-অলিম্পিক টুর্নামেন্টে ভারতে অভিষেক করেছিলেন এবং তারপর থেকে আর থেমে থাকেননি। Ashalata Devi