ডঃ বিধানচন্দ্র রায় : ভারতীয় চিকিৎসা জগতের পথিকৃৎ

1060
0
Bidhan Chandra Ray, Doctor's Day

কিছু কিছু মানুষের কর্ম সাধনা তাঁকে মহত্তম করে তোলে শত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে তাঁরা জীবনের অভীষ্টের পথ তৈরি করে নেন কেউ কেউ তাঁর সমগ্র জীবন ব্যয় করেন মানবকল্যাণ সাধনায় সেই মানব কল্যাণ সাধনায়ই ব্রতী হয়েছিলেন বিধানচন্দ্র রায় যাঁর নাম উচ্চারণ করতে গেলে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ই (Dr. Bidhan Chandra Ray) বলতে হয় তিনি তাঁর কর্ম সাধনায়ই স্বনামে চিহ্নিত হয়ে আপামর মানুষের কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছেন তাঁর কর্মগুণেই ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তান ম্যাজিস্ট্রেটই হবেন এমন কথা কিন্তু না, তিনি সে পথে না গিয়ে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন এই ভাবনায় গেলেন ডাক্তারি পড়তে শুধু তো পড়া নয়, একেবারে বিলেত থেকে এমআরসিপি (MRCP) থেকে  অফআরসিএস (FRCS) ডিগ্রিও আয়ত্ত করে নিয়েছিলন তত্কালীন বিদেশ ফেরত এক বাঙালি ডাক্তার কম গৌরবের নয় বিশেষ করে পরাধীন ভারতে, যখন সুচিকিৎসা অভাবে বহু মানুষ দুরারোগ্য রোগে প্রাণ হারাত, যখন শুধুই শ্বেতাঙ্গ চিকিত্সকের ভিড়, যখন সাধারণ মানুষের তঁদের কাছে পৌঁছনো দুরূহ ছিল এমনই এক সময়ে বাংলা পেয়েছিল বিধানচন্দ্র রায়ের (Dr. Bidhan Chandra Ray) মতো এক মহতী ডাক্তারকে তাঁর সময়ে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিত্সক রূপে বিদেশি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বর্তমানে এই দিনটি চিকিৎসক দিবস (Doctor’s Day) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। 

সারা দেশে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ১২ হাজার ক্লার্ক নিয়োগ

বাংলার তৎকালীন সমাজ পেয়েছিল তাঁদের মনের কথা পড়তে পারেন এমন এক ডাক্তারকে যিনি শুধু রোগির চিকিৎসাই নয়, গরিব মানুষের কাছে তিনি ধন্বন্তরী হয়ে উঠেছিলেন আপামর বাঙালির কাছে সেদিন তিনি রোগির প্রধান অবলম্বন যেন তাঁকে ঘিরে তাঁর সুচিকিৎসার মহানুভবতার কথা ঘিরে অজস্র কাহিনি বাংলার সমাজ জীবনে তখন থেকেই তাঁর চিকিৎসার গুণেই তিনি কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন চিকিৎসক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা তিনি একদিনও বিস্মৃত হননি নীলরতন মেডিকেল কলেজ (NRS Medical College), আরজিকর (RG Kar Hospital) প্রভতি হাসপাতালে তাঁর সুচিকিৎসার খ্যাতি সেদিন ছড়িয়ে পড়ে তাঁর চিকিৎসার গুণেই শুধু চিকিৎসাই নয়, তাঁর কর্মসাধনা তাঁর দেশপ্রেম, তাঁর স্বদেশ ভাবনা তাঁকে বাংলার রাজনীতির মঞ্চেও টেনে এনেছিল দেশবন্ধুর সানুগ্রহে সাহচর্যে স্বরাজ্য দল, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  সহ তৎকালীন বহু উচ্চপদের দায়িত্ব সামলানোই শুধু নয়, দেশ হিতার্থে তাঁর স্বমহিমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সামনের দিকে 

দেশপ্রেমের মূল্য দিতে হয়েছে কারাবরণ করে তবু তিন বিস্মৃত, হননি তাঁর আদর্শ সত্যনিষ্ঠ পথ থেকে যেদিন তিনি বংলার প্রত্যক্ষ রাজনীতির অঙ্গনে হাজির হলেন সেদিন থেকেই তাঁর দুচোখে এঁকে দিয়েছিল এই বাংলাকে নতুন রূপ দিতে যখন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন তখন বাংলার রাজনৈতিক সমাজ জীবনে এক প্রবল ঢেউ  দ্বিখণ্ডিত বাংলার লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল অসহায় মানুষের স্রোত এই বাংলার বুকে গড়ে তুললেন লবণহ্রদ (Salt lake), কল্যাণী উপনগরীর মতো নগরী একদিকে নতুন নতুন বাসস্থান অন্যদিকে শিল্প নতুন কর্ম সংস্কৃতির সন্ধানেই গড়ে উঠল দুর্গাপুর ইস্পাতনগরী, চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার মতো নানান উদ্যোগ তাঁরই পরিকল্পনায় গড়ে উঠল হরিণঘাটা দুগ্ধ প্রকল্প, রাষ্ট্রীয় পরিবহন ব্যবস্থার মতো  কর্মদ্যোগ বাংলা বাঙালির নতুন নতুন উদ্ভাবনের সন্ধানে ব্রতী হয়ে উঠলেন তিনি সেদিন বাংলাকে সর্বক্ষেত্রেই এক নতুন উদ্দীপনায় নতুন উজ্জীবনে গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন সেই কর্মকাণ্ডের কারণেই তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গেলে  রূপকার এর শিরোপা ভারত সরকার এই কর্মদ্যোগী এই মানুষটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ভারত রত্ন সম্মানে সম্মানিত করল সেদিন শিল্প শিক্ষা সর্বক্ষেত্রেই তাঁর অবদান আজও স্মরণীয় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ, পুরুলিয়া, রহড়া, নরেন্দ্রপুরে প্রাচীন ভারতীয় আদর্শে আশ্রমিক পরিবেশ রামকৃষ্ণ মিশনের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁরই উদ্যোগে সেদিন বাংলার শিক্ষার মানচিত্রে এক নব সংযোজন হয়ে উঠেছিল সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে স্মরণীয় হয়ে রইল তাঁর নাম তাঁর (Dr. Bidhan Chandra Ray ) সহায়তা না পেলে সেদিন হয়তো সত্যজিৎ রায়েরপথের পাঁচালি” চলচ্চিত্র তৈরি হত কিনা সন্দেহ বাঙালি আবিষ্কার করেছিল এক বিশ্বেবরেণ্য পরিচালককে, পেয়েছিল বিভূতিভূষণের অবিস্মরণীয় রচনার নতুন করে পরিচয় এই মহান মানুষের জন্ম মৃতু্য একই দিনে বর্তমানে এই দিনটি চিকিৎসক দিবস ( Doctor’s Day ) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তাঁর মতো মহতী কর্ম সাধনায় নিমগ্ন চিকিৎসক সমাজহিতৈষী মানুষের প্রয়োজন অনেক বেশি বেশি করে যিনি বাংলাকে নতুন নতুন দিশা দেখাবে                 

Bidhan Chandra Roy, Happy Doctor’s Day