বর্তমান বিশ্ব দিন দিন যেমন জেট গতিতে এগোচ্ছে তেমনই নানান ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়ে উঠছে দক্ষতার।
তা সে তুমি একজন ছুতোর মিস্ত্রি হও কিংবা এয়ারকন্ডিশন মেকানিক হও-না কেন। যদি তুমি সেই ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে পারো তাহলে তোমার পথ কেউ আটকাতে পারবে না।
ঠিক তেমনই শিক্ষাক্ষেত্রই হোক বা স্বাস্থ্যকর্মীই হোক, মূল কথা দক্ষতা। শুধু কাজের ক্ষেত্রই নয়, যে-কোনো ক্ষেত্রেই একবিংশ শতাব্দী দক্ষতাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
যদি কেউ নিজের নিজের ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে তাহলে এই বিশ্ব কাজের দুনিয়ায় তাকে সর্বাগ্রে সাদরে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
চাই আত্মবিশ্বাস এবং যে কাজ করতে উদ্যোগী সেই কাজে একাত্ম বা দক্ষতা।
বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর অর্থনীতি এবং প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে গেছে।
সেই পরিবর্তনের পথ ধরেই চাকরি করার ক্ষেত্রগুলিতেও নতুন ধরনের দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে।
ফলে নিয়োগকারীরা এটা ধরেই নিচ্ছেন যে শিক্ষার্থী বা কর্মপ্রার্থীরা দক্ষতাগুলো শিখেই কমক্ষেত্রে প্রবেশ করবে।
মনে রাখতে হবে, বর্তমান দিনে চাকরির যোগ্যতার সংজ্ঞা আগের দিনের তুলনায় পালটে গেছে।
অতীতে একজন চাকরিপ্রার্থী একটা চাকরি পেয়ে একই জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতেন।
স্থিরতা ও চাকরির নিরাপত্তা চাইতেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম চায় আরও অনেক বেশি। চায় কাজে আনন্দ, চায় দ্রুত উন্নতি।
তাই কোনো ভাবেই দক্ষতা অর্জনকারী কোনো কর্মী এক জায়গায় বা এক কর্মক্ষেত্রে স্থির থাকতে চান না।
দ্রুত তাঁরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চাকরির ক্ষেত্র পরিবর্তন করতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে পিছপা হন না।
সেই অর্থে বলা যায় একদিকে চাকরিদাতাদের প্রত্যাশা যেমন বদলাচ্ছে অন্যদিকে তেমনই চাকরিপ্রার্থীদের উচ্চাশার কারণেই এক ক্ষেত্র থেকে আরেক ক্ষেত্রে স্থান বদল করতে তারা ভাবতে বেশি সময় নিচ্ছেন না।
কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে দু-চার বছর কাজ করেই আরও উচ্চ সন্ধানে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানি বা কর্মক্ষেত্র বদল করছেন।
আর এটা করতে পারছেন শুধুমাত্র তাঁর নিজের দক্ষতার কারণেই। যা অতীতে ভাবাই যেত না।
বর্তমান অর্থনীতি শুধুমাত্র শিল্পনির্ভর অর্থনীতিই নয়, বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে অনেক নতুন নতুন দিকে কর্মক্ষেত্র প্রসারিত।
সেই প্রসারিত ক্ষেত্রের দিকেই কর্মপ্রর্থীরা `পেশাভিত্তিক’ কোর্সের দিকেই বেশি করে ঝুঁকছেন।
এবং সেই পথেই নিজের দজ্ক্ষতা প্রমাণ করে জীবনের পথে এগিয়ে চলেছেন। নানান `প্রফেশনাল’ কোর্স’ তৈরি হয়েছে বর্তমান যুগে।
অসংখ্য ছাত্রছাত্রী তাই শুধুমাত্র কয়েকটা ক্ষেত্রেই আটকে না থেকে নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স করে জীবন জীবিকার পথে হাঁটতে শুরু করেছেন এই নতুন দুনিয়ায়।
এরমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি সাক্ষরতা বা দক্ষতা অন্যতম। তারই পাশাপাশি দিন দিন বাড়ছে সৃজন দক্ষতা, নতুনত্ব সৃষ্টির দক্ষতা, তথ্য দক্ষতা, গণমাধ্যম বিষয়ক দক্ষতা, কেরিয়ার দক্ষতা।
সে কারণেই বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বা সমস্যা সমাধানের দক্ষতার (বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) চাহিদা বর্তমান কাজের দুনিয়ায় তুঙ্গে।
এই দক্ষতাগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলি হল : সৃজন দক্ষতা, ডিজিটাল সাক্ষরতা কেরিয়ার দক্ষতা।
এই দক্ষতাগুলিকে আধুনিক কালের শিক্ষার অন্যতম চাবিকাঠি বলে ধরা হয়ে থাকে।
এগুলি ছাড়া শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ মনে করা হচ্ছে। অতএব সমস্ত ছাত্রছাত্রীকেই ভবিষ্যত জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রথম থেকেই নিবিড়ভাবে নিজেকে কর্মক্ষেত্রে `সেলেবেল কমোডিটি’র মতো অপরিহার্য করে তৈরি করতে দক্ষতা বাড়াতেই হবে।
এবং আধুনিক কর্মক্ষেত্রের বাজারে তাই দক্ষ কর্মীর কোনো মার নেই।
সময় পালটে গেছে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের কেরিয়ারে দক্ষ হয়ে উঠতে দ্রুত নিজেকে যে-কোনো বিষয়েই দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।
প্রমাণ করতে হবে তুমি যেটা জানো সেটা পুরোপুরি জানো। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেই কাজ করতে পারবে। তাহলে কাজের বাজারে তুমিই তোমার নিজের ভবিষ্যত নিজেই তৈরি নিতে পারবে।
তা যে কাজই হোক। মোটর মেকানিক থেকে জাহাজ তৈরির ইঞ্জিনিয়ার সবক্ষেত্রেই চাই দক্ষতা।
এটাই সঠিক সময় সঠিক ভাবে দক্ষ হিসেবে নিজেকে অপরিহার্য করে তোলার। এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে উচ্চশিক্ষা না প্রফেশনাল দক্ষতা।