Site icon জীবিকা দিশারী

ঝড়ের ইতিবৃত্ত, নামার্থ


রেমাল ঝড় আমাদের জীবনে যেন আরেকবার গভীর সতর্কবার্তা দিয়ে গেল। আমরা প্রত্যক্ষ করলাম এই ঝড়ের ভয়াবহতা এবং তার ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি।

এর থেকে একটা বিষয় শিক্ষণীয়, আমাদের আরও সচেতন হতে হবে, যে-বার্তা আবহবিজ্ঞান দিয়ে চলেছে। মনে রাখতে হবে, সব ঝড় কিন্তু ক্ষতিকর নয়।

কিছু কিছু ঝড় ক্ষতিকর, সেগুলি আমরা দেখতে পাই। যেগুলি জলভাগ ছেড়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। তা না হলে সমুদ্রমধ্যে ঝড় কিন্তু সংঘটিত হয়েই থাকে।

দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে বছরে গড়ে ৮০ টিরও বেশি ঘূর্ণিঝড় হয়। তার অধিকাংশই জলস্তরে উচ্ছ্বাস ঘটিয়ে বিলীন হয়ে যায়।

আর সেইসব ছাড়িয়ে যেগুলি স্থলভাগে আছড়ে পড়ে সেগুলির সম্মুখীন হয় পৃথিবীর মানুষ। তারই সঙ্গে লড়াই মানুষের, জীবজন্তুর।

সহজভাবে বললে প্রকৃতির সঙ্গে প্রকৃতির লড়াই। সেই ঝড় আঘাত হানে, ক্ষতি সাধন করে।

দুর্যোগ, ক্ষতি হয় বটে, এই ঝড় আবহাওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীতে তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে।

দুরন্ত বেগে ঘুরতে-ঘুরতে আসে বলেই আমরা বলি ঘূর্ণি ঝড়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটি‌ওরোলজির বিজ্ঞানীদের অভিমত,

সমুদ্রে জলের তাপমাত্রা ২৬.৫ সেলসিয়াসের ওপরে উঠলেই ঘূর্ণি ঝড় সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হয়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এখন দিন-দিন যে হারে বিশ্ব

উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে চলেছে তাতে সমুদ্রের জলস্তর যত উষ্ণ হবে ততই এমন ঝড়ের সৃষ্টি হবে।

আর সাগরের তাপমাত্রা সম্পর্কে দীর্ঘদিন সজাগ বার্তা দিয়ে আসছে, আই পি সি সি বা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ।

এই ঝড়-বাতাসের বা গতিবেগের নিরিখে সাইক্লোন, সুপার সাইক্লোন, টাইফুন, টর্নেডো, হারিকেন― বিভিন্ন নামে অভিহিত।

বাতাসের গতিবেগ ২২০ কিমি বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপারসাইক্লোন’ বলে। বাতাসে গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ থেকে ১১৭ কিমির মধ্যে থাকে তখন তা এমনি ঝড়।

আর সেই গতিবেগ যখন ১১৭ কিমি অতিক্রম করে যায় তখন তা হারিকেন। এই হারিকেন আবার পাঁচটি ভাগে বিভক্ত।

এখানেই বলা ভালো, এই গতিবেগ নির্ধারক হিসেবে সাফির- সিম্পসন স্কেল নামে পরিচিত।

কোন ঝড় কোথায়: হারিকেন ক্যারিবিয়ান সাগরে বেশি সংঘটিত হয়। সাইক্লোন আরব সাগর, বঙ্গোপসাগরে দৃষ্ট হয়।

টাইফুন চিন সাগরে দেখা যায়। উইলি উইলি ঝড় উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। ঝড়ের তাণ্ডব লীলার ইতিহাস অনেক পুরনো।

তখন সেইসব ঝড়ের কোনো নাম ছিল না। তখন নানা ঘটনা থেকে ঝড়ের নাম ঠিক হত।

কোনো ঝড়ে কোনো জাহাজ ডুবে গেলে সেই নামে হত ঝড়ের নাম। এক সময় ঝড়গুলোকে নম্বর

দিয়ে চিহ্নিত করা হত। তাতে অনেক অসুবিধা দেখা দিত। সে কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ

শুরু হয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে যে মহাসাগরে ঘূর্ণি ঝড় তৈরি হয় তার সন্নিহিত দেশগুলি ঝড়ের নামকরণ করে। পৃথিবীতে

মোট ১১টি সংস্থা এই নাম ঠিক করে পালা করে। ২০০০ সালে ঝড়ের নামকরণের জন্য প্রথম নিয়ম বানানো হয়, তাতে ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন

ও ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলি যেমন বাংলাদেশ ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান,

শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড রয়েছে। উক্ত দেশগুলির থেকে ৮টি করে নাম নেওয়া হয়েছিল।

২০১৮ সালের পর নতুন করে আরও পাঁচটি দেশ যুক্ত হয়েছে। সেই দেশগুলি হল ইরান, কাতার, আরব আমিরশাহী, ইয়েমেন। Cyclone history

Exit mobile version