দক্ষতা বনাম ডিগ্রি

550
0
Govt Jobs 2024

আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি ভবিষতে একটা সুনির্দিষ্ট পথে জীবন নির্বাহ করার পদক্ষেপ হিসেবে। বিভিন্ন ক্লাসের ধাপ পেরিয়ে এসে যখন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা গ্র্যাজুয়েশন করি তখনই আমাদের মধ্যে শুরু হয় পড়াশোনার শেষে একটা চাকরির সন্ধান।

কেউ-কেউ গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই চাকরির পথের সন্ধান করেন বা প্রিপারেশন নেন, আবার কেউ-কেউ আরও উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করেন। বড় চাকরির জন্য।

আমরা এই মুহূর্তে এসে পড়েছি  আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে। যেখানে কম্পিউটার আমাদের মেধা বা কাজের অনেক অংশের দায়িত্ব বহন করছে। আর এই সময়েই সব থেকে বড় প্রশ্নটা উঠে আসছে কাজের দুনিয়ায় দক্ষতা বনাম ডিগ্রির বিষয়টি।

চাকরির দুনিয়ায় এই প্রতিযোগিতার বাজারে দেখা যাচ্ছে অনেকেই অনেক উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে পাশ করেও বাস্তবিক উপযুক্ত কাজের ক্ষেত্রে অসফল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বড় ডিগ্রি রয়েছে কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবের কারণে তা তাদের উপকারে আসছে না বা কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

এখানেই আসছে দক্ষতার বিষয়টি। এক সময় আমরা যখন প্রথম কমপিউটারের হদিশ পেলাম, তখন অনেকেই শুধু আতঙ্কিতই হইনি, কর্ম সংকোচনের কথা ভেবে প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু সময় আমাদের শিখিয়ে দিল যে কমপিউটার ছাড়া বর্তমানে এগিয়ে চলা কঠিন।

তাই এক সময় হু হু করে কমপিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। ক্রমশই উতসাহী মানুষ কমপিউটারে যত দক্ষ হয়ে উঠল ততই তার সামনে কাজের নানা পথ খুলে গেল।

শুধু কাজের সন্ধানই নয়, এখানে উঠে আসে দক্ষতার বিষয়টিও। একজন ব্যক্তি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক তত্ত্ব, তথ্য সংগ্রহের বিদ্যা শিখলেন মৌলিক শিক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু সেই শিক্ষার সঠিক প্রয়োগ দিন দিন আধুনিক বিশ্বে দ্রুত পালটাতে লাগল। এক দিকে যেমন তত্ত্ব শেখা খুবই জরুরি, তেমনই অন্য দিকে সেই তত্ত্ব প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জনও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখন দক্ষতাকেই ডিগ্রির সম্মান দেওয়া হচ্ছে। যে যত বেশি যে বিষয়ে দক্ষ, চাকরির বাজারে তার কদর তত বেশি। তাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি যে-কোনো বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলা। তা সে গাড়ি সারাইয়ের কাজ হোক বা কমপিউটার প্রস্তুতই হোক বা বিমান, ট্রেন চালানোর দক্ষতাই হোক।

কাজের দুনিয়ায় এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি প্রয়োজন দক্ষতার। এই দক্ষতা অর্জন করেই অনেক নারীই আজ `যুদ্ধজাহাজ’ থেকে শুরু করে কমপিউটার চালিত ট্রেন, বিমান চালকের সম্মান অধিকার করে নিতে পারছেন।

বিদ্যালয় প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণাত্মক মানসিকতা তৈরি করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরাও ডিগ্রির সন্ধানে পড়াশোনা চালিয়ে যা্ন, কিন্তু, ডিগ্রি নিয়ে কী করতে চায় তা বুঝতে না পেরে অনেকেই দ্বিধান্বিত। কিন্তু কাজের দুনিয়ায়, চাকরির সাক্ষাতের সময় যখন তাদের কাছ থেকে দক্ষতার প্রমাণ চাইলে অনেকেই বিভ্রান্ত হন।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে তাই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিষয়টিও আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এবং গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই আরও প্রয়োগভিত্তিক করে তোলার জন্য শিক্ষামহলের বিশেষজ্ঞরা নানান ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার শেষে, সঠিক চাকরির পথের সন্ধান তৈরি করে দিতে।

শুধু তাই নয়, বিশ্বের বড় বড় কোম্পা্নিগুলি নিজেদের প্রয়োজনেই দক্ষ কর্মী তৈরি করে নিচ্ছে।  যেমন অ্যাপল,  গুগল এবং আইবিএম-এর মতো কোম্পানিগুলি উপযুক্ত মেধা এবং দক্ষতার সাথে নন-গ্রাজুয়েটদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে।

এই সংস্থাগুলি নিজেদের স্বার্থেই অ্যাকাডেমিক  পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপ্রেন্টিস থেকে দক্ষ কর্মী বানিয়ে নিচ্ছে। যেখানে কর্মীরাও নিজেদের অনেক বেশি দক্ষ হিসেবে তৈরি করে নিতে পারছে কর্মক্ষেত্রে।

দক্ষতা অর্জন বনাম প্রশিক্ষণ:

প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা অর্জনের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে৷ প্রশিক্ষণ হল দক্ষতা অর্জনের ধাপটিকে শেখায়। মৌলিক বিষয়গুলিকে শেখায়। কিন্তু সেই শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে যে বিষয়টি আপনার পছন্দ সেই বিষয়টিতে আপনাকে দক্ষ হতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে কেউ কম্পিউটার ব্যবহারে সম্পূর্ণ নতুন, সে প্রথমে মাউস, কীবোর্ড এবং কম্পিউটার পরিচালনার মৌলিক বিষয়গুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবে।

তার পর সে কোড এক্সেল, ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট, টাচ টাইপিং থেকে কোডিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পেতে থাকে।  এই শেখার ক্ষেত্রে যিনি যত দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন তিনিই তত নিজেকে কাজের ক্ষেত্রে সফল হবেন।

এই সফলতা শুধু কমপিউটার নয়, যে-কোনো বিষয়েই দক্ষতা অর্জনই বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি। তা সে বিদেশি ভাষা রপ্ত করাই হোক, বা শিক্ষক হয়ে ওঠাই হোক। নিজেকে প্রস্তুত করেই তো একেক জন একেক বিষয়ের যেমন ইতিহাস, ভূগোল, ম্যাথ, ইংরেজির দক্ষ শিক্ষক হয়ে ওঠেন।