বিদেশি ভাষা শিখে কাজের সুযোগ নানাভাবে

728
0

অনেকেরই চোখে স্বপ্ন থাকে বিদেশ যাত্রার। তবে সেই চিন্তাকে আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বিদেশি ভাষা শিখে সেখানেই চিরস্থায়ী হয়ে যাওয়ার ভাবনাটাও মন্দ নয়।

তাছাড়া মাতৃভাষার বাইরে আরেকটি বিদেশি ভাষা শেখা থাকলে কিছু-কিছু চাকবি বা স্বাধীন পেশার ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়, যেমন আইনসভা-আদালত-বিদেশ দপ্তর এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জে ইন্টারপ্রেটর বা দ্বিভাষীর কাজ, ছোট-বড় প্রকাশনার অনুবাদকের কাজ, স্বাধীন বা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ট্যুরিস্ট গাইড, বিদেশি গবেষকদের কর্মসহায়তা, দামি হোটেল-বিমানপরিবহণ-বিদেশবাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদিতেও নানা কাজে।

দেশ-বিদেশের স্বাধীন বা চুক্তিভিত্তিক কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে ঘরে বসে অনলাইনেও, আছে অজস্র লিঙ্ক। বিদেশি ভাষা শেখাটা অনেকের কাছে শখের জিনিস, শখ থেকে পেশা। বিদেশি ভাষা শিখে পেশার জগতে প্রবেশের আলাদা আকর্ষণও আছে দীর্ঘদিন ধরে।

ভাষাগত জ্ঞানবৃদ্ধি, নিজের ব্যক্তিত্ব গঠন বা শখ মেটানোর পাশাপাশি নতুন ভাষা শিখে বিদেশে বা এখানকারই বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজের সুযোগ খোঁজার প্রবণতা আজকের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান।

এমনিতেই যে-কোনো পেশা বা কাজের ক্ষেত্রে ভালো কমিউনিকেশন তৈরি করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের কারণে বিদেশি ভাষাগুলি শিখে পেশায় প্রবেশ করার জায়হা আমাদের দেশেও তাই বাড়ছে।

 

কী ধরনের কোর্স রয়েছে?

ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করা যেতে পারে। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরেই নিজের পছন্দমতো বিদেশি ভাষা নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়া যেতে পারে।

স্নাতক কোর্স করা থাকলে সংশ্লিষ্ট ভাষাতে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সুযোগ বেশি থাকে। ভাষা এমনই একটা বিষয় যার পড়াশুনা গোড়া থেকে শুরু করা উচিত। সেই কারণে স্নাতক স্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে মনাযোগী হলে ভবিষ্যতে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অসুবিধা হয় না।

স্কুল স্তরে অনেক বোর্ড থেকে বিদেশি ভাষা সংযুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে, যাতে স্কুল স্তর থেকেই ভাষাটা রপ্ত করা যেতে পারে। তবে স্নাতক স্করে পড়াশুনা করার পর স্প্যানিশ, লাতিন ইত্যাদি কোনো ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কার্সও অনেক কাজে লাগে।

ভাষা শিক্ষার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকলে নির্দি্ষ্ট কোনও ভাষা নিয়ে গবেষণার কাজে যুক্ত হওয়ারও সুযোগ থাকছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের নানা কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফেশিয়েন্সি টেস্টও নেওয়া হয়ে থাকে।

তবে এর আগে ভাষাশিক্ষার প্রতি মনোযোগ ও নিষ্ঠা থাকা দরকার। যে দেশের ভাষা নিয়ে পড়াশুনা করা হবে, সেই দেশের সংস্কৃতি ও সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি।

 

কোথায় পড়াশুনা করা যায়?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ ভাষা নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে এবং চিনা, ফরাসি, জার্মান, কোরিয়ান, পার্শি, স্প্যানিশ, রুশ নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়ানো হয়ে থাকে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, কোরিয়ান, জাপানি, চিনা ভাষা নিয়ে সার্টিফিকেট এবং ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়ে থাকে।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরব, ফসারি, জার্মান, ইতালিয়ান, জাপানি, পার্শি, রুশ নিয়ে ডিপ্লোমা ও অ্যাডঙান্সড ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ফরাসি, জার্মান, চিনা, জাপানি, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, আরবিতে ৬ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স, ২ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়ে থাকে।

ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে আরবি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয়।

কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এ ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, জাপানি, চিনা, লাতিন, পার্শি, স্প্যানিশ ইত্যাদি ভাষা শেখানো হয়ে থাকে।

 

কী ধরনের কাজ করতে হয়?

বিদেশি ভাষা শেখার পর সবথেকে বেশি কাজের সুযোগ রয়েছে ইন্টারপ্রেটর হিসাবে। একজনের ভাষাকে অন্যজনের কাজে বোধগম্য করার জন্য তার ভাষায় রূপান্তরের কাজ করতে হয়। মিটিং, কনফারেন্স, মৌখিক কথাবার্তার ক্ষেত্রে ইন্টারপ্রেটরদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট ভাষা সম্বন্ধে তাঁদের যথেষ্ট দক্ষ এবং সতর্ক থাকা জরুরি।

 

পেশার চাহিদা কেমন?

অর্থতৈনিক উন্নতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বহু বিদেশি কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কাজ শুরু করেছে। নানা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন ও উদ্যোগের কাজও হচ্ছে।

ফলত এই সমস্ত কোম্পানিগুলিতে নানাভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছে বিদেশি ভাষা জানা তরুণ-তরুণীরাও। যে দেশের সংস্থা সে-দেশের ভাষা জানা থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যেতে পারে সংস্থার অন্যান্য পদের কাজেও।

বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা বিদেশের মাটিতে পসরা শুরু করার জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফেশনালদের কাজে লাগাচ্ছে। একাধিক ভাষার উপর একাধিক কোম্পানি বিপিও বা কল সেন্টারের কাজ শুরু করেছে।

পাবলিক রিলেশন বা ম্যানেজমেন্টের কাজেও নির্দিষ্ট ভাষায় গ্র্যাজুয়েট বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী ছেলে-মেয়েদের কাজে লাগানো হচ্ছে। সরকারি ক্ষেত্রে বিদেশ মন্ত্রকের বিভিন্ন বিভাগ, দূতাবাস, ট্যুর এজেন্সি, এয়ারলাইন্স, হসপিট্যালিটি ইন্ডাস্ট্রি, হাটেল ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজের অভাব নেই।

তবে এর বাইরেও ভাষা শেখার পর শিক্ষকতার পেশাও বেছে নেওয়া যেতে পারে। দেশের বাইরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ভাষার দেশেও কাজের জায়গা করে নেওয়া যেতে পারে।

foreign language study