নির্বাচন ও মানবাধিকার

208
0
Lok Sabha Election 2024

এই মুহূর্তে বিশ্বের জনসংখ্যার নিরিখে এবং আয়তনে বিশাল দেশ ভারতে অষ্টাদশ নি্র্বাচন সংঘটিত হচ্ছে। ফলাফল বের হবে ৪ জুন। গত কয়েক মাস ধরে এই নির্বাচন ঘিরে নানা কথা, নানা প্রতিশ্রুতি, নানা বিরোধ।

ভারতবর্ষ সুবিশাল গণতন্ত্রের দেশ। সেই দেশের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ভোটাধিকারপ্রাপ্ত জনগণের ভোটের নিরিখেই দেশের পরিচালন ক্ষমতা নির্ধারিত হবে।

গঠিত সংবিধান দ্বারা পরিচালিত প্রধান রাষ্ট্রপতি দেশের সরকার নির্বাচনে জয়ী দলকে রাষ্ট্র পরিচালনার দাযিত্ব অর্পণ করবেন।

নির্বাচন একটা প্রক্রিয়া। যেখানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মতানুযায়ী নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাসে ভোটে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।

যাতে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে মত প্রয়োগ করে একটা সুস্থ শক্তিশালী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনায় সহায়তা করতে পারে।

তা সে যে মতাদর্শেরই দলই হোক। যে দেশের সরকারের স্থিতি যত বেশি সে দেশের সরকার দেশের মানুষের মানোন্নয়নের জন্যে কাজ করতে পারে বেশি।

তাই প্রত্যেক জনগণেরই সরকার গঠনে একটা বড় দায়িত্ব থাকে। উলটো দিকে দেশের সরকারেরও দায়িত্ব থাকে দেশের প্রতিটি জনগণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা প্রদান করা।

সামাজিক বৈষম্যের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেশের নাগরিকের উন্নয়নের দিকটি দেখা। তা শিক্ষা হোক, স্বাস্থ্য হোক বা চাকরির পথ প্রশস্ত করাই হোক।

কাজের সুযোগ তৈরি করায় যে সরকারের যত বেশি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে, পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকে, সেই সরকার তত বেশি  শক্তিশালী ও স্থায়ী হয়।

বাস্তব অভিজ্ঞতার বিষয় হিসাবে প্রত্যেক নাগরিকের নিজ দেশের সরকারে অংশ নেওয়ার অধিকার মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

অতএব প্রত্যেকরই তাদের দেশের সরকারে অংশ নেবার অধিকার রয়েছে। প্রত্যেকরই নিজস্ব রাজনৈতিক দল বা সংগঠনে যোগদান করা বা অন্যদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।

প্রত্যেকেরই পৃথকভাবে এবং অন্যদের সাথে দলগতভাবে অধিকার রয়েছে নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করার। কিন্তু রাজনীতি ও রক্তক্ষয় যেন প্রতিটা নির্বাচনেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।

দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলি ক্রমশই এতটাই অহিষ্ণুতার পরিচয় দেয় যে তা কখনও কখনও আইন-আদালত এবং সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়ায়। এমনকী সময়ে সময়ে ক্ষমতাসীন দল নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিরোধী দল তো বটেই কখনও কখনও ব্যক্তি কণ্ঠস্বরও রোধ করে সরকার।

এই কণ্ঠরোধ খেলায় কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই সমান ভাবে নিজেদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে। তার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে।

শুধুমাত্র সরকারের বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করার জন্য মাসের পর মাস বছরের পর বছর অপরাধীর তকমা নিয়ে কারাগারে দিন কাটানোর অভিজ্ঞতাও অনেকের।

এমনকী দেশে বিদেশে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তি নয়, সাংবাদিকরাও শিকার হন। সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার কারণে হাজার হাজার সাংবাদিক বন্দি রয়েছেন। কখনও কখনও রাজনৈতিক কারণে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটে।

দেশে বিদেশে শুধুমাত্র নির্বাচন এবং রাজনৈতিক কারণে যত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানুষের নিরাপত্তার ক্ষতি হয় তা দৃষ্টান্তনীয়।

বিশ্বের নানা প্রান্তের আপামর মানুষ এর শিকার। ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম নয়। সম্প্রতি বিরোধী দলগুলির জোরালো দাবি যে ক্ষমতায় আসীন সরকার ই়ডি, সিবিআই এর মতো স্বায়ত্তশাসনাধীন শক্তিশালী সংস্থাগুলিকে দেশের বিরোধী দলগুলিকে কোণঠাসা করতে, কণ্ঠ রোধ করতে কাজে লাগিয়েছে।

এত সব প্রতিবাদের মধ্যেও দেশে বৃহৎ নির্বাচন হয়ে গেল। কোন দল জয়ী হয়ে সংসদের দখল নিয়ে দেশ পরিচালনা করবে তা শুধু কয়েক দিনের অপেক্ষা। এখন দেখার নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের রাষ্ট্রপরিচালকরা দেশের মানু্ষের শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান এর পাশাপাশি নাগরিক নিরাপত্তা ও তাদের মানোয়ন্নের দিকটিতে কতটা সজাগ ও কর্তব্য পালন করে।

Lok Sabha Election 2024