মণিপুর

schedule
2023-05-08 | 17:00h
update
2023-05-09 | 13:19h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

প্রতিবেদক: ভাস্কর ভট্টাচার্য

জনগোষ্ঠীর আগুনে জ্বলছে মণিপুর। বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, অফিস যানবাহনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত ৩ মে থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে দিন দিন বাড়ছে মৃতের সংখ্য। প্রায় তেইশ হাজার মানুষ ঘরছাড়া।

জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা এবং নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। রাজ্যে জাতি সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সংখ্যা বাড়তেও পারে।

পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মণিপুর রাজ্যে নিট পরীক্ষা বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ বছর নিট পরীক্ষায় মণিপুরের ৮ হাজার ৭৫১ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

টানা কারফিউয়ের ফলে খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

১৬টি জেলা নিয়ে গঠিত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।

সংঘর্ষের শুরু ৩ মে থেকে। মণিপুরে বাসিন্দাদের বেশির ভাগ মেইতেই সম্প্রদায়ের। প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতেই আদিবাসী। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও এই সম্প্রদায় দীর্ঘ দিন ধরেই নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

এই মেইতেই সম্প্রদায় দীর্ঘ দিন ধরেই `সিডুলড ট্রাইব’ বা আদিবাসী তালিকভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে তারা। তাদের এই দাবি নিয়েই চিন্তাভাবনা করার জন্য গত মাসে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে মণিপুর হাইকোর্ট।

ফলে উজ্জীবিত হয় মেইতেইরা। কিন্তু এই নির্দেশের পরেই অন্য জনগোষ্ঠীর মানুষ তীব্র প্রতিবাদে নামে এবং শুরু হয় সংঘর্ষ।

Advertisement

উল্লেখ্য, মণিপুরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৩৪টি উপজাতি রয়েছে। তারা মূলত কুকি এবং নাগা ট্রাইবস। কিন্তু সেখানে সবচেয়ে বড় সম্প্রদায় মেইতেই।

উল্লেখ্য, মণিপুর উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি ছোট্ট রাজ্য। এর রাজধানী ইম্ফল। উত্তরে নাগাল্যান্ড, দক্ষিণে মিজোরাম পশ্চিম আসাম ও পূর্ব দিকে মায়ানমার।

এই রাজ্যের মোট আয়তন ২২,৩২৭ বর্গ কিলোমিটার। মৈইতেইরা আবার পাঁচটি সামাজিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এই রাজ্যের প্রধা্ন মাতৃভাষা মণিপুরি।

সংযোগ রক্ষাকারী ভাষা লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। উল্লেখ্য, মণিপুরী ছাড়াও এখানে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বাস করে।

প্রাচীন মণিপুরে এক সময় রাজতন্ত্র বর্তমান ছিল। এটি কাংইপাক রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। পীতাম্বর চারাইরঙবা ছিলেন প্রথম রাজা।

১৮২৪ সালে ব্রিটিশ শাসনে উইলিয়ম আমহার্স্টের নেতৃত্বে মণিপুর ভারতের একটি দেশীয় রাজ্য হিসাবে চিহ্নিত হয়। ১৯৫৬ সালে এটি কেন্দ্রশাসিত একটি রাজ্য হয়। ১৯৭২ সালে পূর্ণ রাজত্বের মর্যাদা পায়।

২০১১ সালের আদমসুমারি অনুসারে জনসংখ্যা ২,৫৫,৭৯৪ জন।

কথিত আছে মহাভারত খ্যাত পঞ্চপাণ্ডবদের তৃতীয় ভ্রাতা অর্জুন মণিপুর রাজ্যে পরিভ্রমণে গিয়ে গন্ধর্ব রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করেন। অর্জুন পুত্র বভ্রুবাহন মণিপুরের সিংহাসনে অধিপতি হন।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞ করলে আমন্ত্রিত হন বভ্রুবাহন। মণিপুরে ফেরার সময় বভ্রুবাহন একটি বিষ্ণুমূর্তি নিয়ে ফেরেন। সেই কারণে সেই সময় মণিপুরের রাজধানী `বিষ্ণুপুর’ নামে পরিচিতি লাভ করেছিল।

মৈতেই মণিপুরিরা সনাতন বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত। হিন্দু ধর্মেরও প্রাধান্য রয়েছে। `পাঙান’ বা মণিপুরি মুসলিমও রয়েছে।বর্তমানে সেখানে মেইতেইদেরই প্রাধান্য।

বহু শতাব্দী ধরে রাজ্যটির একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অতীত রয়েছে। এটি রাস লীলার জন্মস্থান- শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটি বিখ্যাত রূপ যা মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র তৈরি করেছিলেন। মণিপুরের সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

ত্রিপুরায় গিয়ে রবীন্দ্রনাথ মণিপুরি `রাসা’ নৃত্য পরিদর্শন করেন এবং এতটাই মুগ্ধ হন যে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যের একটি বিশেষ নৃত্য বিভাগ চালু করেন।

সেখানে মণিপুরি নৃত্য শিক্ষক হিসেবে ত্রিপুরা থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনেন রাজকুমার বুদ্ধিমন্ত সিং এবং ত্রিপুরার ঠাকুর নবকুমার সিংকে। মণিপুরি নৃত্যকে সারা বিশ্বে বিস্তারে রবীন্দ্রনাথের অবদান অনস্বীকার্য।

মণিপুর আধুনিক পোলোর জন্মস্থান এবং স্থানীয়রা এই খেলাটিকে ‘সাগোল কাংজেই’ বলে ডাকে।

রাজ্যের দুটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চল মণিপুর নদী উপত্যকা এবং পার্বত্য উপত্যকা। প্রায় ৬৯০ বর্গ মাইল (১,৭৮৭ বর্গ কিমি) জুড়ে, উত্তর-দক্ষিণে চলে এবং ২৬০০ ফুট (৭৯০ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল লগটক হ্রদ, যা প্রায় ৪০ বর্গ মাইল (১০০ বর্গ কিমি) জুড়ে রয়েছে এবং এটি মণিপুর নদীর উৎস।

রাজ্যের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে রডোডেনড্রন, প্রাইমরোজ এবং নীল পপি। প্রাণীজগতের মধ্যে রয়েছে এশিয়াটিক হাতি, বাঘ, চিতাবাঘ এবং বন্য মহিষ।

ভারতীয় এক-শিংওয়ালা গন্ডার, যা মাঝে মাঝে মণিপুরে পাওয়া যেত, অবৈধ শিকারের কারণে রাজ্য থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ভ্রু-পিঁপড়া, হরিণ বিলুপ্তির পথে। পৃথিবীর বৃহত্তম বন্য বাইসন এখানে দেখা মিলত।

জনসংখ্যার প্রায় তিন-পঞ্চমাংশ শিক্ষিত; রাজ্যের ইম্ফলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩০ টিরও বেশি কলেজ রয়েছে। প্রধান জীবিকা কৃষি।

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
03.05.2024 - 06:10:12
Privacy-Data & cookie usage: