Site icon জীবিকা দিশারী

অপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই পা : মারাদোনা ও মানসী


দুদিন ধরে এক রমণীর একটি মাত্র পা আমাদের চোখ টানছে। কারণ তিনি এই মুহূর্তে বিশ্বের আলোড়িত এক নাম। এক পায়ের এই নারীর পা-ই আমাদের দুচোখে বিস্ময় ঢেলে দিয়েছে। আমরা তাকিয়ে থাকি, আর ভাবি কীভাবে সম্ভব হল এই পা নিয়ে বিশ্ব জয়! এই পা নিয়ে সারা পৃথিবীর সর্বশক্তিমান, সর্বসফল এক নারী হয়ে ওঠা সম্ভব?  হ্যাঁ, সেই অসম্ভবই সম্ভব করেছেন এই নারী। ভুবনজয়ী প্যারাব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় মানসী জোসী।

যখন এক নারীর এমন এক পা আমাদের মধ্য হাজার প্রত্যাশার বীজ বুনে চলেছে, তখনই এমন  আরেক শিল্পবোনা পায়ের অকালবিদায়ে বেদনায় আমরা ভারাক্রান্ত। দুজনেই বিশ্বের কিংবদন্তি। একজন পুরুষ একজন নারী। খেলার দুনিয়ার— একজন ব্যাডমিন্টনের, একজন ফুটবলের। ঘটনাচক্র হল, যেদিন মানসী জোসী বিশ্বের সেরা প্যারাব্যাডমিন্টনের তালিকায় সম্মান কুড়োচ্ছেন, ঠিক সেদিনই বিশ্বফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন।

মানসীর বাবা একজন বিজ্ঞানী, মানসী একজন তুখোড় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় পা বাদ দিয়ে কৃত্রিম পা নিয়ে ব্যাডমিন্টন কোর্টে একের পর এক মেডেল স্বর্ণপদক কুড়িয়েছেন। আজ বিশ্বের সফলতম এক নারীর শিরোপায় ভূষিত।

কাকতালীয় ভাবেই যেন মনে পড়ল মারাদোনার পায়ের কথা। “ঈশ্বরের হাত” ভুবনবিদিত, কিন্তু পা-ও তো সত্যিই ঐশ্বরিক। এই পা-ই তো তাঁর শিল্প, বিস্ময় প্রতিভাকে, মারাদোনাকে মারাদোনা করেছে। পায়ের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন দেশে-বিদেশে।

কৌশলদক্ষতা, ড্রিবল, ক্ষিপ্রতা, অসাধারণ বল কন্ট্রোল, বল আগলে একের পর এক দুর্বার বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া, দুরন্ত পাসিং দেখিয়ে আপামর ফুটবলপ্রেমীকে বিস্মিত করতে কী বাকি রেখেছেন? যাঁরা ফুটবলপ্রেমী নন তাঁরাও সেই ড্রিবলিংজাদুতে হতবাক। তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা নিরুপণ করা কঠিন। শুধু এটুকুই বলা যায়, সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীর কাছেই মারাদোনা রাজপুত্র।

ছোটবেলায় দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবার সহজ পথ ছিল ফুটবল। চাই পায়ের কারসাজি। সামান্য পাকে অবলম্বন করেই খেলার মাঠে আসা। সেই কিশোরই যে একদিন ভুবনজয়ী হয়ে যাবেন কে জানত। শুধু পায়ের শিল্প, খেলার ক্ষিপ্রতা আর দুরন্ত গতিই একদিন মারাদোনার ফুটবলকে শিল্পে পরিণত করল। একদিকে ব্রাজিলে ফুটবলসম্রাট পেলে আরেক দিকে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি মারাদোনো।

পেলেকে ফেলে দুরন্তগতিতে যেন নিজের জীবনের গোল পোস্টের দিকেই ছুটে গেলেন। তাঁকে রুখবে কে? ওই যে বললাম গতি।  তার সঙ্গে হিসেবহীন দামাল  জীবন।

প্রেম নেশা মাদক নানা অপবাদ তার জয়ের মুকুটের মতোই নিয়ে ফিরেছে। এসেছেন সংবাদের শিরোনামে– কখনও মাদক, কখনও প্রেম। নিষিদ্ধ প্রণয়েরও যেন সম্রাট হয়ে উঠতে চেয়েছেন মাঠের এই কিংবদন্তি।

মারাদোনা মানেই খেলা, মারাদোনা মানেই বৈদ্যুতিক। মারাদোনা মানেই নিয়ন্ত্রণহীন জীবনের ঝড়। সব ঝড়ই একদিন শান্ত হয়। ছোঁ মেরে দুরন্ত গতিকে পরাস্ত করে জীবনকে নিয়ে গেল মৃত্যু।

ভাস্কর ভট্টাচার্য।

 

maradona, manasi joshi

Exit mobile version