অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর যখন তিনিই প্রথম বললেন যে, সূর্যের আলোক শক্তিই মানবজীবনের জীবনধারাকে পরিবর্তিত করতে পারে।
সোলার এনার্জির কথা তখন সবে আলোচনায় উঠে আসছে বিজ্ঞানের দুনিয়ায়, তখন প্রথমে কেউ কেউ বিশ্বাস না করলেও পরে সমস্ত বিজ্ঞান দুনিয়া দু’হাত তুলে সাধুবাদ জানায় এই নারী বিজ্ঞানী মারিয়া টেল্কেস।
টেল্কেসকে সোলার থার্মাল স্টোরেজ সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বলে মনে করা হয়।
জন্ম ১২ ডিসেম্বর ১৯২০। হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট জন্মালেও জীব-পদার্থবিদ এই বিজ্ঞনী স্নাতকোত্তর পড়া শেষ করে উচ্চশিক্ষার্থে পাড়ি দেন আমেরিকার ।
পরবর্তী কালে তাঁর সূর্যালোকের এই শক্তির আবিষ্কারের জন্যই বিজ্ঞানী মহল তাঁকে `সান কুইন’ নামে অভিহিত করেছিল। ১৯০০ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে জন্ম।
বুদাপেস্টের Eötvös Loránd বিশ্ববিদ্যালয়ে ভৌত রসায়ন অধ্যয়ন করে স্নাতক হন ১৯০০ সালে এবং ১৯২৪ সালে তাঁপর বিষয় নিয়ে গবেষণা লব্ধ পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯২৫ সালে উচ্চশিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাডিড় দেন, সেখানেই ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ফাউন্ডেশনে বায়োফিজিসিস্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন।
সেখানেই স্থায়ী ঠিকানা করে নেন। ডঃ টেল্কেস ১৯৩৭ সালে একজন আমেরিকান নাগরিক হয়েছিলেন এবং মর্যাদাপূর্ণ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) এর সৌর শক্তি কমিটির সদস্য পদ গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নৌবাহিনীর জন্য একটি সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে লবণ-জল স্টিল তৈরি করার জন্য মার্কিন সরকার তাকে আমন্ত্রণ জানায়।
সেই কাজে তিনি সফল হয়ে টর্পেডোড নাবিক এবং ডাউনড এয়ারম্যানদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছিলেন।শুধু তাই নয়, কিন্তু টেল্কেস এমন একটি আবিষ্কার তৈরি করেছিলেন যা ছিল একটি সোলার ডিস্টিলার যা সমুদ্রের জলকে বাষ্পীভূত করে, এটিকে অন্যদের জন্য পানযোগ্য জলে পরিণত করে।
তাঁর লক্ষ্য এবং অগ্রাধিকার ছিল দরিদ্র এবং শুষ্ক অঞ্চলের গ্রামবাসীদের জন্য স্বল্প খরচে একটি উদ্ভাবন তৈরি করা।
১৯৪০ সালে বিশ্ষ্টি স্থপতি এলেনর রেমন্ডের সঙ্গে মিলিত উদ্যোগে `প্রথম সান হাউস বা `সৌরশক্তি ভবন’ তৈরি করেন।
সেই প্রকল্পের সাফল্য গোটা দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয় এবং `সৌরশক্তি’ শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁরই উদ্যোগে ফোর্ড ফাউন্ডেশন এর ব্যবস্থাপনায় একটি সোলার ওভেন ডিজাইন তৈরি করা হয়।
যা আজও জনপ্রিয়। এ ছাড়াও তিনি এনওয়াইইউ, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ডেলাওয়্যারের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সৌর শক্তি নিয়ে গবেষণায় নানা ভাবে যুক্ত ছিলেন।
ডঃ টেল্কেস ২০টিরও বেশি পেটেন্ট অর্জন করেছেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্যেরশক্তির কোম্পানির পরামর্শদাতা হিসেবে নিজের দক্ষতা রেখেছেন।
হাঙ্গেরিয়া-আমেরিকান এই বিজ্ঞানীই ১৯৫২ সালে ‘সোসাইটি অফ উইমেন ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হন।
এই বিজ্ঞানীর ১২২ তম জন্মবার্ষিকীকে স্মরণ করে গুগল ডুডুল শ্রদ্ধা জানাল ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখে।