জাপানের একটি অখ্যাত গ্রাম সইতামা প্রিপেকাচার। সেই গ্রামেই জন্মেছিলেন মিচিয়ো সুজিমুরা (Michiyo Tsujimura)। তিনিই জাপানের প্রথম কৃষিবিজ্ঞানী মহিলা।
শিক্ষাবিদ ও জৈবরসায়নবিদ মিচিও সুজিমুরার গ্রিন-টি বা সবুজ চায়ের পুষ্টির উপকারিতা সম্পর্কে যুগান্তকারী গবেষণা একদিন বিশ্বজুডে সাফল্য লাভ করে।
তাঁর গবেষণা গোটা বিশ্বে চা পানকারী এবং স্বাস্থ্যসচেতন মানুষকে এক নতুন স্বাস্থ্যসচেতনতার বার্তা দিল। শুধু চা পানই নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের নানা দিক থেকে কী করে চা দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
দেহে চর্বি কমাতে, আল্যাজাইমাইার রোগ প্রতিরোরোধ, রক্তে শর্করা স্থিতিশীল সহ অন্যান্য দিকেও দেহকে সবল রাখতে সাহায্য করে। সুজিমুরাই প্রথম গবেষণায় দেখিয়েছিলেন গ্রিন টিনের মধ্যে রয়েছে প্রভূত পরিমাণে ভিটামিন সি।
মিশিয়ো সুজিমুরা ১৮৮৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সালের এই দিনে জাপানের সাইতামা প্রিফেকচারের ওকেগাওয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়াশোনা করেছেন।
১৯১৩ সালে স্নাতক হন এবং কানাগাওয়া প্রিফেকচারের মহিলাদের কলেজে শিক্ষকতা করেন। জৈব রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ১৯২০ সালে।
কিন্তু সে সময়ে জাপানে হোক্কাইডা ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের জন্য কোনো জায়গা ছিল না। কৃষি রয়াসন বিভাগে বিনা বেতনে কাজ শিখতেন। খাদ্যপুষ্টি পরীক্ষাগারে। পরবর্তীতে সেই গবেষণারই সুফল পেলেন তিনি। ১৮২৪ সালে আবিষ্কার করলেন সবুজ চায়ের (গ্রিন টি)
মধ্যে ভিটামিন সি-র অবস্থান। সেই বিষয় নিয়ে তাঁর লিখিত গবেষণা `অন গ্রিন টি ভিটামিন সি’ প্রকাশিত হল ততকালীন বায়োসায়েন্স জার্নালে। সেই গবেষণাই তাঁকে রাতারাতি পরিচিতি দিল।
১৯৩২ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করলেন কৃষি জৈব গবেষণায়। তিনি জাপানি রেশম পোকার পুষ্টিগুণ নিয়েও গবেষণা শুরু করেছিলেন। জাপানে প্রথম এই ধরনের গবেষণায় এসেছিলেন কোনো নারী।
শিক্ষকতার পেশা শেষ করে অবসর নেন ১৯৫৬ সাল। সবুজ চা নিয়ে গবেষণা করে জাপানের কৃষি বিজ্ঞান পুরস্কার লাভ করেন সুজিমুরা।
১৯২৯ সালে, তিনি ক্যাটেচিনকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন – যা চায়ের একটি তিক্ত উপাদান। তারপরে, পরের বছর তিনি ট্যানিনকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন, এটি আরও তিক্ত যৌগ।
১৮৩২ সালে তিনিই জাপানের কৃষির প্রথম মহিলা ডাক্তার হিসাবে স্নাতক হন। তার গবেষণার বাইরে, ডাঃ সুজিমুরা শিক্ষাবিদ হিসেবেও ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৫০ সালে টোকিও উইমেন্স হায়ার নরমাল স্কুলে গার্হস্থ্য অর্থনীতি অনুষদের প্রথম ডিন হয়েছিলেন। তার জন্মস্থান ওকেগাওয়া সিটিতে।
তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার বা গবেষণা বিশ্বজুডে আজ স্বীকৃত। শুনলে অবাক হতে হয় বর্তমান বিশ্ব প্রায় ১৩০০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যবসা করে এই গ্রিন টি। চিন, ব্রাজিল, ভারত সহ সারা বিশ্বে রয়েছে এই গ্রিন টি-র চল।
দিন দিন এর প্রচলন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণ। তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। গ্রিন টি বেশি খেলে শারীরিক গোলযোগ দেখা দিতে পারে। যেমন ডায়ারিয়া।
সে সব ছাডিড়য়ে গ্রিন টি-র চাহিদা আজ বিশ্ব জুড়ে। আজ তঁর ১৩৩ তম জন্মদিনে শিক্ষাবিদ ও জৈবরসায়ন মিচিও সুজিমুরার গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে গুগল ডুডল এই এই নারীকে সম্মান জানাল (Michiyo Tsujimura)।