মালয়ালম সিনেমার প্রথম অভিনেত্রী

651
0
P.K.Rosy
Courtesy: MSN

নির্বাক যুগ থেকে বর্তমান ভারতীয় সিনেমা ইতিহাসের পরতে মোড়া। সেখানে কী করে অভিনয়ের জগতে মেয়েরা প্রথম এল সে এক বিস্তৃত কাহিনি। যেমন চমকপ্রদ তেমনই নাটকীয়।

প্রথম দিকে অভিনয়ের জগতে মেয়েরা অভিনয় করবে তা শুধু নিষিদ্ধই ছিল না, বলা হত খারাপ মেয়েরাই অভিনয়ের জগতে পা রাখে। অভিনেত্রীরা `খারাপ’ হিসেবেই চিহ্নিত হত।

সেই খারাপের দিনেই এই মেয়েটি এসেছিল সিনেমার জগতে। অপবাদ লাঞ্ছনা সহ্য করেই সিনেমায় আসা। তাঁর যে অভিনয়ের দিকে প্রবল টান। কে রুখবে তাকে? কোনো কিছুই তাকে আটকে রাখতে পারেনি।

চরম দারিদ্রেও স্বপ্ন দেখেছে অভিনয় করবে। কিন্তু শুরুটা তাঁর ভালো হয়নি। তখন ভারত যে আরও জাতপাতের অন্ধকারে নিমজ্জিত। এক দরিদ্র তফসিলি পরিবারে জন্ম হওয়া এই মেয়ে কী করে উচ্চবর্ণের অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করতে পারে?

এই প্রশ্নে সে দিন গোটা ভারতবর্ষ দেখেছিল এক নির্মম অপমানের কাহিনি। সিনোমর দর্শকরা ছবির পর্দায় ইট ছুড়ে মেরেছিল এই নিম্নবর্গের অভিনেত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে। এমনকি প্রাণে বাঁচতে তাঁকে তিরুবনন্তপুরম ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।

এই অভিনেত্রীর নাম পি কে রোজি। মালয়ালাম সিনেমার একজন প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী। ১৯০৩ সালে ত্রিবান্দ্রমের (তিরুবন্তপুরম) নন্দনকোডের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম। শৈশবেই পিতৃহীন। শৈশব ঘিরে শুধুই দারিদ্র।

মাঠের ঘাস কেটে কোনোরকমে দিনাতিপাত। তারই মধ্যে তার ভীষণ ইচ্ছে অভিনয় করবে।  অভিনয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল রাজম্মা। কিন্তু এই রাজম্মা থেকে এক সময় নাম পালটে রোসাম্মাতে পরিণত হয়েছিলেন। সে আর এক কাহিনি।

ছোটবেলায় মাঠে ঘাস কাটাকক কাজ করতে করতে স্বপ্ন দেখা মেয়েটিই একদিন তার কাকার হাত ধরে সংগীত ও অভিনয়ের ক্লাসে ভর্তি হলেন। স্থানীয় স্কুল অফ পারফর্মিং আর্টসে ভর্তি হয়ে যেন এক অন্য জগত পেলেন। এক সময় সেই শিক্ষার ফলেই স্থানীয় `কাক্কিরসিতে’ দক্ষ হয়ে ওঠেন। অভিনয়ের পাঠ নিয়ে।

এই শিল্পসাধনার সময়েই পরিচয় হয় জোসেফ চেল্লাইয়া ড্যানিয়েল নাদারের সঙ্গে। যিনি একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মালয়ালম চলচ্চিত্রের জনক। যিনি কেরালার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতাও। সেই ড্যানিয়েলের সংস্পর্শে এসেই `ভিগাখুকুমারন’(দ্য লস্ট চাইল্ড) ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেলেন।

সেটা ১৯৩০ সাল। আগেই বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার প্রথম নায়িকা এবং ভারতীয় সিনেমার প্রথম দলিত অভিনেত্রী। উল্লেখ করা হয়েছে দলিত হওয়ার কারণে এই অভিনেত্রীর প্রদর্শিত ছবিতে কি ভাবে ইট ছুড়ে প্রতিবাদ করা হয়েছিল। যখন `ভিগাখুকুমারন’কে মুক্তি দেওয়া হয়, তখন সেখানে কোনো উচ্চবর্ণের মানুষই এই ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি।

অভিনেত্রী পিকে রোজির জীবন কাহিনি নিয়ে পরবর্তী কালে ১৯৬০ এর দশকে চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছিল। তাঁর সম্মানেই তৈরি হয়েছে পিকে রোজি ফিল্ম সোসাইটি।

মালয়ালম সিনেমার প্রথম অভিনেত্রী এই পি কে রোজিকে সম্মান জানিয়ে তাঁর ১২০ তম জন্মবার্ষিকীতে ১০ ফেব্রয়ারি, শুক্রবার গুগল ডুডল উৎসর্গ করেছে।